Naya Diganta

দুই বছর পর পুরনো রঙ ফিরেছে কানে

দুই বছর পর পুরনো রঙ ফিরেছে কানে

চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব কানে দুই বছর পর পুরনো রঙ ফিরেছে। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা জড়ো হয়েছেন এখানে। এবার হচ্ছে উৎসবের ৭৫তম আসর। মহামারীর কারণে ২০২০ সালে বাতিল এবং ২০২১ সাল বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে হওয়ার পর ভূমধ্যসাগরের তীরে কান চলচ্চিত্র উৎসব স্বাভাবিক সময়ে অর্থাৎ মে মাসে ফিরেছে। আরেকটি স্বস্তির ব্যাপার হলো, এবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক নয়। এছাড়া লাগছে না টিকা সনদ কিংবা করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট।
করোনা মহামারী কাটিয়ে নামীদামি তারকা এবং চাকচিক্যের সমারোহ দেখাতে প্রস্তুত সাগরপাড়ের শহর। পালে দে ফেস্টিভাল ভবনে তামাম দুনিয়ার তারকাদের মিলনমেলায় পরিণত হবে এই আয়োজন। ৩৫ হাজারের বেশি চলচ্চিত্রপ্রেমী ও ফিল্ম প্রফেশনালরা সমুদ্র তীরবর্তী শহরে সমবেত হচ্ছেন। ২০১৯ সালের পর আবারও সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে কানসৈকতে।
চলচ্চিত্র নিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এই আয়োজনকে ঘিরেই ফরাসি উপকূলে সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হয়ে থাকে। কান শুধু প্রতিযোগিতা নয়, উদীয়মান ও প্রতিভাবানদের জন্য এটি অফুরান সুযোগের মঞ্চ। চলচ্চিত্রের বৃহৎ বাজার মার্শে দ্যু ফিল্মের মাধ্যমে ঘটে সেই সুযোগ।
ইউক্রেনে যুদ্ধ অনিবার্যভাবে উৎসবে আলোচিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের অসাধারণ পরিচালকদের কিছু নতুন কাজের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে কানে। আয়োজকরা এবার ইউক্রেনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। মূল প্রতিযোগিতা শাখায় রয়েছে রাশিয়া থেকে নির্বাসিত কিরিল সেরেব্রেনিকভ পরিচালিত ‘‘চাইকোভস্কি’স ওয়াইফ”। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আইনিভাবে ইউরোপে চলে এসেছেন তিনি। পুতিন সরকারের বিপক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রাখা রুশ শিল্পীদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। রাজনৈতিকভাবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে তার আগের দুটি ছবি কানে নির্বাচিত হলেও তিনি সশরীরে আসতে পারেননি।
আঁ সাঁর্তে রিগায় নির্বাচিত হয়েছে ইউক্রেনের মাকজিম নাকোনেশনিয়ের ‘বাটারফ্লাই ভিশন’। এটি তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। ফলে ক্যামেরা দ্য’র পুরস্কারের দৌড়ে থাকছেন তিনি। কান উৎসবের জেনারেল ডেলিগেট থিয়েরি ফ্রেমোঁ মনে করেন, ছবিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর প্রেক্ষাপট ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল। স্পেশাল স্ক্রিনিংস শাখায় জায়গা পেয়েছে ইউক্রেনের সার্গেই লোজনিৎজা পরিচালিত ‘দ্য ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব ডেসট্রাকশন’।
এদিকে ইউক্রেনের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে রাশিয়ার ফিল্ম প্রফেশনালদের উপস্থিতি সীমিত রাখা হয়েছে। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযানের কারণে আয়োজকরা সাফ জানিয়ে দেয়, রাশিয়ার সরকারি প্রতিনিধি বা সরকার-সংশ্লিষ্ট কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে চীনের মতো কিছু দেশের উপস্থিতি স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকবে।
৭৫তম আসরে মূল প্রতিযোগিতা শাখায় রয়েছে ২১টি সিনেমা। এতে বিচারকদের প্রধান হিসেবে আছেন ভাসোঁ লাদোঁ। ৬২ বছর বয়সী এই ফরাসি অভিনেতা গত বছর কানে স্বর্ণপাম জয়ী ‘তিতান’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। ২০১৫ সালে কানে ‘দ্য মেজার অব অ্যা ম্যান’ ছবির সুবাদে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতেন তিনি।
বিচারকদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও চারজন নারী। তারাই এবারের স্বর্ণপামজয়ী ছবিসহ বিভিন্ন পুরস্কার জয়ীদের নির্বাচন করবেন। ভাসোঁ লাদোঁর নেতৃত্বে দীপিকা ছাড়াও বিচারক প্যানেলে আছেন যুক্তরাজ্যের অভিনেত্রী ও পরিচালক রেবেকা হল, সুইডেনের অভিনেত্রী নুমি রাপাস, ইতালির অভিনেত্রী ও পরিচালক জাজমিন ত্রিঙ্কা, ইরানের আসগর ফারহাদি, নরওয়ের ইওয়াকিম ত্রিয়ের, যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালক জেফ নিকোলস এবং ফ্রান্সের পরিচালক লাজ লি।