Naya Diganta

বাইডেন কি ইউরোপকে হারাবেন!

বাইডেন ও পুতিন

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ইউক্রেন-বিষয়ক এক প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটাভুটি হয়েছে। আর বাংলাদেশ তাতে পক্ষে ভোট দিয়েছে; অর্থাৎ আগের চেয়ে ব্যতিক্রম যদিও এ নিয়ে অনেক পত্রিকার রিপোর্টিংয়ে ভুল ইঙ্গিতে খবরটা উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন ‘প্রথম আলো’র শিরোনাম হলো - ‘জাতিসঙ্ঘে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিলো বাংলাদেশ’। ফ্যাক্টস হলো - এটি ঠিক ইউক্রেনের পক্ষের বা বিপক্ষের কোনো ভোটাভুটিই ছিল না। তাহলে কী ছিল? সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলা হয়েছিল এই বলে যে, ইউক্রেনের ‘সিভিলিয়ান সুরক্ষা আর মানবিক সাহায্যের প্রবেশের দাবি’ করা হচ্ছে। এই প্রস্তাবের বিষয়টি ছিল ইউক্রেন ও সাথে আরো ৯০টি দেশের। আর সুনির্দিষ্ট করে যেকোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের বেলায় যেমনটা হয়ে থাকে যে, সিভিলিয়ান ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয় আর মানবিক সাহায্য চলাচলে যেন সুযোগ করে দেয়া হয়; কাজেই বাংলাদেশ এর পক্ষে ভোট দিয়েছে। আর এমন দাবি যেকোনো যুদ্ধে সব পক্ষই মেনে চলতে বাধ্য হতে হয়, এমনই জাতিসঙ্ঘেরই এক সাধারণ অবস্থান। ফলে এটি ঠিক সরাসরি ‘ইউক্রেনের পক্ষে ভোটদান’ হয়েছে বলে দেখতে হবে, তা অনিবার্য এমন ঘটনা নয়। তবে পরোক্ষে এই ভোটদানের সুফল ইউক্রেনের পক্ষে যাবে, অবশ্যই।

আসলে রিপোর্টিংয়ের শিরোনাম বিতর্কিত না রাখতে চাইলে শুধু বললেই হতো যে, বাংলাদেশ ‘ইউক্রেন-বিষয়ক একটি প্রস্তাবের পক্ষে’ ভোট দিয়েছে। আর বলাই বাহুল্য, ‘ইউক্রেন-বিষয়ক একটি প্রস্তাবের পক্ষে’ ভোট আর ‘ইউক্রেনের পক্ষে’ ভোট - এ দুটি কোনোভাবেই একই কথা নয়। ফলে অযথাই এখানে টুইস্ট করা হয়েছে - বাংলাদেশ ‘ইউক্রেনের পক্ষে’ ভোট দিয়েছে। তবে এখান থেকে আরেক অনুষঙ্গীয় প্রসঙ্গ - অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ অবস্থান বদলিয়েছে। মানে আগে বিপক্ষে ভোট দিলেও এবার পক্ষে ভোট দিয়েছে। তাই কি? না, ঠিক তাও না।

যেমন - ধরা যাক কোনো সাংবাদিক আগামী কোনো সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করে জানতে চাইলেন, বাংলাদেশ অবস্থান বদল করল কি না বা কেন করল? সে ক্ষেত্রে কি পক্ষে ভোটদানের কারণে মন্ত্রীকে স্বীকার করে নিতেই হবে যে, তার সরকার অবস্থান বদল করেছে?

স্যরি, ব্যাপারটি এমন হবে না, কারণ ব্যাপারটি তাই নয়। কারণ মন্ত্রী সম্ভবত বলবেন, ‘আসলে হয় রাশিয়া না হলে ইউক্রেনের পক্ষ-বিপক্ষে ভোট দিতেই হবে - প্রস্তাবটিই এমন ছিল না। বাংলাদেশ পক্ষে ভোট দিয়েছে মানে বাংলাদেশ “সিভিলিয়ান সুরক্ষা’ আর ‘মানবিক সাহায্য অবাধ প্রবেশের’ পক্ষে ভোট দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো দেশের পক্ষে নয়।” কিন্তু কেউ যদি জানতে চান, এই অবস্থানের জন্য বাইডেনের আমেরিকা কি একটু খুশি হবে? এর জবাব হবে - অবশ্যই খুশি হবে! তবে এটি পরোক্ষে খুশি করা, তা-ও খেয়াল রাখতে হবে।

ইউক্রেনের সর্বশেষ অবস্থা কী

ইউক্রেনে যুদ্ধের সর্বশেষ অবস্থা হলো, এটা ইউক্রেনের দিক থেকে আরো অধৈর্য হয়ে উঠা এবং বাইডেনের হাত প্রায় ছেড়ে কালকেই রাশিয়ার সাথে বসে সব মিটমাট করে নেয়া। যদিও বাইডেন বা পশ্চিমা শক্তির সেদিকে মনোযোগ নেই। আর রাশিয়ার দিক থেকে এটি এক হঠাৎ ঝিমিয়ে পড়া অবস্থায় পড়েছে। আর এতে একটি ‘স্ট্যাটাস কো’ মানে, যে যে অবস্থায় আছে সেখানেই আটকে থাকার একটি চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ দু’সপ্তাহ আগের অবস্থার সাথে যদি তুলনা করি, বিশেষ করে আমেরিকার ‘এবিসি নিউজ’ টিভির সাথে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যেখানে নিজ দেশের ভাষায় সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তার কথা বলছি। ওই সাক্ষাৎকারের বক্তব্যের অভিমুখ যা ছিল তাতে এতদিন ইউক্রেন পরিস্থিতিতে একেবারে রাশিয়ান সেনা প্রত্যাহার না হলেও অন্তত লম্বা যুদ্ধবিরতি আর পুতিন-জেলেনস্কি দু’পক্ষকে সরাসরি ডায়ালগে বসতে দেখতে পেতাম। কারণ ওই সাক্ষাৎকার প্রচারের পরের দিন অন্তত দু’বার রাশিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের অবস্থান ইতিবাচক বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। মানে জেলেনস্কির সাক্ষাৎকার রাশিয়া ইতিবাচকভাবে নিয়েছে - এর স্বীকৃতি বলে ধরে নিতে পারি। তাহলে আবার এখন সব ঝিমিয়ে পড়া অবস্থায় বা স্ট্যাটাস কো - এমন বলছি কেন? কারণ এর পরে কোনো অগ্রগতি নেই - মানে এর কোনো ‘পরবর্তী’ নেই।

এমনকি ওই একই সময় রাশিয়ার তেল-গ্যাস না কিনে ইউরোপের কোনো বিকল্প নেই। ফলে তারা রাশিয়ান গ্যাস কিনবে বলে অন্তত তিনটি দেশ - ফ্রান্স, জর্মানি ও নেদারল্যান্ডসের প্রকাশ্য বক্তব্য দেখেছিলাম। অথচ সেসব বক্তব্যেরও আর কোনো ফলোআপ পরে আর দেখা যায়নি। বরং সর্বশেষ অবস্থান দেখা যাচ্ছে বাইডেনের এবং তা এখন সম্পূর্ণ বিপরীত। এবিসি নিউজের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে বলেছিলাম এর মধ্যে জেলেনস্কির কূটনৈতিক ডায়ালগের মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ করার আগ্রহ আছে। কিন্তু তাতে সবার আগে বাইডেন ও জেলেনস্কির, এ দুই প্রেসিডেন্টের ইমেজ বাঁচানোটাই হয়েছিল মুখ্য ইস্যু। সেটি নিশ্চিত হলে তবেই ওই যুদ্ধ সমাপ্তি ও ডিপ্লোম্যাটিক আলোচনা শুরু হতে পারে - এই ছিল আমেরিকান পরিকল্পনা।

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, হিসাবে এতে সব ঠিকঠাক থাকলেও বাইডেন সম্ভবত দেখছেন, এতে তার ইমেজ বাঁচানো যাচ্ছে না। কারণ এখন যদি বিনাযুদ্ধে ও কূটনৈতিক আলোচনাতেই যুদ্ধ শেষ করা যায় তাহলে যুদ্ধটা শুরু করার দরকার কী ছিল? সে প্রশ্ন কেউ না তুললেও বাতাসে তা হাজির হবেই। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, জেলেনস্কি এবিসি নিউজকে ইতোমধ্যেই বলে ফেলেছেন, তার আর ন্যাটোর কোনো সদস্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নেই। ব্যাপারটি অনেকটা শখ মিটে যাওয়ার মতো হয়ে গেছে। আর তিনি বলছেন, ইতোমধ্যেই তিনি ‘এই আকাঙ্ক্ষার প্রশ্নে নিজেকে কুল ডাউন করতে পেরেছেন। আর বুঝেছেন যে, ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়।’ আর এ পরিস্থিতিটাকেই বাইডেন নিজের জন্য হার হিসেবে দেখছেন!

বাইডেন এখন ইউরোপে

অতএব, বাইডেন ইউরোপ সফরে এসেছেন। অর্থাৎ জেলেনস্কি কিভাবে কত দ্রুত শেষ করতে চাইছেন অথবা সাদা চামড়ার শরণার্থীরা কত দ্রুত ঘরে ফিরতে চাইছেন - সেগুলো নয়, বাইডেনের চাওয়া এখানে ডমিনেট করবেই, এমন দশায়। তাই বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ইইউ হেড কোয়ার্টার-ব্রাসেলসে বসে বাইডেন বৈঠক করে গেছেন যার মূল বিষয় ইইউ সদস্যদের রাশিয়ান গ্যাসের বিকল্পের সন্ধান দেয়া শুধু নয়, একেবারে ব্যবস্থা করে দেয়া।

এতে ‘ত্রাতা’ বাইডেন যা করতে চাইছেন তা যেন উচ্ছ্বাস দেখিয়েই হাজির করতে হবে। তাতে এটি যে, আসলে প্রপাগান্ডা তা লুকিয়ে কাজটা করতে চাইলেও লুকানো থাকেনি। বিবিসি বাংলা আর আমাদের ‘প্রথম আলো’ সেই উচ্ছ্বাস তৈরি করতে তেমন শিরোনাম করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : রাশিয়ার বদলে এখন থেকে ইউরোপের গ্যাস আসবে আমেরিকা থেকে - এই হলো বিবিসি বাংলার শিরোনাম। আর তা দেখে বিচার-বিবেচনা ভুলে প্রথম আলোর শিরোনাম - ‘রাশিয়াকে হটাতে ইউরোপে গ্যাস দেবে যুক্তরাষ্ট্র’। প্রপাগান্ডায় আরো সরস দেখাতেই যেন ‘হটাতে’ শব্দটার ব্যবহার। শুনলে মনে হবে - হ্যাঁ, এবার ‘ঘ্যাগের ওষুধ’ পাওয়া গেছে! কিন্তু আসলেই কি তাই?

জবাব হলো - না, ঠিক তা নয়। বিবিসি বাংলার রিপোর্টের ভেতরেই তা নিয়ে খোলাসা করে কথা বলা হয়েছে। যেমন - ‘যুক্তরাষ্ট্র কি ইউরোপের চাহিদা মেটাতে পারবে? এই প্রশ্ন তুলে বিবিসি বাংলা নিজেই উত্তরটা দিয়ে দিয়েছে। বলেছে, ‘বিবিসি নিউজের অনলাইন ইউরোপ এডিটর পল কিরবি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। তিনি তুলে ধরেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি বড় চুক্তির ঘোষণা কিছু সময় আগে জানা গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ ব্যাপক বাড়ালেও, ইইউভুক্ত ২৭টি রাষ্ট্রের জন্য এটি সামান্য মাত্র।’ অর্থাৎ বাইডেনের কথায় বাকচাতুরী আছে।

এদিকে বাইডেনের ইউরোপ সফর নিয়ে ইংরেজি বিবিসি একটি রিপোর্ট করেছে ‘পাঁচ চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে এবং বলতে গেলে তা খুবই খারাপ রিপোর্ট না হলেও বাইডেনের জন্য কঠিন বাধাগুলোই তুলে আনা হয়েছে সেখানে। যেমন, প্রথম চ্যালেঞ্জটি হলো ‘ঐক্য দেখানো’। মানে হলো - ইউরোপের সাথে আমেরিকা যে ঐক্যবদ্ধ আছে তা দেখাতে হবে। অথচ ওখানেই বলা হয়েছে ‘যেখানে যত দিন যাচ্ছে ততই অনৈক্যের সম্ভাবনা বাড়ছে’।

আসলে বড় অনৈক্যই প্রকাশিত হয়ে গেছে। অথচ তেল-গ্যাস নিয়ে যতই আমেরিকা বিকল্প আছে বলে এটা-সেটা দেখাক না কেন, কথার মধ্যে বড় ফাঁক আছে। আর তা সামলাতে না পেরেই তো অনেক আগেই ইইউ নেতারা বিশেষত জার্মানির সোজা কথা - ‘অন্তত ২০২৭ সালের আগে রাশিয়ার ওপর থেকে জ্বালানি-নির্ভরতা কমানোর সুযোগ নেই।’ আর এ নিয়ে তবু বিবিসি বাংলা নিউজ প্রপাগান্ডার লাইন ধরে। এই প্রথমত বিবিসি বাংলার খবরে সুনির্দিষ্ট করে প্রকাশিত হয়েছে যে, ‘জার্মানি ও ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশের আপত্তির মুখে, রুশ তেল ও গ্যাস এখনো এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে। কারণ রুশ জ্বালানির ওপর, বিশেষ করে গ্যাসের ওপর, তাদের নির্ভরতা।’ অর্থাৎ ইউরোপের রাশিয়ান তেল-গ্যাস ক্রয়কে এখনো নিষেধাজ্ঞার বাইরেই রাখা এবং বিবিসি আরো জানিয়েছে, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বুধবারও বলেছেন, ‘রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে ইউরোপ অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়বে।’ এ ছাড়া রয়টার্স আরো সোজাসাপ্টা করে কথাটা এক এক্সপার্ট অ্যানালিস্টের বরাতে বলে দিয়েছে। লিখেছে, ‘সাধারণত একটি নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা চালু হতে দুই-তিন বছর লাগে। অতএব এই ডিলটা সম্ভবত উপস্থিত চালু সাপ্লাইকে নতুন দিকে নিয়ে যাওয়া যতটা না, এটা নতুন উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করার কথা বলেছে।’

এ ছাড়া ইউরোপ সফরে বাইডেনের আরেক গন্তব্যস্থল হলো পোল্যান্ড। হ্যাঁ, পোল্যান্ড যে এখন ২০ লাখ ইউক্রেনীয় রিফিউজি নিয়ে পেরেশান। বলা হচ্ছে - ‘সেটা নাকি এখন তার ছোট অর্থনীতিকেই ভেঙে ফেলতে উদ্যত।’ কিন্তু এই পোল্যান্ড ও পাশেই রোমানিয়া - এরা এখন ন্যাটোর সদস্য যারা আগে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বাফার রাষ্ট্র। মানে পশ্চিম ইউরোপ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য মাঝের বাফার রাষ্ট্র। যেটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন এরা। ২০১৪ সালের পরপরই ন্যাটোর সদস্য হয়ে গেছে অথচ তখন রাশিয়া কিছু বলেনি, তাহলে এখন কেন পুতিন ইউক্রেনের বেলায় এত আপত্তি করছেন? অথচ জবাবটা খুবই সহজ। আপনি তখনই বাধা দেন যখন আপনার সামর্থ্য-মুরোদ সংগৃহীত হয়েছে বলে আপনার মনে হয়। যেমন - ২০১৪ সাল ছিল আমেরিকার দিক থেকে কঠোর অবরোধ আরোপের বছর আর সেটাই আবার চীনের সাথে নয়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক শুরুর বছর। যেটা চীনে ইরানের ২৫ বছর তেল-গ্যাস সরবরাহের বিনিময়ে চীনের বিনিয়োগ পাওয়ার চুক্তি সেটা আসলে সর্বপ্রথম তৈরি হয়েছিল চীন ও রাশিয়ার মধ্যে। তাই ডলারশূন্য হয়েও বা ডলার থেকে বের করে দিলেও রাশিয়া পরে টিকে গিয়েছিল চীনের সাথে ওই অর্থনৈতিক চুক্তির কারণে। সোজা কথায়, ২০১৪ আর ২০২২ সালের রাশিয়া একই অর্থনৈতিক অবস্থায় নেই। এ কারণেই ২০১৪ সালে পোল্যান্ড-রোমানিয়াকে কিছু বলতে না পারলেও এখন ইউক্রেনের বেলায় পুতিন সোচ্চার।

যে কথা বলছিলাম, বাইডেনের আরেক গন্তব্যস্থল পোল্যান্ড কেন? আসলে আগেই বলেছি, বাইডেন ইউক্রেন ইস্যুতে কিছু না করে জেলেনস্কিকে যুদ্ধে নামিয়েছেন, এই অভিযোগে ধোলাই হয়ে যাওয়ার ভয় করছেন। মূলত এ জন্যই রাশিয়া-ইউক্রেন আপস আলোচনা শুরু করতে মরিয়া জেলেনস্কি প্রতিদিন সকালে উদাত্ত আহ্বান জানালেও তা ঘটছে না। তাই সেই অপবাদ ঘুচাতে তিনি ইউক্রেনকে দূর থেকে কিছু অস্ত্র ছুড়ে দিতে চান। কিন্তু পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন - পড়শি কোনো রাষ্ট্র এমন ‘পৌঁছে দেয়ার কাজ করলে’ সে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক কাজ করেছে বলে তিনি গণ্য করবেন। তাই বাইডেন নিজে সফর করে হয়তো পোল্যান্ডকে সাহসী করে কাজটা করাতে চাইছেন; এটাই মুখ্য কারণ।

আর সর্বশেষে, চীন যে গভীর মনোযোগে ডলারের বিকল্প হিসেবে চীনা মুদ্রা ইউয়ানকে দাঁড় করাতে চাইছে। আসলে এটাই ২০১৫ সাল থেকেই রাশিয়াকে সাথে নিয়ে শুরু করা এক চীনা পরিকল্পনা। আর ২০১৫ সাল থেকে এ জন্য যে, ওই বছরই আইএমএফ ইউয়ানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কারণ চীনা ইউয়ান আইএমএফের সব শর্তই তখন পূরণ করেছিল। ফলে অন্য চারটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা - ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও ইয়েনের সাথে পঞ্চম সমতুল্য মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু এখন ইউয়ানের সেই ধীরগতি ও বিকাশকেই চীন ত্বরান্বিত করতে চাইছে মাত্র। তখনই বলা হয়েছিল যে, চীন সৌদি আরব থেকে তেল কিনে তা ইউয়ানে পরিশোধ করতে পারলেই ইউয়ান অনেক আগেই বিশ্বাস ও আস্থাযোগ্য প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রা হয়ে যেতে পারে। স্বভাবতই এতে এটি বাইডেনের পাগলা পুতিনকে সাঁকো না নাড়ানোর মতো কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়ে যেতে পারে। আর সামনের নভেম্বরের মিডটার্ম থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত এসব কথা তুলেই প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প বাইডেনের পাবলিক রেটিং আরো নিচে নামানোর চেষ্টা করে যাবেন, বলাই বাহুল্য! এই ভয় বাইডেনকে তাড়া করছে- ইউরোপে দৌড়াদৌড়ি করছেন তিনি!

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com