Naya Diganta
কুসিক নির্বাচন

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা মনিরুল হক সাক্কুর

কুসিক নির্বাচন

কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ২৭টি ওয়ার্ডের লোকজন, দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থকরা চায় আমি নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকি। তাই অবশ্যই নির্বাচন করব। আগামী ১৭ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে তিনি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন বলে রোববার নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে কুসিকে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সদর আসনের এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিনের অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। ২০১৭ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আরফানুল হক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রবীণ নেতা বলেন, নির্বাচনী মাঠে সাক্কুর মতো একজন হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করে নৌকাকে তীরে ভেড়াতে রিফাতকে অনেক ঘাম ঝরাতে হবে। নৌকার প্রার্থী রিফাত বলেন, যারা নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সবাইকে নিয়ে কাজ করব। তারা যেন নৌকার প্রচারে অংশ নেয় সেই আহ্বানও জানাব। তিনি বলেন, কোন্দল ও মান-অভিমান ভুলে আশা করি সবাই নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করবে। নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সংরক্ষিত আসনের এমপি ও মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার বিষয়ে সীমা বলেন, নেত্রী এ মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না, যাবও না।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কুসিকের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করে নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ আফজল খানকে হারিয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন মনিরুল হক সাক্কু। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ বিএনপির মনোনয়নে সাক্কু নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কুসিকের মেয়র হন। কিন্তু এবার কুসিকের তৃতীয় নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন এমপি বাহারের অনুসারী আরফানুল হক রিফাত।
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমি দুইবারের নির্বাচিত মেয়র। ২৭টি ওয়ার্ডে আমার অনেক নেতাকর্মী, সমর্থক রয়েছে। এ ছাড়া অনেক মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তারা চায় আমি নির্বাচন করি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ কেন এমন প্রশ্নে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সিটি নির্বাচন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন। এটা তো জাতীয় নির্বাচন নয়, এখানে স্বতন্ত্র প্রতীকে আমি নির্বাচন করতেই পারি। এর আগেও আমাকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্যের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন যদি জেলা বিএনপি থেকেও বহিষ্কার করে তাহলে কী করব, আমার তো কিছুই করার নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন তো সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কঠোর বার্তা দিচ্ছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে আমিই বিজয়ী হবো।
সাক্কু ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের আত্মীয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে কায়সার জানান, তার অনুসারী নেতাকর্মীদের অনুরোধে তিনি প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। ১৭ মে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, এ সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনেই যাচ্ছি না। কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে অংশ নিলে বিষয়টি দলের হাইকমান্ড থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে।
কুমিল্লা নগরীতে বিজিবি মোতায়েন
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে গতকাল থেকে নগরীতে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের এক মাস আগে থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হলো। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই বিজিবি প্লাটুনের দায়িত্বে থাকবেন। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে তারা কাজ করবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানান, তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আচরণবিধি দেখার জন্য ইতোমধ্যে মাঠে আছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা আরো জানান, এখনি প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা শুরু করার কথা নয়। কিন্তু যারা প্রচারণার প্রয়াস চালাচ্ছেন আমরা তাদের শোকজ করছি এবং মৌখিকভাবে সতর্ক করছি।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ১৭ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ জুন।
২৭টি ওয়ার্ডের ১০৩টি কেন্দে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সিটিতে মোট ভোটার দুই লাখ ৩২ হাজার ৬৩০ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ১৪ হাজার ৪৮৮ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ১৮ হাজার ১৪২ জন।