Naya Diganta

মাল্টিপ্লেক্সে আশা দেখছেন হল মালিকরা

সিনেমা হল নিয়ে এখন আর আগের মতো আলোচনা নেই। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে প্রেক্ষাগৃহের সামনে এখন আর শত শত মানুষের ভিড় হয় না। এ রকম বাস্তবতায় সিনেমা হল মালিকরা বিকল্প পথে সামনে এগোবার পরিকল্পনা করেছেন। অনেকেই এখন মাল্টিপ্লেক্সে বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছেন। এতে একই হলে অনেক ছবি প্রদর্শন করা যায়। ফুডকোর্ট ও শপিংমল থেকেও বাড়তি আয় হয়।
সময়ের সাথে সাথে যেমন সিনেমা বদলেছে, তেমন বদলাচ্ছে সিনেমা প্রদর্শন ব্যবস্থা। ৩৫ মিলিমিটারের ফিল্মের দিন শেষ হয়েছে; এখন সিনেমা নির্মিত হয় ডিজিটাল ফরম্যাটে। স্বাভাবিকভাবেই এখন আর কোনো কাজেই লাগছে না ৩৫ মিলিমিটার ফিল্মের প্রজেক্টর। ডিজিটাল প্রজেক্টরেই সিনেমা দেখানো হচ্ছে সবখানে। একই সাথে সাউন্ড মেশিনেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে সিঙ্গেল স্ক্রিন বা একপর্দার প্রেক্ষাগৃহের কদর কমেছে। একপর্দার সিনেমা হলের চেয়ে বহু পর্দাবিশিষ্ট মাল্টিপ্লেক্সের দিকে ঝুঁকছেন প্রদর্শকরা। তারা বলছেন, এতে মুনাফা বেশি।
বৃহস্পতিবার সিনেমা হল সংস্কার ও নতুন হল নির্মাণে ঋণ সুবিধাপ্রাপ্তি নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী জানান, স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে ৫০টি মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে। রাজধানীতে ইতোমধ্যে তাদের পাঁচটি শাখা চালু হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘মুনাফা না হলে তো স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এতগুলো শাখা খোলার পরিকল্পনা করত না।’ সিঙ্গেল স্ক্রিনের মতো বড় স্থাপনায় একজন হল মালিককে শুধু সিনেমা প্রদর্শনের আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু মাল্টিপ্লেক্স সংস্কৃতিতে আয় হয় নানামুখী। পাঁচতলা একটি ভবনে নানা রকম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকে, সেখান থেকে আয় হয় মালিকের। পাশাপাশি সিনেমা হল থাকলে সেটিও একটি আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে সিনেপ্লেক্স করার পর মুনাফা বেড়েছে বগুড়া মধুবন সিনেমা হল মালিকের। এটির মালিক আর এস ইউনুস বলেন, ‘আমি এখন শুধু সিনেমা হলের আয়ের ওপর নির্ভর করি না। আমার বাণিজ্যিক ভবনে অনেক দোকান আছে, সেখান থেকে ভাড়া পাই। সেখানে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রচারণার জন্য আসে, সেখান থেকে একটা আয় আছে। সিনেমা হলের পাশাপাশি ফুডকোর্ট আছে, সেখান থেকেও ইনকাম হয়। আর সিনেমা হল তো আছেই।’ সিঙ্গেল স্ক্রিনে বড় ভবন প্রয়োজন হয়, অথচ সিনেমা দেখা ছাড়া তাতে আর কোনো কর্মকাণ্ড থাকে না। তাই এখন মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ করতে বিনিয়োগকারী বা হল মালিকদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। সিঙ্গেল স্ক্রিনে সাধারণত আসন সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। বলাকা, মধুমিতার মতো বড় সিনেমা হলগুলোয় ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ আসন পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। প্রেক্ষাগৃহে দর্শকসংখ্যা কমেছে। তাই বেশির ভাগ আসন ফাঁকা পড়ে থাকে। সিরাজগঞ্জের রুটস সিনেক্লাবের চেয়ারম্যান সামিনা ইসলাম নীলা বলেন, ‘আমার প্রেক্ষাগৃহে ২২টি সিট। এখানে ১০-১২ জন দর্শক হলেই আমার হয়ে যায়। কিন্তু যাদের ৭০০ বা ৮০০ সিটের প্রেক্ষাগৃহ, তাদের ১০০ দর্শক হলেও কাজ হয় না। এখন অল্প সিটের প্রেক্ষাগৃহই বেশি কার্যকর।’ সিনেপ্লেক্সের আকার ও আয়তন একটু ছোট হওয়ায় একটি সিঙ্গেল স্ক্রিনের জায়গায় সর্বোচ্চ তিনটি স্ক্রিন নির্মাণ করা যায়। একেকটি স্ক্রিনে একেক ধরনের সিনেমা প্রদর্শন করা সম্ভব। এতে করে দর্শকও ভিন্ন ভিন্ন সিনেমা দেখার সুযোগ পান এবং বিভিন্ন ধরনের দর্শক বিভিন্ন রকম সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে আসতে আগ্রহী হন। এতে দর্শক সমাগম বাড়ে। রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে ব্লকবাস্টার সিনেমাসের জাহিদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘যে যেখানেই সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করুক না কেন, আমার পরামর্শ থাকবে, একসাথে তিনটি স্ক্রিন করার জন্য। এতে করে একসাথে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সিনেমা প্রদর্শন করা সম্ভব এবং দর্শক সমাগমও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আসন সংখ্যা ১০০ থেকে ২৫০ বা ৩০০-এর মধ্যে রাখতে হবে। একটি প্রেক্ষাগৃহে সর্বোচ্চ ৩০০ থাকল, আরেকটিতে রাখতে হবে সর্বনিম্ন ১০০। এতে করে যখন কোনো সিনেমায় দর্শকচাপ বেশি থাকবে, তখন ৩০০ সিটের প্রেক্ষাগৃহে দেখানো যাবে। আবার যখন দর্শকের চাপ কমে আসবে, তখন ১০০ সিটের প্রেক্ষাগৃহে সেটি দেখানো যাবে।’ সিনেমা হলে ভালো পরিবেশ চান দর্শকরা। ফ্যানের বদলে এখন সবাই এসি রুমে বসে সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। প্রযুক্তির কারণে সিনেমায় রঙ বিন্যাস ও শব্দের ব্যবহারে এসেছে আমূল পরিবর্তন। আগেকার সিঙ্গেল স্ক্রিনের প্রেক্ষাগৃহের অধিকাংশতেই নেই এসি, ভালো প্রজেক্টর ও পর্দা এবং সময়োপযোগী সাউন্ড সিস্টেম। দর্শককে সময়োপযোগী সিনেমার আসল আনন্দ দিতে চান হল মালিকরাও। তাই তারা সিনেমা প্রদর্শনের পুরনো সিঙ্গেল স্ক্রিনের ধারণা থেকে বের হয়ে এসে নির্মাণ করতে চাইছেন মাল্টিপ্লেক্স।
এর সাথে আরো একটি বড় কারণ যুক্ত হয়েছে সম্প্রতি। সেটি হলো বিদেশী সিনেমা প্রদর্শনের সুযোগ। পরিচালক, প্রযোজক ও হল মালিক গোলাম কীবরিয়া লিপু বলেন, ‘দেশের যেকোনো সিনেমা হল ২৫ শতাংশ ইংরেজি সিনেমা প্রদর্শন করার অধিকার রাখে। কিন্তু সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোয় বিদেশী সিনেমা যে ফরম্যাটে প্রদর্শন করতে হয়, সেই ফরম্যাটের প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম নেই।