Naya Diganta

নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে নানা অঙ্ক

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনীতি ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী বড় দলগুলোর শীর্ষ নেতারা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে মাঝে মধ্যেই এখন উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। সাংগঠনিক চাঞ্চল্য বেড়েছে সরকারবিরোধী ছোট দলগুলোতেও। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন জোট কিংবা জোট তৈরির তৎপরতা। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে, আসনভিত্তিক যোগ্য প্রার্থীর তালিকা তৈরির কাজেও নেমে পড়েছে দলটি। অন্য দিকে অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিও নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের দলীয় এজেন্ডা নির্ধারণ করার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। তবে বিএনপির নির্বাচনের পথ সরকারি দলের মতো ‘সহজ ও সাবলীল’ বলে বিবেচিত হচ্ছে না। ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেয়ার যে সিদ্ধান্ত দলটি ইতোমধ্যে নিয়েছে, তা রাজনৈতিক কৌশল দিয়েই বিএনপি নেতৃত্বকে আদায় করে নিতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

তবে নির্বাচনমুখী রাজনীতির এই প্রকাশ্য রূপের রাইরেও পর্দার অন্তরালে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনকে নিয়ে পুরোপুরি ‘নির্ভার’ থাকতে পারছে না। বিগত দুইটি ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে একটা ‘সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ’ নির্বাচনের তাগিদ ইতোমধ্যে সরকারের ওপর একধরনের ‘চাপ’ তৈরি করেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ছাপিয়ে বহিরাঙ্গনের বিভিন্ন প্রভাবশালী পক্ষ থেকে দেয়া এই তাগিদ সরকার উপেক্ষা না করার কৌশল নিয়েছে। আর যে কারণে বিরোধী দলগুলোকে সাম্প্রতিক সময়ে সভা-সমাবেশের যথেষ্ট স্পেস দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক অচলবস্থার বিপরীতে একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করার ওপর সরকারের নীতিনির্ধারকরা এখন জোর দিচ্ছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ‘বিএনপি না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না’ মর্মে কোনো কোনো নেতার বক্তব্যকে কেউ কেউ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার একটি প্রচেষ্টা সরকারের তরফ থেকে থাকবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। যেটি নির্বাচনের আগে সময়মতো দৃশ্যমান হতে পারে।

রাজনীতি নিয়ে পর্দার অন্তরালেও ইদানীং বিভিন্ন আলোচনা শুরু হয়েছে। অসমর্থিত ওই সব রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার আবারো ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। তবে সেটি একটি শক্তিশালী বিরোধী দল তৈরি করে। এ জন্য নানা ফর্মুলাও আলোচিত হচ্ছে। এই আলোচনার পক্ষভুক্তরা বিএনপিকে ৮০-১০০ আসন দিয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল বানানোর কথাও বলছেন। আবার বিএনপি নির্বাচনে না এলে ছোট ছোট বিরোধী দলগুলোকে সামনে এনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছেন কেউ কেউ।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও বেশ সোচ্চার। যাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি দেশ আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা আগামীতে একটি ‘সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন দেখতে চায়। মাসখানেক আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলে, বাইডেন প্রশাসন তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে। আগামীতে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন হতে হবে বলে তারা সাফ জানিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করার বিষয়েও তারা কথা বলেছেন। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারÑ এই দু’টো বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেই এখন বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে।

অন্য দিকে এই অঞ্চলে মার্কিনীদের বিপক্ষ গ্রুপও বেশ সক্রিয় বলে অনেকে মনে করছেন। আগামী নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায়, কিভাবে হবে, সেসব ক্ষেত্রে তাদের প্রচ্ছন্ন প্রভাব থাকতে পারে বলেও মনে করা হয়।
সরকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি অবশ্য মনে করছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক চাপ দৃশ্যমান ছিল না। যেটি এবার ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যু সবার নজরে রয়েছে। এ কারণেই বিগত দু’টি নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সুযোগ নেই।