Naya Diganta

ধৈর্যের শেষ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে

ধৈর্যের শেষ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে

বৃত্তান্তের ভিড়ে পৃথিবীর মানুষ অর্থের কাছে অসহায়। সম্মানের হাতছানি। মাথা নিচু করে চলতে হচ্ছে মানুষের দ্বারপ্রান্তে। হাত পাততে হয়; চাইতে হয় অর্থ। কেউ অর্থ দেয়, কেউ দেয় অপমান। অপমানকে তারা পুঁজি মনে করে চলে প্রতিনিয়ত। কেননা, মানুষের কাছে হাত পাতা নিজের অজ্ঞতার পরিচয় দেয়া। আর অজ্ঞতার প্রতি উত্তরে কেউ অপমান ব্যতীত ধন্যবাদ দিতে আসবে না- এটিই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অশান্ত প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা আদরের দুলাল। আদরের দুলাল আজ আনন্দের অনুভূতির জগতে হারিয়ে গেছে- আলোহীন ঊষার খোঁজে। হাহাকার করছে তার জীবন দীঘির কিনারায় পাল ওড়ানো নৌকার খোঁজে।
ব্যর্থ! কোথাও কিছু পাইনি। শূন্যতায় ভাসছে উন্নয়ন স্বপ্ন জীবনের গল্প। তবুও নির্ভরতা হারায়নি শূন্যতার কাছে। লাগিয়েছি সময়, পেয়েছি ভরসা। জিতব ব্যতীত হারব না।
আদরের ‘দুলাল’ মানুষের ভালোবাসা ব্যতীত অপমান সহ্য করবার ক্ষমতা রাখে না। নিজেকে সবসময় পরিপাটি রাখতে পছন্দ করে। কথায় বলে ‘গরিব হলেও অবস্থা ঠিক আছে’ দুলালের ক্ষেত্রে কিছুটা সেরকম।
বাবাহীন পৃথিবীতে সে নিঃস্ব। চোখ খুলে পৃথিবীর মনোরম দৃশ্য- শুধু দুলাল এবং তার মা দেখতে পায়। বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী মানুষের কাছে তারা ‘বিরক্তকর’ হয়ে উঠেছে।
পৃথিবীর ভূমিতে তার পায়ের কদম বুলিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। মানুষের কাছে হাত বাড়িয়ে দেয়ার অভ্যাস নেই। দু’বেলা না খেয়ে থাকবে তবুও মানুষের কাছে গিয়ে বলবে না- ‘একটু খাইতে দেন’। তার জীবনে একটিই স্বপ্ন, সে একদিন অনেক বড় হবে। কিন্তু কখনো মানুষের কাছে হাত পাতবে না। ধৈর্য ধরার ক্ষমতা আদরের দুলাল কখনোই ছেড়ে দেয় না। ‘ধৈর্য ফল অতি মিষ্টি হয়’ এ কথাটিই যেন তার জীবন এগিয়ে যাওয়ার সফলতা এবং প্রশান্তির বাতিঘর।
সাতটি বছর পর- আজ আদরের দুলাল সবার কাছে প্রিয়। বড় চাকরি, বড় দালানকোঠা, কোটি টাকার সম্পদের মালিক। আদরের দুলালকে এতদূর আসতে তাকে ধরতে হয়েছে ‘ধৈর্য’। মেনে নিতে হয়েছে কষ্ট। বাবাহীন দুনিয়া। পরিবারের রোজগার। তিন বেলার ভাত এক বেলা খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিত। জানি, এসব কিছু ধৈর্যের শেষ বিন্দুতে দাঁড়াতে হয়েছে আদরের দুলালকে। সফলতা অর্জনে আপনাকে ধরতে হবে ধৈর্য, কষ্ট। তবেই মিলিয়ে যাবে এ জীবনের প্রতিকূলতার প্রতিকূলে।