২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বকশীগঞ্জ আ'লীগ সভাপতির দেওয়ানগঞ্জে কর্মসূচি : মারাত্মক উত্তেজনা

বকশীগঞ্জ আ'লীগ সভাপতির দেওয়ানগঞ্জে কর্মসূচি : মারাত্মক উত্তেজনা - ছবি : সংগৃহীত

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মোটরসাইকেল বিরাট বহর নিয়ে ব্যর্থ সফরের বিষয় নিয়ে দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ ও মারাত্মক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যেও অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার এনিয়ে সব মহলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের দিনে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ আসনের আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রার্থী ও বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বকশীগঞ্জ থেকে দেওয়ানগঞ্জে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পথিমধ্যে ঝালোরচর নামক স্থানে পুলিশ ওই বহরে বাধা দেয় এবং হেলমেট ও রেজিষ্ট্রেশন না থাকায় চারটি মোটরসাইকেল আটক করে। নূর মোহাম্মদ সেখান থেকে বহর নিয়ে বকশীগঞ্জে ফিরে যান। ১৫ আগস্ট আইন শৃঙ্খলা অবনতি হতে পারে গোয়েন্দা বিভাগের এমন তথ্যের ভিত্তিতে এ সময় বকশীগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে জানা যায়।

১৫ আগস্ট বকশীগঞ্জ আওয়ামীলীগ অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নূর মোহাম্মদ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের ইঙ্গিত বা নির্দেশে পুলিশ শোক দিবসের কর্মসূচিতে দিয়েছে।’

অপরদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী মো: আবুল কালাম আজাদ ওই অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, ‘ওই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নুর মোহাম্মদ সাহেব ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। আমি পাঁচবার নির্বাচিত এমপি। তাকে আমি প্রতিদ্বন্দী কিভাবে মনে করি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে। সেদিন তো শোকের দিন ছিল, বহর নিয়ে কর্মসূচি করার দিন নয়।’

এ ব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুন্নাহার শেফা জানান, আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যা করণীয় তাই করা হয়েছে সেদিন।

দেওয়ানগঞ্জ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নূর মোহাম্মদ সাহেবকে আমরা কোনো আমন্ত্রণ জানাইনি। শোকের দিনে তিনি বিরাট মোটরসাইকেল বহর নিয়ে শোডাউন করে কী বোঝাতে চেয়েছেন? বঙ্গবন্ধুর শাতাদাত বার্ষিকীর দিনে এটা কি সাজে? অতীতে তিনি আওয়ামী লীগের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন।’

উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে। এটা প্রশাসনের বিষয়। আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নুরুন্নবী অপু বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার দিন। পুরো জাতি সেদিন শোকে মুহ্যমান। ওইদিন নূর মোহাম্মদ সাহেব কী কারণে শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে দেওয়ানগঞ্জে ঢুকতে চাইলেন তা প্রশ্নের উদ্রেক করে। ইতোপূর্বে দেওয়ানগঞ্জে কত দুর্যোগ হয়েছে, হয়েছে কত সমস্যা, কই তিনি তো তাদের পাশে এসে কখনো দাঁড়াননি? ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন। শোকের দিনে যেখানে কোনো আলোচনা সভা বা কর্মসূচিতে হাততালি দেয়া নিষেধ, সেখানে তিনি বিরাট বহর নিয়ে শোডাউন করতে নেমে ছিলেন। এটা দুঃখ জনক।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মো: আসলাম হোসেন ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী, সাবেক ছাত্রনেতা বিকাশ কবীর ইমরান বলেন, ‘বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতীয় শোক দিবসে বকশীগঞ্জ উপজেলাতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার কথা, অথচ তিনি শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে কেন দেওয়ানগঞ্জ মুখে যাত্রা শুরু করেছিলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। কী তার উদ্দেশ্য তাও জানি না। আমরা তো তাকে কোনো আমন্ত্রণ জানাইনি।’

দেওয়ানগঞ্জে দু’দিন আগে দুটি খুন হয়েছে, এখানে উত্তেজনা বিরাজমান, এ অবস্থায় নূর মোহাম্মদ কেন এত বড় মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে শোডাউন করার চেষ্টা করলেন। এনিয়ে সব মহলে গুঞ্জন ও নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির কর্মসূচির ভণ্ডুলের বিষয়টি দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার সব জায়গায় আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement