Naya Diganta

অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে যেভাবে সব হারালো যুবকটি

অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে যেভাবে সব হারালো যুবকটি।

-ভাই, কই যাবেন?
-ঢাকা।
-আমিও ঢাকা যাবো।
-আচ্ছা।
-ভাই, আমার বাড়ি কুশাডাঙ্গা (ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার একটি গ্রাম)। আরএফএল কোম্পানিতে জব করি।
আবুল বাশার নামে এক যুবকের সাথে পাশাপাশি বাসের সিটে বসে এভাবেই কথা হচ্ছিলো অপরিচিত আরেক যুবকের।
ছেলেটি যথেষ্ট সুদর্শন। এতো সুন্দর ছেলের কথা বিশ্বাস না করার কোনো মানেই হয় না। এরকম আরো বেশ কথাবার্তা হচ্ছিল আবুল বাসার ও ওই যুবকের মধ্যে।

বাসে ওঠার আগেই ফরিদপুর নতুন স্ট্যান্ড থেকে কেনা বাদাম খাচ্ছিল অপরিচিত যুবকটি। একাধিকবার অনুরোধ সত্ত্বেও তার থেকে একটি বাদামও খেল না আবুল বাসার। সে জানে, অপরিচিত কারো কোনো কিছু খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ, সেও দেখতে যেমন সুদর্শন, বুদ্ধিও ভালো। মাস্টার্স পাস আবুল বাসার। সুতরাং তাকে কোনো কিছু বোঝানোর দরকার নেই কারো।

বাস ইতোমধ্যে ফরিদপুর ছেড়ে রাজবাড়ী জেলায় প্রবেশ করেছে কিংবা খুব শিগগিরই করবে। এমন সময় পকেট থেকে পাঁচ টাকা দামের এক প্যাকেট বিস্কুট বের করল অজ্ঞাত যুবকটি। আবুল বাসারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ভাই, বাদাম খেলেন না, অন্তত একটা বিস্কুট তো খান। এবারও বরাবরারে মতো ‘না’ করল আবুল বাসার। তবে বারবার জোরাজুরিতে পরাস্ত হলো সে। ফলে একটি বিস্কুট নিয়ে খেল আবুল বাসার।

খাওয়ার সময়-ই বিস্কুটটিতে ভিন্ন ধরনের স্বাদ অনুভব করে আবুল বাসার, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক মনে করল। বাস এগিয়ে চলছে দৌলতদিয়া ঘাটের দিকে। বিস্কুট খাওয়ার পরই হালকা ঝিমুনি চলে আসে তার। এরই মধ্যে অপরিচিত ওই যুবকটি তার পকেটের মোবাইলের ওপর হাত দিকে থাকে। আবুল বাসার হালকা ঘুমের মধ্যে বিষয়টি অনুভব করলেও সে অপেক্ষা করছে, দেখি বিষয়টি কী হয়। এরকম কয়েকবার হলো, তবে মোবাইল পকেট থেকে নিতে পারেনি ওই যুবক। ঘাটে ভিড়ল বাস।

লঞ্চে উঠে মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছে আবুল বাসার। বাসের সেই ছেলেটিও পাশের বেঞ্চিতে বসল খেতে। এ সময় আবুল বাসার আস্তে আস্তে নিজেকে হারাতে থাকে। লঞ্ঝও তীরে এসে ভেড়ে। ঘাটে নামল আবুল বাসার ও সেই যুবক-এতটুকুই জানে সে। পরে কী হলো আর কিছুই জানে না আবুল বাসার। এসব ঘটনা মাগরিবের নামাজের আগের।

রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। হঠাৎ আবুল বাসারের মেজো ভাইয়ের কাছে অজ্ঞাত একটি নাম্বার থেকে ফোন এলো- ‘আপনার ছোট ভাই কী যেন খেয়ে গাবতলী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, দ্রুত নিয়ে যান।’

মেজো ভাই ঢাকায় থাকা তার ছোট ভাই বেলায়েতকে ফোনে ব্যাপারটি জানালো। সে দ্রুত গাবতলী গিয়ে আবুল বাসারকে অজ্ঞান অবস্থায় পেল। দেখা গেলা- তার কাছে থাকা টাকা ও দুইটি মোবাইল ফোনের কোনটিই নেই। শুধু পাশে পড়ে আছে জামা-কাপড়ের ব্যাগটি। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে বেলায়েত তার ভাইকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও পরে স্যার সলিমুল্লাহ হাসপাতালে ভর্তি করালো। ভর্তি করার প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর হাসপাতালের বেডে শুয়ে আবুল বাসার বলল, ‘আমি এখানে কেন?’ ব্যস এতটুকুই, আবার ঘুমিয়ে গেল সে।

পরে ধারাবাহিক স্যালাইন ও চিকিৎসা দেয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর আবুল বাসারের মোটামুটি জ্ঞান ফিরল। তারপর তার সাথে ঘটে যাওয়া উপরোক্ত ঘটনা বর্ণনা করল ছোট ভাই বেলায়েতের কাছে। ভর্তির দুই দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে, পরে একদিন এক আত্মীয়র বাসায় বিশ্রাম নিয়ে বাড়িতে যায় আবুল বাসার। এখনো সে অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় বাড়িতে অবস্থান করছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, দুর্বলতা কাটাতে অন্তত সপ্তাহখানিক লাগবে।

-গত শনিবার (১৪ মে) লেখকের ভাইয়ের সাথে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখাটি তৈরি। এর মাধ্যমে সবার শিক্ষা নেয়া উচিৎ যে, কোনোভাবেই চলতি পথে কারো দেয়া কিছু খাওয়া যাবে না। আর কারো ব্যাপারে যেকোনো ধরনের সন্দেহ তৈরি হলে, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।)