Naya Diganta

তামিমের সেঞ্চুরি অনেক প্রত্যাশার অবগাহন

শতরান করার পর দর্শকদের উদ্দেশে তামিম ইকবাল : নয়া দিগন্ত

সাড়ে সাত বছর পর চট্টগ্রামের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল। ২০১৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের এই ভেন্যুতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এরপর চট্টগ্রামে ৫ টেস্টে ৯ ইনিংস খেললেও, সেঞ্চুরি পাননি। আর সাড়ে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর ঘরের মাঠে সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম। ২০১৬ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ ঘরের মাঠে মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন তামিম।
এরপর দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ৪২টি ইনিংস খেললেও, তামিম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৮ বলে ১২৬ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন তামিম। ২০১৪ সালের পর চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি পেলেন তামিম। তার এই সেঞ্চুরি দলের টনিক হিসেবে কাজ করছে। পরের ব্যাটারদের জুগিয়েছে আত্মবিশ্বাস, বহু দূর যাওয়ার এবং শাসন করার প্রেরণা।
প্রতিপক্ষ যখন শ্রীলঙ্কা, তখন আক্ষেপটা একটু বেশি হওয়ারই কথা। চট্টগ্রাম টেস্টের আগে লঙ্কানদের বিপক্ষে ১২ টেস্টের ২৩ ইনিংসে তামিমের অর্ধশতক সাতটি, যার চারটিই এসেছে সর্বশেষ পাঁচ ইনিংসে। এত ফিফটির ছড়াছড়ির মাঝে শুধু শতকই ছিল না। গতকাল নিজের ঘরের মাঠে সেই কাক্সিক্ষত তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন তামিম।
এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তামিমের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৯২। ২০২১ সালের এপ্রিলে লঙ্কা সফরে পাল্লেকেলে টেস্টে ১৫০ বলে ৯২ রানের ইনিংস ছিল তার। ৬৬ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। ৬ টেস্টে ৩টি সেঞ্চুরি ও ৫টি হাফ-সেঞ্চুরি আছে তার। তবে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখনো কোনো সেঞ্চুরি করতে পারেননি তামিম।
টেস্ট ক্রিকেটে নিজের দশম শতরানটি পেলেন তামিম ইকবাল। চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টের দ্বিতীয় দিন মধ্যাহ্ন বিরতির আগে তামিম ৮৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। বিরতি থেকে ফিরে তার তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে বেশি সময় লাগেনি। এর মধ্যে অবশ্য প্রথম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। বিরতির পর ফিরেছেন আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয়। দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় ওভারেই আসিতা ফার্নান্দোর বলে তিনি উইকেটকিপার নিরোশান ডিকভেলার ক্যাচ হন। আউট হওয়ার আগে ১৪২ বলে ৫৮ রান করেছেন মাহমুদুল। তার ইনিংসে ছিল ৯টি বাউন্ডারি। তার আগে ৫১ রানে থাকাবস্থায় বাউন্ডারিতে ফার্নান্দোর বলে সহজ ক্যাচ মিস করেন এম্বুলদেনিয়া।
তামিম নিজের শতক পূর্ণ করেছেন ১৬২ বলে। বাংলাদেশের ইনিংসের ৫২তম ওভারে আসিতার ফার্নান্দোর বলেই স্কয়ার লেগের দিকে ঠেলে দিয়েই মাইলফলকে পৌঁছেন তামিম। এর আগে প্রথম সেশনেই মুশফিকুর রহীমকে পেছনে ফেলে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সবশেষ টেস্টে শতক পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল।
রমেশ মেন্ডিসের বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তামিম ইকবালের কাট শটে বলটি পাঠিয়ে দেন পয়েন্ট বাউন্ডারিতে। তামিমের নামের পাশে ৪৮ সংখ্যাটা ৫২তে পরিণত হয় সেই চারে। তামিমের ডেঞ্জার জোন পরিসংখ্যানও তাই বলে। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩২টি ফিফটির বিপরীতে তামিমের সেঞ্চুরি ছিল ৯টি। ৫০ থেকে ৭৫-এর মধ্যেই আউট হয়েছেন মোট ২১ বার। অর্ধশতককে শতকে রূপ দেয়াই তামিমের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অবশ্য এ নিয়ে তামিমের নিজেরও আক্ষেপের শেষ নেই।
টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার দশম শতক, বাংলাদেশের হয়ে তামিমের চেয়ে বেশি শতক আছে শুধু টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের (১১)। নিজের ঘরের মাঠ চট্টগ্রামে এটি তামিমের দ্বিতীয় শতক। সর্বশেষটি এসেছিল ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এই মাঠে তামিম গতকাল এক হাজারের রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন। তামিমের আগে এই ভেন্যুতে এক হাজার রান করেছেন মুশফিকুর রহীম ও মুমিনুল হক। এই ভেন্যুতে ইতোমধ্যে মুশফিক ১৯টি ও মুমিনুল ১২টি টেস্ট খেলেছেন।
নিজের ইনিংসের ৮৫ রানের সময় তামিম গতকাল মুশফিকুর রহীমকে ছাড়িয়ে হয়ে গেছেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রাহক। তামিমের সামনে আছে আরো একটি মাইলফলকের হাতছানি। সেঞ্চুরিটি ১৫২ রানে নিয়ে গেলে তামিম প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ হাজার রানের মালিক হবেন। তবে বাধা হয়ে দাঁড়াল পানিশূন্যতায় হাতের পেশিতে টান লাগা। ১৩৩ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে সাজঘরে গেলেন। অপেক্ষা ছিল মাত্র ১৯ রানের। হয়তো সুস্থ বোধ করলে আজ পৌঁছে যেতে পারেন গর্ব করার মতো ৫ হাজারের ক্লাবে।