Naya Diganta

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বিগ্ন

বাংলাদেশে ডিজিটাল স্পেসসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন এবং নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ২৭টি দেশের এই জোট স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, অস্ত্র ছাড়া সবকিছু (ইবিএ) স্কিমের আওতায় ইইউর বাজারে বাংলাদেশের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার শর্তযুক্ত।
সম্প্রতি বাংলাদেশে ইবিএর পর্যবেক্ষক মিশন ঘুরে যাওয়ার পর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে লেখা চিঠিতে এ সব কথা জানিয়েছে ইইউ। ইইউর বাণিজ্য বিষয়ক মহাপরিচালক, কর্মসংস্থান বিষয়ক মহাপরিচালক ও এশিয়া-প্যাসেফিক অঞ্চল বিষয়ক উপমহাপরিচালক যৌথভাবে চিঠিতে সই করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জিএসপির নতুন বিধিবিধানসহ জিএসপি প্লাস নিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট আলোচনা করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার তার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। ঢাকা সফরকালে জিএসপির নতুন বিধিবিধান সংক্রান্ত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ইবিএ মিশন উত্থাপন করেছে। আমরা বুঝতে পারি বিশেষ করে করোনা মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে এ সব ইস্যুতে জটিলতা রয়েছে। তবে বাংলাদেশ যে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে- এটা ইউরোপীয় পার্লামেন্টসহ ইইউভুক্ত ২৭টি দেশের কাছে তুলে ধরাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এতে দ্রুততম সময়ে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) সংক্রান্ত শ্রম আইন সংশোধন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে, আমরা গত কয়েক বছরে এবং সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় সব ক’টি বৈঠকে ইস্যুটির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। ইপিজেড শ্রম আইন সংক্রান্ত বিধিবিধান বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। এই আইন সংশোধনের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমার ওপর আমরা জোর দিচ্ছি।
জিএসপির (জেনেরালাইসড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সস) অধীনে ইবিএ স্কিমের আওতায় ইইউর বাজারে বাংলাদেশ শুল্ক ও কোটমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছে। এই সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশের মোট রফতানির ৫০ শতাংশ ইইউভুক্ত দেশগুলোর বাজারে যাচ্ছে। তবে ২০২৪ সাল থেকে ইইউ জিএসপির জন্য নতুন নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে। জিএসপির নতুন নীতির আওতায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে ইইউ ৯ দফা কর্মপরিকল্পনা দিয়ে তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের কাছে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছিল ইইউ। এই কর্মপরিকল্পনায় বাণিজ্য সুবিধার সাথে প্রথমবারের মতো মানবাধিকারকে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু শ্রম বন্ধ, সবার জন্য মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং ইপিজেডগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জিএসপির নতুন নীতি অনুযায়ী ৯ দফা কর্মপরিকল্পনা গত বছর ইইউকে দিয়েছে বাংলাদেশ। এ সব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২৬ সাল। গত মার্চে ইবিএ পর্যালোচনা কমিটি বাংলাদেশ সফর করে এ সব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে গেছে।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (এলডিসি) দেয়া ইইউর বাণিজ্য সুবিধা ইবিএ ২০২৩ সালে শেষ হতে চলেছে। এরপর নতুন নীতির আওতায় জিএসপি সুবিধা চালু হবে। তবে বাংলাদেশ ইবিএ সুবিধা অব্যাহত রাখা এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ২০২৯ সাল থেকে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক ও বাণিজিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
আগামী ১৮ থেকে ২০ মে ব্রাসেলসে ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের দশম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। যৌথ কমিশনের বৈঠকে আগে মানবাধিকার ও সুশাসন, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন সহায়তা- এই তিনটি সাব-গ্রুপ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব যৌথ কমিশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনকে গুরুত্ব দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আসন্ন যৌথ কমিশন বৈঠকে এ সব ইস্যুর ওপর বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইবে ইইউ। ইস্যুগুলোর ওপর সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো কাজ করছে।
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠেয় যৌথ কমিশন বৈঠকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বিচার বিভাগের সংস্কার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার, নাগরিক সমাজের কর্মকাণ্ডের সুযোগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, মানবাধিকার, সুশাসন ও শ্রম অধিকার নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া সংখ্যালঘুদের অধিকার, নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার, রোহিঙ্গা সঙ্কট ও শরণার্থী পুনর্বাসন, অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড রোহিত করার বিষয়েও আলোচনা হবে। এই আলোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইআরডি।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংকুচিত হয়ে আসায় ইতোপূর্বে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ইউরোপীয় কমিশন। আসন্ন ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের বৈঠকে এই উদ্বেগের বিষয়টি উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টিটিভ জোসেফ বোরেল।