Naya Diganta

আফসোস

মুখে হাত দিয়ে কী ভাবছ পারু?
না, তেমন কিছু ভাবছি না আবির।
তাহলে মুখে হাত কেন?
শুনলাম করোনার জন্য সরকার নার্সের সার্কুলার দেবে, ২০১৮ সালে যারা ওয়েটিংয়ে ছিল তাদের নেবে। এবার আমারও চাকরি হবে, ভাবছি কোথায় না কোথায় পোস্টিং দেবে...
না পারু, তোমাকে আর চাকরি করতে হবে না। পাস করলে সাত বছর। আমার সাথে বিয়ে হলো ছয় বছর। এখনো মা হতে পারোনি। গ্রামের লোকে নানা কথা বলে, আমি আর এসব নিতে পারছি না।
আবির তুমি বুঝছ না কেন? আমি তো সদ্য প্রেগন্যান্ট, ম্যাটারনাল লিভ ছয় মাস তো পাবই। সমস্যা হবে না, তুমি আর অমত করো না প্লিজ।
পারুল একটি শিক্ষিত সচেতন মেয়ে হয়েও গ্রামের মানুষের নানা কুসংস্কারমূলক কথা নীরবে সয়ে যায়। পারুল শিক্ষিত বলে সঠিক সময়েই বেবি কনসিপ করেছিল কিন্তু কী অজানা কারণেই এভরশন হয়ে যায়। তারপর থেকে আর বেবি কনসিপ হচ্ছিল না তার। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আবার কনসিপ হয়েছে। তবুও শ্বশর, শাশুড়ি খুব জ্বালায়, উঠতে-বসতে কত কথা শোনায়। শুধু আবিরই পারুলকে ভালোবাসে। সেই ভালোবাসার টানেই পারুল আজও সংসার করছে।
আজ পারুল খুব খুশি। তার চাকরির জন্য চিঠি এসেছে। এবার শুধু অপেক্ষা...। আবির আসলেই তার অনুমতি নিয়ে সব কাগজপত্র জমা দিতে যাবে। অপেক্ষা করতে করতে সে ঘুমিয়ে পড়ে।
আবির রাত ১টায় বাড়ি ফিরল। দুই-তিনবার দরজা ধাক্কা দেয়ার পরে পারুল দরজা খুলল। ঘুমে ঝিমুতে ঝিমুতে বলল, ‘এত দেরি করে এলে কেন?’
অফিস থেকে ফিরে বাবার ব্যবসার হিসাব দেখতেই দেরি হয়ে গেল। পারুল আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, তুমি খাবার রেডি করো। খেতে খেতেই পারুল আবিরকে চিঠিটা দেখায়। আবির দেখে রাগ করে উঠে যায়। তবুও পারুল আবার আবিরের কাছে যায়। খুব নম্রভাবে বলতে থাকে, ‘তুমি তো জানোই নার্সিং নিয়ে আমার কত স্বপ্ন! একজন আইডিয়াল নার্স হয়ে মানুষের সেবা করব। এবার জয়েন্ট না করলে আর কোনোদিন সরকারি জব পাবো কি না জানি না। করোনার জন্য এবার সার্কুলার দিলো। আবার কবে দেবে না দেবে তার ঠিক নেই। তা ছাড়া আর কয়েক বছর পর আবার বয়সও বেড়ে যাবে। কী হলো আবির? কিছু তো বলো। তুমি এখন আমার স্বামী, সব অনুমতি তোমার কাছেই নিতে হবে। এখন আমি চাইলেও আর স্বপ্ন সাধনা করতে পারব না। পাগলা ঘোড়ার মতো স্বপ্নের পিছু ছুটতে পারব না।’
পারুলের চোখ দু’টি ছলছল করছে। আবির তার চোখের পানে তাকাতেই মুখ নিচু করে ফেলল চোখের জল লুকাতে। কিন্তু এটা আগেই আবিরের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
আবির পারুলের মুখ উঁচু করে অশ্রু মুছে দিয়ে বলল, ‘পারু, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার চোখের জল আমি সহ্য করতে পারি না। এ দু’টি চোখ সবসময় কাজলে ঢাকা থাকুক। এক ফোঁটা জলের কণাও যেন স্পর্শ না করে তোমায়।’
পারুলের বাপের বাড়ির কেউও রাজি হচ্ছিল না। পরে পারুলের জোরাজুরিতে রাজি হয়েছে। আর শ্বশুরবাড়িতে শুধু আবির ছাড়া সবাই রাজি। তার শাশুড়ি বলেছে, ‘যাক তো অপয়াটা, ওকে দিয়ে তো কিছুই হলো না। এবার কিছু টাহা-পয়সা কামাই কইরে দেউক।’
পারুলের পোস্টিং পড়েছে ঢাকায়। আবির সাথে যেতে চেয়েছিল কিন্তু তার চাকরির জন্য আর যাওয়া হলো না। তবে ইচ্ছে আছে অফিস ম্যানেজ হলেই চলে যাবে। পারুলকে ছাড়া তার পৃথিবীটা বিষণœতায় ভরপুর। যদিও আবির তার মা-বাবাকেও খুব ভালোবাসে। তাদের কোনো কষ্টও পেতে দেয় না।