Naya Diganta

আরব জোটকে যুদ্ধবিরতি কাজে লাগানোর আহ্বান হাউছিদের

টেলিভিশন ভাষণে হাউছি প্রধান আবদুল মালিক আল-হাউছি

ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীদের প্রধান আবদুল মালিক আল-হাউছি দেশটিতে চলমান সহিংসতা বন্ধে তাদের ঘোষিত তিন দিনের যুদ্ধবিরতিকে কাজে লাগানোর জন্য সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব জোটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সোমবার ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে এক টেলিভিশন ভাষণে এই আহ্বান জানান তিনি।

টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, ‘ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানো কোনো দেশেরই সুযোগ নেই আমাদের প্রতিশোধের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়ার এবং বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার। যদি না তারা হামলা বন্ধ করে, অবরোধ উঠিয়ে নেয় ও দখলদারিত্বের শেষ করে।’

যুদ্ধবিরতির সুযোগ না হারানোর জন্য সতর্ক করে হাউছি প্রধান বলেন, ‘আপনারা এই সুযোগ হারালে তার জন্য আফসোস করবেন।’

এর আগে শনিবার হাউছিদের পক্ষ থেকে সৌদি নেতৃত্বের আরব জোটের সাথে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।

তবে আরব জোটের পক্ষ থেকে এর কোনো প্রত্যুত্তর দেয়া হয়নি।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার এক দিন আগে শুক্রবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ, বন্দরনগরী জেদ্দা, জিজান, নাজরান, রাস তানুরা ও রাবেগে হামলা চালায় হাউছিরা। হামলায় অবশ্য কারো হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এর জবাবে শনিবার হাউছি যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও লোহিত সাগর তীরবর্তী হোদাইদায় বিমান হামলা চালায় আরব জোট। আরব জোটের হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে বলে জানায় হাউছিরা।

এরপরই হাউছিদের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হলেও তা কবে কখন শেষ হচ্ছে, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।

২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের বিক্ষোভের জেরে ইয়েমেনে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহ সরকারের পতন ঘটে। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দায়িত্ব নেন। নতুন সরকার গঠন হলেও ইয়েমেনের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে।

বিবাদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৪ সালের শেষে ইরান সমর্থিত উত্তর ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করলে প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বের জোট হাউছিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে আগ্রাসন করলে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ে আরব উপদ্বীপের দরিদ্রতম দেশটি।

সাত বছরের বেশি চলমান এই যুদ্ধে হাউছি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানাসহ উত্তর ইয়েমেন নিয়ন্ত্রণে রাখে। অপরদিকে সৌদি জোটের সহায়তায় আবদ রাব্বু মানসুর হাদি দক্ষিণের বন্দরনগরী এডেনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ইয়েমেনে সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।

ইয়েমেনে চলমান এই যুদ্ধে এক লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বেসামরিক লোকজন। এছাড়া যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো মানুষ।

সাত বছরের টানা যুদ্ধ ও অবরোধে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে ইয়েমেন। ইতোমধ্যে ক্ষুধায় ৫০ হাজারের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। ইয়েমেনের চলমান পরিস্থিতিকে বিশ্বের নিকৃষ্টতম মানবসৃষ্ট মানবিক সংকট হিসেবে হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসঙ্ঘ।

সূত্র : প্রেস টিভি