Naya Diganta

মাহে রমজানের তোহফা

মাহে রমজানের তোহফা

আমরা ‘সময়’ বাহনে চড়ে বসে আছি। বর্ণ-শ্রেণীর বিবাদ ছেড়ে আমরা সবাই কিন্তু ‘সময়’ বাহনের আজব যাত্রী। সে আমাদের নিয়ে চলছে আর চলছে। ব্যক্তি-মান আর মতবাদের পার্থক্যে প্রত্যেকের গন্তব্য ভিন্ন ও অভিন্ন। আমাদের কর্ম আর বিশ্বাসই আমাদের গন্তব্য নির্ধারণ করে। স্টেশন নির্বাচন করে এবং শেষ দিবসের পরম সত্য পরিণাম ধার্য করে।
সম্প্রতি ‘সময়’ বাহন মুমিনকে হাজির করেছে শ্রেষ্ঠত্ব মহিমা ও অফুরন্ত ফজিলতে পরিপূর্ণ বহুল প্রতীক্ষিত মাসে, মাহে রমজানুল মোবারকে।
মাহে রমজানুল মোবারক মুমিনের মাঝে আগমন করে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের আলো নিয়ে। আবেদন করে সদা মুমিনের তরে যেন সে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের উদ্ভাসিত আলোয় আধার হৃদয়কে একটু আলোকিত করে।
মাহে রমজানুল মোবারক হিম শীতল বাতাস হয়ে বয়ে যায় মুমিনের অন্তরে অন্তত কিছুকাল প্রশান্তির অনুভূতি দান করতে। গুনাহে নিমজ্জিত দেহে বসন্তের ছোঁয়া দিতে। এতে হয়তো সে মুক্তি পাবে জাহান্নামের শিকল থেকে। ফিরে আসবে মনোনীত দ্বীন ইসলামের সরল পথে। প্রেমময় দৃষ্টিতে গ্রহণ করবে নববী সুন্নত। অর্জন করবে তাকওয়া ও খোদাভীরুতার বৈশিষ্ট্য।
ফলে মুমিন-জীবনে ঈমানি বসন্তের বিপ্লব গড়বে। তবে তা কিভাবে? কোন পথে? ইনশা আল্লাহ অন্য কোনো প্রবন্ধে সময়- সুযোগ হলে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তবে মাহে রমজান থেকে সার্বিক উপকৃত হওয়ার যে মূল দণ্ড তা নিয়ে সামান্য আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ। আর তা হচ্ছে ইখলাসে নিয়ত।
রমজানে আমরা পানাহারে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যখন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তা পরিত্যাগ করি তখন প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের জন্য সওয়াব লিখা হতে থাকে। প্রতিটি মুহূর্তে আমরা মর্যাদার
স্তরসমূহে হস্তান্তর হতে থাকি। কারণ সামান্য এ ত্যাগ আল্লাহর কাছে খুবই দামি। এতে আল্লাহ খুব খুশি হন। বান্দা যখন তার হুকুম পালনার্থে এবং শুধুই তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ক্ষুৎপিপাসায় কষ্ট সহ্য করে- এর মর্যাদা প্রভুর দরবারে খুব বেশি। তাই তো হাদিসের ইরশাদ হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে তথা ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে তার অতীত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’
এখানে ঈমানের সাথে সাথে সওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। পুরো জীবন সেই শিক্ষা মনে রাখা উচিত। বৃহৎ সওয়াব ও মুক্তির আশায় অন্তত এই মাসে শিক্ষার বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন।
রমজানুল মোবারক প্রতি বছরই আসে, সেহেতু রোজা মানব জীবনাংশের একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই অনেক সময় সাধারণ মানুষদের নয় শুধু বরং শিক্ষিত মহলের দৃষ্টিও ইবাদতের গুণাবলি ও বিশিষ্ট্যের প্রতি থাকে না।
আর এটিই বস্তুত ইখলাসের দৃষ্টিকোণ। আপনার ইবাদত তখন মূল্যায়িত হবে যখন ইবাদতে ইখলাসের মিশ্রণ থাকবে। সাধারণত নিয়তের দু’টি স্তর রয়েছে। এক. ওই স্তরের নিয়ত যার ফলে আপনার সিয়াম ও রোজা শরয়ী মাপকাঠিতে রোজা হিসেবে উত্তীর্ণ হয়। দুই. নিয়তের ওই স্তর যে স্তরে নিয়তকারীর অন্তরে সদা নিয়তের হাকিকত ও বাস্তবতা জাগরূক থাকে। যথা আমি কেন রোজা রাখছি? কার জন্য রাখছি? মুমিনের ওপর ক্ষুৎপিপাসায় কষ্ট চাপিয়ে আল্লাহ তায়ালা মুমিন হতে কেবল দৈহিক কষ্টই কামনা করেন নাকি তাকওয়া ও খোদাভীরুতা। আর তা আমার কতটুকু অর্জিত হলো? আর প্রকৃতপক্ষে ইবাদতে ইখলাসের মিশ্রণ সাধ্যের হলেও মুশকিল। এর জন্য প্রয়োজন নিজ ধ্যান ও মানসিকতার ওপর বিশেষ দৃষ্টি। তবেই প্রকৃত আজর ও সওয়াবের প্রত্যাশা লাভ করতে পারব।
অপর দিকে, আমরা যদি উদাসীনতার স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিই তাহলে পর্যায়ক্রমে পরিণাম এমন হবে যেমনটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে- ‘বহু রোজাদার এমন যাদেরকে তাদের রোজা ক্ষুধা পিপাসার কষ্ট ছাড়া কোনো প্রতিদান দেয় না।’
আল্লাহ তার পরম করুণায় আমাদের রক্ষা করুন। আমিন। মাহে রমজান আমাদের সবার জীবনে মোবারক হোক। ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসুক। আমাদের ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবন থেকে সব অবিচলতা দূর হয়ে যাক। আমাদের চিন্তা-ভাবনা মন-মানস কর্ম ও আচরণ উজ্জ্বল হয়ে উঠুক মাহে রমজানের শিক্ষায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করুন ও কবুল করুন। আমিন।