২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খাল বা নালায় পড়ে মৃত্যু: ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ কতটা আছে?

খাল বা নালায় পড়ে মৃত্যু: ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ কতটা আছে? - সংগৃহীত

বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আবারও খালে পড়ে একটি শিশু নিখোঁজ হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো শিশুটির খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু এমন ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও শুধু চট্টগ্রামেই নালায় বা খালে পড়ে একাধিক মৃত্যু ঘটেছে। এরকম মৃত্যু হয়েছে রাজধানী ঢাকাতেও।

কিন্তু এরকম ঘটনা কেন বার বার ঘটছে? ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকার পাওয়ার সুযোগই বা বাংলাদেশে কতটা আছে?

চট্টগ্রামে চারমাসে চারজন নিহত
বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে খ্যাত চট্টগ্রামে গত চারমাসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে উন্মুক্ত নালা বা খালে পড়ে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদে নালায় পড়ে নিহত হন একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী।

এর আগে অগাস্ট মাসে জলমগ্ন নালায় পড়ে একজন ব্যবসায়ী নিখোঁজ হন। তার আগে ৩০শে জুন চশমা খালে যাত্রী বোঝাই অটোরিকশা পড়ে দুজন নিহত হন।

সর্বশেষ খালে পড়ে শিশুটির নিখোঁজ হওয়া ছাড়াও গত মঙ্গলবার নালায় পড়ে এক কলেজ ছাত্রের পা ভেঙেছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গণমাধ্যমে দেয়া এক বক্তব্যে বলছেন, ‘এটা ঠিক যে আগে কয়েকটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। তখন তো জলাবদ্ধতা ঠেকাতে মেগা প্রকল্পের ড্রেনের কাজ চলছিল, রোড আর নালা একাকার হয়ে গিয়েছিল। যারা কাজ করছিল, তারা কোনো ফেন্সিং দেয়নি।’
‘কিন্তু আর যাতে সেরকম কোনো ঘটনা না ঘটে, সেজন্য গতমাস থেকেই আমরা কাজ শুরু করেছি। ড্রেনগুলোর ওপর স্ল্যাব বসিয়ে দেয়া হচ্ছে।’

তবে সোমবার যে শিশুটি একটি খালে পড়ে নিখোঁজ রয়েছে, সেই শিশুটি বোতল আর খেলনা সংগ্রহ করার জন্য খালে নেমেছিল বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে খালগুলোয় কাজ চলছে। সেগুলো তাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হলে তারা বিপজ্জনক অংশগুলো শনাক্ত করে নিরাপত্তার উদ্যোগ নেবেন।

মি. চৌধুরী বলছেন, ‘বড় বড় খালের সব জায়গায় তো করা সম্ভব না, কিন্তু যেখানে নিরাপত্তা দরকার, সেখানে দেয়াল তুলে, না হলে লোহার গ্রিল দিয়ে, যেভাবে হোক একটা প্রটেকশনের ব্যবস্থা আমরা করবো।’

‘জবাবদিহিতা আর দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে’

চট্টগ্রামে নালায় পড়ে সবজি ব্যবসায়ী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তারা দুর্ঘটনার জন্য চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায় রয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, শহরের বিভিন্ন দায়িত্ব একাধিক সংস্থার ওপরে থাকলে সেখানে একটি সমন্বয়হীনতার এবং দায় এড়ানোর প্রবণতা তৈরি হয়। সংস্থাগুলো নিজেদের কাজ ঠিক মতো না করায় এরকম দুর্ঘটনা ঘটে, কিন্তু সেটির দায়ও কেউ নিতে চায় না। তবে সার্বিক দায়দায়িত্ব তো নগর প্রশাসনের ওপরেই পড়ে। মেয়র, সিটি কাউন্সিলের ওপরে পড়ে। তাদের আসলে জবাবদিহিতার অভাব, দায়িত্বে অবহেলা আর নগর পরিচালনায় প্রচণ্ড দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু এরকম দুর্ঘটনার দায়দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং তার কাউন্সিল, তাদেরকেই নিতে হবে।’

নালায় পড়ে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে যে রিট আবেদন করা হয়েছে, সেখানেও স্থানীয় সরকার, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বিবাদি করা হয়েছে।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, এরকম দুর্ঘটনা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করাও জরুরি। সেই দায়িত্বও স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

প্রতিকার বা ক্ষতিপূরণের সুযোগ কতটা আছে?
বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড বা অবহেলায় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলে উন্নত দেশগুলোতে আইনি প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ থাকে। তবে আইনজীবীরা বলছেন, বাংলাদেশের আইনে এসব ঘটনায় সরাসরি ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এটা আসলে পুরোটাই নেগ্লিজেন্সের একটা পার্ট, সেটা প্রমাণ করতে হয় টর্ট বলে একটি আইনি ধারণায়, যদিও বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট টর্ট আইন বলে কোনো আইন নেই। দেওয়ানি আইনে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়ে থাকে। টর্ট আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া। যুক্তরাজ্যে এই আইনের প্রয়োগ হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এই আইন নেই। দেওয়ানি আইনে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার সুযোগ থাকলেও নানা জটিলতার কারণে অনেকেই শেষপর্যন্ত অগ্রসর হতে চান না।

তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলো, একজন ব্যক্তি যখন ক্ষতিপূরণের মামলা করতে যাবেন, তাকে দাবীকৃত ক্ষতিপূরণের অংকের ওপর কোর্ট ফি দিতে হবে। পাঁচ লক্ষের টাকার ঊর্ধ্বে দাবি হলে প্রথমেই প্রায় ৬২ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। কিন্তু একজন রিকশাচালক, বা শ্রমজীবী ক্ষতির শিকার হলে এতো টাকা ফি দিয়ে, আইনজীবীর খরচ দিয়ে তো আদালতে মামলা করতে পারবেন না।’

তবে বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার ক্ষমতা উচ্চ আদালতকে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে অপারেশন ক্লিন হার্ট বিষয়ক রিটের হাইকোর্ট বিভাগ যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকার সময় কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারবেন। এই একই নীতি অবহেলার অন্যান্য ক্ষেত্রে আইনজীবীরা ব্যবহার করছেন।

যেমন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি চাপা পড়ে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আজিমপুর কলোনির দেয়াল ধসে শিশুর মৃত্যু, মিরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় অভিনেত্রী আশার মৃত্যু, চকবাজারে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকুণ্ডে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, এখন অনেকেই তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কারণে ক্ষতির শিকার হলে অনেকেই এখন ক্ষতিপূরণ দাবি করতে এগিয়ে আসছেন।

‘সবাই তো হাইকোর্টে আসতে পারেন না। এক্ষেত্রে যদি একটি সুনির্দিষ্ট আইন থাকতো, যাতে কেউ ক্ষতির শিকার হলে জেলাতেই অভিযোগ করতে পারবেন, তাহলে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা আরও অনেক বাড়ত, এই ধরনের অবহেলা বা ক্ষয়ক্ষতি বন্ধ হয়ে যেতো।’

এছাড়া ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় একটি খোলা পাইপের ভেতর পড়ে জিহাদ নামের একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনায় চার জনের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং আর্থিক জরিমানা করেছে আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে দফতরের প্রকৌশলী, ঠিকাদার রয়েছেন।

 

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
মোরেলগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান

সকল