Naya Diganta

পি কে হালদারকে ফেরাতে ভারত যাবে আন্তঃমন্ত্রণালয় টিম

হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে পালিয়ে যাওয়া ভারতে গ্রেফতার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি টিমকে ভারতে পাঠানো হতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
তিনি বলেন, পি কে হালদারকে ফেরাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করি। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার জরুরি বৈঠক ডাকে। যেখানে আইন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ সবাই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করি।
সাঈদ মাহবুব খান বলেন, পি কে হালদারকে ফেরানোর বহিঃসমর্পণ যে আইন বিদ্যমান রয়েছে, তার সমস্ত আইন বিধির দ্বারা কিভাবে তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে পারি সেই বিষয়ে আলোচনা হয়। তাকে ফেরত আনতে যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন সেগুলো একত্র করার সিদ্ধান্ত হয়। আমরা খুব দ্রুত সেসব প্রস্তুতি সম্পন্ন করব। প্রশান্ত কুমার হালদারকে ভারত থেকে ফেরাতে প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করে টিম পাঠানো হতে পারে। তিনি বলেন, কূটনীতিক চ্যানেলসহ অন্য যেসব চ্যানেল ব্যবহার করে তাকে ফেরত আনা যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভারতে পি কে হালদারের সম্পদের খোঁজ করতে দুদক বিএফআইইউকে যে চিঠি দিয়েছে সে বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, আমরা যে মামলা করেছি সেখানে ভারতে পি কে হালদারের অল্প পরিমাণ সম্পদের তথ্য আমাদের কাছে ছিল। বাকি তথ্যগুলো যদি আমরা পাই তার বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেয়ার ব্যবস্থা নেবো। বিএফআইইউ সেই তথ্যগুলো আমাদের সংগ্রহ করে দেবে।
ইন্টারপোলের তৎপরতার বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, ইন্টারপোলকে আমরা চিঠি দিয়েছি। ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের প্রধান শাখা থেকে ভারতীয় ইন্টারপোলে যারা আছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। তারা যেন সেই যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। আর পি কে হালদারের বিষয়ে আমরা যে রেড অ্যালার্ট জারি করেছি সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।
দুদক সূত্রে জানা যায়, পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রথম ইন্টারপোলে চিঠি পাঠায় দুদক। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১০ জানুয়ারি ইন্টারপোল পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছিল। এরপর গত ১৪ মে পি কে হালদারকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে গ্রেফতারের পরদিন ১৫ মে ইন্টারপোলের ঢাকা ডেস্ক থেকে নয়াদিল্লি ডেস্কে আরো একটি চিঠি পাঠানো হয়।
পি কে হালদারের বিষয় দুদকের কমিটি : পি কে হালদারকে ভারত থেকে দেশে আনতে বুধবার একটি কমিটি গঠন করেছে দুদক। ওই কমিটিতে রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও গুলশান আনোয়ার। কমিটি ভারতে গ্রেফতার পি কে হালদারকে দ্রুত দেশে ফেরানোর আইনগত বাধা দূরীকরণে কাজ করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আপাতত দুই সদস্যের কমিটি করা হলেও প্রয়োজনে সদস্য পাঁচজন পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।
আরো একটি মামলা দায়ের : প্রায় ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এবারের মামলায় কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলোÑ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার, দিয়া শিপিং লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিব প্রসাদ ব্যানার্জি, পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জি, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান এম এ হাফিজ, সাবেক চেয়ারম্যান মো: সিদ্দিকুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক অরুণ কুমার কুন্ডু, অঞ্জন কুমার রায়, মো: মোস্তাইন বিল্লাহ, উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সত্য গোপাল পোদ্দার ও এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাসেল শাহরিয়ার।
মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে অবৈধ উপায় ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে ঋণ হিসেবে ৪৪ কোটি টাকা গ্রহণ করে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আলোচিত পি কে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ৪০টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার চার্জশিট ২০২১ সালের নভেম্বরে দাখিল করা হয়। যেখানে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ছয় হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
মামলার তদন্তকালে এখন পর্যন্ত ১২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের সহযোগী শঙ্খ বেপারী, রাশেদুল হক, অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এ ছাড়া এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ অবরুদ্ধ ও জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালতের মাধ্যমে ৬৪ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
গত ১৪ মে শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরের একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)। ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেফতার করে। তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে ভারতীয় রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান এবং আধার কার্ডও সংগ্রহ করেছিলেন। পি কে হালদারের অন্য সহযোগীরাও ভারতীয় এসব কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে সংগ্রহ করেন।