Naya Diganta

রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির চেয়ে আদায়ের নিম্নহার

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সাথে পাল্লা দিয়ে বেসরকারি ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ২০২১ সালে সরকারি ব্যাংকগুলোকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সালে স্থিতিভিত্তিক মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকা যার মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ছিল ৯১ হাজার কোটি টাকা, তন্মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের ৪২ হাজার কোটি টাকা ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৪৯ হাজার কোটি টাকা। ‘করোনার করুণা’য় ২০২০ ও ২০২১ পঞ্জিকাবর্ষে কোনো ঋণ নতুন করে খেলাপি না করায় প্রকৃত অবস্থা জানতে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ মোট খেলাপি ও কুঋণের হারের সাথে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সালের মোট ঋণ ও খেলাপি এবং কুঋণের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে।

গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পুঞ্জীভূত পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। তন্মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেখানো হয়েছিল এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাক। ফলে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছিল ১১.৫৬ শতাংশ। অথচ গত ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ আট হাজার কোটি টাকা যার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী তার সম্ভাব্য মন্ত্রিত্বের আমল খেলাপি ঋণের চাপমুক্ত রাখতেই ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, যা বর্তমানে সাবেক অবস্থায় ফিরে গেছে। ৫৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা কুঋণ অবলোপনের মাধ্যমে হিসাবের খাতা থেকে উধাও করে দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া প্রভাবশালী ৬৭৫ জন বড় ঋণগ্রহীতার কাছে পাওনা ৭৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খেলাপি হলেও তারা হাইকোর্টে রিট করে এর বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পাওয়ায় ওই ঋণখেলাপি হওয়া সত্তেও ‘নিয়মিত’ হিসাবে তাদের দেখানো হচ্ছে। তাই আইএমএফের হিসাব মতে, গত ৩০ জুন ২০১৯ খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা হলেও ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ তা দেখানো হয়েছিল মাত্র এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ৩০ জুন ২০১৯ যদি খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা হয় তা হলে ডিসেম্বর পর্যন্ত এর পরিমাণ ২.৫ লাখ কোটি টাকা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকির মারপ্যাঁচে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখানো হলেও এর ওপর ৯ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করতে না পারলেও আমানতকারীদের আমানতের ওপর ৬ শতাংশ হারে সুদ দিতে হচ্ছে এবং চাহিবামাত্র আমানতকারীদের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

তদুপরি ব্যাংকের স্টাফদের বেতনভাতা, অফিস ভাড়া ও অফিস সরঞ্জামাদি ক্রয় বাবদ আমানতের ওপর ২ শতাংশ হারে খরচ হয়; ফলে ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড হিসেবে ৬ + ২ = ৮ শতাংশ হারে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের খরচ হচ্ছে। অন্য দিকে ঋণের সুদ বাবদ ৯ শতাংশ হারে বছরে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় হতে ব্যাংকগুলো বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে ২.৫ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের কারণে বছরে ব্যাংকের ব্যয় বৃদ্ধি ও সুদ খাতে আয় হ্রাসের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ব্যাংকগুলোর পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ছিল ১৩ লাখ এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। করোনাকালীন দুই বছরে কোনো ঋণ নতুনভাবে খেলাপি না করায় এবং দুই বছরে তিন লাখ কোটি টাকা নতুন ঋণ বিতরণ করায়, ২৪ মাসে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ একটি টাকাও আদায় করতে না পারা সত্তেও খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৭.৯৩ শতাংশ। এটি শুভঙ্করের ফাঁকি নয় কি? ব্যাংকগুলোর গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কত ছিল তা বের করার একটি উপায় আছে। তা হচ্ছেÑ ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মোট কত লাখ কোটি টাকা ঋণের ওপর ব্যাংকগুলো সুদারোপ করে আয় খাতে নিতে পেরেছে, তা-ই হচ্ছে ‘নিয়মিত ঋণ’। কত লাখ কোটি টাকা ঋণের ওপর সুদারোপ করতে পারলেও তা খেলাপি হওয়ায় এবং ঋণ আদায় না হওয়ায় সুদ স্থগিত হিসেবে রাখা হয়েছেÑ এটিই হচ্ছে ‘সাধারণ খেলাপি ঋণ’। আর কত লাখ কোটি টাকা ঋণের ওপর আদৌ কোনো সুদারোপ করতে পারেনি, তা ‘কুঋণ’ বা ক্ষতিজনক শ্রেণিভুক্ত ঋণ, যা আদৌ আদায়যোগ্য না হওয়ায় এর ওপর ব্যাংকের মুনাফা থেকে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ঋণের বিপরীতে প্রদত্ত বন্ধকী সম্পত্তির বাজার মূল্য ও স্থগিত হিসেবে রক্ষিত সুদ এই দু’টির মিলিত যোগফল দিয়ে ঋণের লেজার স্থিতি শূন্য করতে নামেমাত্র যে ঘাটতি পড়ে তাকে মূলধন ঘাটতি বা প্রভিশন ঘাটতি বলা হয়, যা ব্যাংক তার অর্জিত মুনাফা থেকে পূরণ করে থাকে।

সাবেক অর্থমন্ত্রীর ১০ বছরের আমলে এই প্রভিশন ঘাটতি মেটাতে জনগণের দেয়া ট্যাক্সের টাকা থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা জোগান দেয়া হয়েছিল। নতুন অর্থমন্ত্রী তার ৩৬ মাসের আমলে মূলধন ঘাটতি পূরণে কোনো অর্থ না দেয়ায় সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা যার মধ্যে সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩২ হাজার কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকের ৪২ হাজার কোটি টাকা কুঋণের বিপরীতে ২০২১ সালের আদায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬০৫ কোটি টাকা যার বিপরীতে ব্যাংকগুলো আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৬০৫ কোটি টাকা; অর্থাৎ এক হাজার কোটি টাকাই ঘাটতি। যদি কোনো ঋণ আর নতুনভাবে কুঋণে পরিণত না হয় এবং আদায় লক্ষ্যমাত্রা যদি শতভাগ অর্জিতও হয়, তা হলে ৪২ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে ২৭ বছর লাগবে। অথচ গত ২৪ মার্চ সোনালী ব্যাংকের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং মূলধন ঘাটিতি পূরণে কোনো অর্থ বাজেট থেকে জোগান না দেয়ার কথা বলে ব্যাংকগুলোকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান বলেছেন, সোনালী ব্যাংকের স্থিতিপত্রে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেখে বিদেশী ব্যাংকগুলো এলসি খোলার টাকা পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনা করে বিধায় আমাদের এলসি গ্রহণ করতে চায় না। তাই পরিস্থিতি এড়াতে অবলোপনের মাধ্যমে ব্যালান্সশিট থেকে খেলাপি ঋণ মুছে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছে তিনি। ৯১ হাজার কোটি টাকা কুঋণের শতভাগ প্রভিশন রাখতে যে ৩৭ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি দেখানো হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে এর পরিমাণ ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকার কম হবে না; কারণ ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে যে স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক দেয়া হয়েছিল, ব্যাংকগুলো আদালতে মামলা দায়ের করে বন্ধকী সম্পত্তির মালিকানা পেলেও ত্রæটিপূর্ণ মালিকানার কারণে গত ১০-১৫ বছরেও তা বিক্রয় করতে ব্যর্থ হওয়ায় অর্থাৎ যে সম্পত্তি আদৌ বিক্রয়যোগ্য নয় তার বাজারমূল্য ধরে এবং ইন্টারেস্ট সাসপেন্স হিসেবে রক্ষিত সুদসহ ঋণ হিসাবের লেজারস্থিতি শূন্য করতে যে ঘাটতি পড়েছে ব্যাংকের অর্জিত মুনাফা থেকে পূরণের পরও ৩৭ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে, যাকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বলে অভিহিত করা হচ্ছে। আরো দুঃসংবাদ হলো, যা গত ২১ মার্চের নয়া দিগন্তে ‘কুঋণে পরিণত হচ্ছে বিশেষ ছাড়ের ঋণ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে তা থেকে জানা যায়, রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৫ সালে বিশেষ ছাড় নিয়ে ১১ শিল্প গ্রুপের ১৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ১২ বছরের জন্য পুনর্গঠনের নামে খেলাপিমুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় তা-ও আবার খেলাপি হয়ে পড়েছে যার বেশির ভাগ এরই মধ্যে কুঋণে পরিণত হয়েছে। সুদসহ এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা।

গ্রুপ অব ইলেভেন হচ্ছে-
১. বেক্সিমকো গ্রুপের ছয় হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা;
২. শিকদার গ্রুপের দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা;
৩. এস এ গ্রুপের এক হাজার ৫৬০ কোটি টাকা; ৪. অ্যানন ট্যাক্সের এক হাজার ২০১ কোটি টাকা হলেও বর্তমানে এর পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকার ঊর্ধ্বে;
৫. রতন গ্রুপের এক হাজার ২০০ কোটি টাকা;
৬. কেয়া গ্রুপের ৮৫২ কোটি টাকা ও
৭. আবদুুল মোনেম গ্রুপের ১৭০ কোটি টাকা এবং বাকিটা যমুনা থার্মেক্স, বিআর স্পিনিং ও রাইজিং স্টিলের।

গত ১৮ মার্চের নয়া দিগন্তে ‘আড়াই বছরে ব্যাংকের কুঋণ কেনার সরকারি কোম্পানি গঠন হয়নি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন (বামকো) নামের প্রতিষ্ঠান গঠন করে ব্যাংকের কুঋণ কিনে নেয়া হবে। পরে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে এই ঋণ আদায় করা হবে। খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে দেয়ায় যেকোনো ব্যাংকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কিনে নেয়ার ক্ষমতা থাকবে এই করপোরেশনের। করপোরেশনের আয় ও মুনাফা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত। ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ব্যবসায়ের যথাযথ দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যবসায়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বা কর্তৃত্ব গ্রহণ (টেকঅভার)। ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ বা আংশিক বিক্রি বা লিজ দিতে পারবে। এভাবে বামকো জামানতের দখল, সুরক্ষা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিক্রির ব্যবস্থা করবে। প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে ঋণদাতা ব্যাংক আদালতে মামলা করে বন্ধকী সম্পত্তির মালিকানা পর্যায়ক্রমে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পেয়েও তা বিক্রি করতে পারেনি সেখানে ‘বামকো’ কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে? প্রকৃতপক্ষে বড় বড় প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের কুঋণ বামকোর মাধ্যমে কিনে নেয়ার ব্যবস্থা করে তাদেরকে একধরনের বিশেষ ছাড় দেয়াই হচ্ছে বামকো গঠনের মূল উদ্দেশ্য। ২০২০ ও ২০২১ সালে যেসব ঋণ খেলাপি হলেও করোনার করুণায় তা খেলাপি দেখানো হয়নি, তা ২০২২ সালে খেলাপি দেখাতে হবে এবং এই দুই বছরে যে তিন লাখ কোটি টাকা নতুন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে কিস্তি খেলাপি বা এক বছর মেয়াদি ঋণ সুদ পরিশোধ করে নবায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় একুনে ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকায় ১৩ লাখ এক হাজার ৮০০ হাজার কোটি টাকা ঋণের ২৪-২৫ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকায় ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি মুনাফাও তলানিতে এসে ঠেকবে।

ব্যাংকগুলোর এ অবস্থার জন্য সরকারের নীতি, দলীয় বিবেচনায় বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুুল হাই বাচ্চুর মতো বা দলবাজ আমলাদের চেয়ারম্যান করা, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক নেতাদের পরিচালক নিয়োগ, পি কে হালদারের মতো এমডি নিয়োগ ও দলীয় বিবেচনায় জিএম পদে পদোন্নতি দানের কারণে সবাই মিলেমিশে যাচাই-বাছাই ছাড়াই লাখ টাকার জামানতের মূল্য কোটি টাকা দেখিয়ে ঢালাওভাবে ঋণ প্রদান হচ্ছে অন্যতম বড় কারণ। পি কে হালদার একটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি থাকার সুবাদে একাই ভুয়া নামের শত ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করে একাই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করল আর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ও ব্যাংকের জিএমরা মীরজাফরের সেনারা পলাশীর যুদ্ধে যেমন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লর্ড ক্লাইভ বাহিনীর রণনৈপুণ্য দেখছিলেন, তেমনি তারাও হালদার বাবুর বিশ্বাস ভঙ্গের দৃশ্য উপভোগ করছিলেনÑ এটি কখনো বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন নতুন ব্যাংক খোলার অনুমতি দান, একই পরিবারের চারজনকে একটানা ৯ বছর পরিচালক থাকার আইন পাস করে উত্তরাধিকারের রাজনীতির মতো বেসরকারি ব্যাংকেও উত্তারাধিকারসূত্রে মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মা চেয়ারম্যান, শিকদার ছেলেদ্বয় ও এমপি মেয়ে পরিচালক থাকার সুবাদে ন্যাশনাল ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা। বিরোধী দলের নেতাকে সরকারি হিসাব কমিটির চেয়ারম্যান না করে ১৯৯৬ সালের আমলা বিদ্রোহের নেতাকে সরকারি হিসাব কমিটির চেয়ারম্যান করায় তার প্রতিষ্ঠিত ফারমার্স ব্যাংকে সংঘটিত গুরুতর অনিয়মগুলো বাণিজ্যিক নিরীক্ষা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে না আসায় ব্যাংকটি ডুবতে বসলে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকা করে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রদান করেও ডুবন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে না পারায় সর্বশেষ ব্যাংকের নাম বদল করে টিকে থাকার প্রয়াস চালাতে হচ্ছে এবং সরকারি ব্যাংকের সাথে এর মার্জ হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। এক বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা ও তাদের আত্মীয়স্বজন পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে অন্য বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন। এরূপ ঋণের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। তা যথাসময়ে পরিশোধ না করায় খেলাপি হয়ে পড়লে সুদ মওকুফের সুবিধা নিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা পরিশোধে দেখানোর চক্রাকার খেলা গত ১০ বছর ধরে চলে আসছে। এই ঋণের টাকা তারা কোথায় বিনিয়োগ করেছেন, তা কেউ জানে না।