Naya Diganta

দিগন্ত সাহিত্যিক কবিতা


জাহাঙ্গীর ফিরোজ
চাঁদ জেগে আছে

দ্বিতীয় আবাসে আপনি ছায়ার মতন এসে বসতেন
কবিতা ও গান নিয়ে কথা
কাঁপা হাতে চামচে চা তুলতে তুলতে কবিতা পত্র নিয় কথা বলতেন
আমাদের আর প্রেস ক্লাবের বারান্দায় কথা হবে না
তবু কথা হবে ‘যখন ফুটবে ফুল বকুল শাখে’
ফুলের সৌরভের মতন আপনি!
কারো কপোলের তিল চোখে পড়লেই
আপনার গান ভ্রমরের মতো গুনগুন করে ওঠে ...
আপনাকে মনে পড়ে
কে জি ভাই, সেকেন্ড হোম বুঝি হৈচৈ-য়ে ভরে উঠেছিল!
আমাদের রেখে স্থায়ী নিবাসের নির্জনতায় উঠে গেলেন!
যে রকম মাঝেমধ্যেই তেতলাতে উঠে যেতেন
কে জি ভাই,ওখানে কী চাঁদ জেগে আছে?
পৃথিবীতে আলো উপচে পড়ছে!

 


মাহমুদ কামাল
চাঁদ জেনে গেছে

স্থিরবিন্দু নীরবিন্দুগুলো
কখন গিয়েছে ঝরে, টুপটাপ
হৃদয়তন্ত্রীতে বাজে বেদনার সুর...
এখনো সমুদ্রের ঢেউ
এখনো চাঁদের আলো
ভাষা পেয়ে কথা নেচে ওঠে
সুরের পৃথিবী ছেড়ে নতুন ঠিকানা, তবু
চাঁদ জেনে গেছে ভালোবাসা কাকে বলে।

 


স.ম. শামসুল আলম
কে জি মোস্তফা

কে জি মোস্তফা পৃথিবীতে নেই, আছে মন-প্রাণ ভরে
মায়ের কণ্ঠে প্রথম শুনেছি তার গান মজা করে।
‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’
এই গানখানি এখনো আমাকে যাদুর বাঁশিতে টানে।
কী মায়া জড়ানো কত ভালোবাসা দিয়েছে উজাড় করে
গানের কবিকে অনুভবে পেয়ে রেখেছি হৃদয়ে ধরে।
জানি আমি, ‘আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন’- সুরে
সুরে ভেসে যাবে সোনার তরণী দূর থেকে বহুদূরে।
কত শঙ্খিনী হতবিহ্বল অবেলায় কেঁদে-হেসে
সব কথা মনে পড়ে যাবে শুধু তোমাকেই ভালোবেসে।
তোমার কাব্য ‘সাতনরী প্রাণ’, ‘একমুঠো ভালোবাসা’
চিরদিন দেবে শত প্রেরণায় বেঁচে থাকবার আশা।
যে গান লিখেছো ছোঁয়া দিয়ে যেতে হাজারো সাগর সেচে
প্রিয় কবি তুমি কে জি মোস্তফা গানে গানে থেকো বেঁচে।

 

সায়ীদ আবুবকর
বাণীর ব-দ্বীপে যাঁর ঘর

ফুলেরা তোমার মতো নয়,
ফুল ঝরে যায়, সেই সাথে হারিয়ে যায় তার ঘ্রাণও;
নদীরা তোমার মতো নয়,
নদী মরে যায়, সেই সাথে কোথায় হারিয়ে যায় চিরতরে
রমণীর উত্তাল চুলের মতো ঝড় তোলা ঢেউ;
বৃক্ষেরা তোমার মতো নয়,
বৃক্ষ মরে যায়, সেই সাথে হারিয়ে যায় ফুলফল
এবং সুগাঢ় পাতার সবুজ;
পাখিরা তোমার মতো নয়,
পাখি মরে যায়, সেই সাথে থেমে যায় চিরতরে
তার গানও;
তুমি চলে গেছো কিন্তু এখানে তোমার গান রয়ে গেছে;
বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে বাজছে তোমার
‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো, চাঁদ বুঝি তা জানে’
আর তোমার কবিতা বৃক্ষ হয়ে রয়ে গেল আমাদের
হৃদয়ে হৃদয়ে।
হায়, কবি! কবিরা কি মরে? পৃথিবীর সবই নশ^র,
বেঁচে থাকে শুধু তাঁরা, বাঁধে যারা বাণীর ব-দ্বীপে ঘর।

 


মুস্তফা হাবীব
আয়নাতে ওই মুখ

অবিশ্বাস্য, অদম্য একমুঠো কৌতূহলই
আমাকে নিয়ে যায় রসুলপুর বুড়িগঙ্গার ওপারে
‘আলতো পায়ে ছন্দ তুলে সাঁজের বেলা গাঙের কূলে
জলকে বধূ যায়’ গানের স্রষ্টার বাড়ি,
একা নই, ব’নজীর আহমদ, ইউসুফ শরীফ,
আবদুল হাই শিকদার , এবং আরো অনেক ...
সুরের আকাশে রঙধনু দেখার মানুষগুলো।
ডিঙি নৌকোয় চড়ে কাটিয়ে দেই উদাস বিকেল
বেলজিয়ামের কাচে ভর করা ছাড়াই গানের পাখি
সিরাজুল ইসলাম ভেসে ওঠে মনের আয়নায়।
ঠিক এমনই একজন মানুষ, হাজার গানের বাতিঘর
আমার দুচোখের তারায় তারায় ভেসে ওঠে,
নদীর ঢেউয়ের মতো তরঙ্গ তোলে স্মৃতির জলনূপুর
ভুলতে পারি না, ভোলা যায় না তার অবয়ব
‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে ’।
সে গানে কবিতা ছড়ায় ছন্দে
ডুবুরির মতো জীবনঘনিষ্ঠ ডুব দিয়ে ছড়াতো সিম্ফনি ;
যার সংস্পর্শ আমাকে কবিতা ও গানের লালপদ্ম
কুড়াতে প্রলুব্ধ করেছিল, যার সৃষ্টির মহিমা আমাকে
দিয়েছিল একঝাঁক দুরন্ত বলাকার মতো নীলিমায়
ডানা মেলে উড়বার সাহস, সে আর কেউ নয়,
একটি অনুপম শ্বেত পায়রা ‘কে জি মোস্তফা ’।

 

শাহীন আরা আনওয়ারী
মরণের বাঁশি

এনেছি সাথে মরণের বাঁশি
এত ভালোবাসি জীবনকে তাই
দিন-রাত খুঁজে ফিরি সুখ খুঁজি মরীচিকার বুকে
কত বেদনা কত জ্বালা কত যাতনার ঢেউ
তবুও সুখ খোঁজে মানুষ, তবুও চায় মুছে দিতে
যাতনার দাগ মোছা যায় কি!
দেখতে দেখতে চলে যায়, অপূর্ব মায়াবী সময়
কিছু গান কিছু স্মৃতি কিছু ফেলে আসা পথ
রেখে হারায় মানুষ! একেই বলে চির বিদায়।
কত কিছু দিয়ে গেলে, মোহাময়ী গান কবিতার রঙ
তোমার আত্মায় মাখা হোক অসীম রহমতের নূর
অন্ধকার কবর যেন হয় আলোময়।
ভাবি খুব- না ভেবে কি উপায়!
যেতেই হবে আজ কিবা কাল
ঐ অন্ধকার অচিনপুরে!
ক্ষমা করে দিও রব-
তাঁকে এবং আমাদের সকলকেই!