২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ময়মনসিংহের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

ময়মনসিংহের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার - ছবি : সংগৃহীত

গাজীপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়ক মেরামতের কাজ দ্রুত শেষ করার আশ্বাসের পর ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলার পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় এই আশ্বাস দিয়েছে।

এর আগে পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী ময়মনসিংহ থেকে রাজধানীমুখী সব বাস চলাচল রোববার থেকে বন্ধ করে দিয়ে ছিলো জেলা মোটর মালিক সমিতি। দীর্ঘ দিনেও চলাচলের রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় বাস বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণা করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

রোববার সকাল থেকে ময়মনসিংহ থেকে মানুষজন ঢাকার আসার জন্য রওনা হলেও বাস না চলায় ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকেই বেশি ভাড়ায় পিকআপ, সিএনজিতে চলাচল করেছেন। আবার অনেকেই সরাসরি ঢাকায় আসতে বা ঢাকা থেকে বেরুতে না পেরে অসহায় অবস্থায় পড়েন।

তাদের অনেককে চলতে দেখা গেছে কাটা গাড়িতে। ময়মনসিংহের পাশাপাশি এই রুটে শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোণার মানুষজনও চলাচল করে। তারাও পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। শেরপুর থেকে ঢাকাগামী যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছে জেলা বাস-কোচ মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন।

ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ ধীরগতি হওয়ায় প্রতিবাদে ও দ্রুত কাজ বাস্তবায়নের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের বাস-কোচ মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন ডাক দিলেও রাতে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক করে ধর্মঘট স্থগিত করার কথা বলা হয়।

বিষয়টি রাতেই নিশ্চিত করেন শেরপুর জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ। কিন্তু পরে পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে রোববার সকাল থেকে আবার দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ঢাকাগামী যাত্রীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচলের জন্য আসা যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

শেরপুর জেলা বাস-কোচ মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুজীত ঘোষ বলেন, ‘আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে বাস-কোচ চলাচল বন্ধ রেখেছি। আবার নির্দেশ পেলে চালু করবো। আমাদের বাস চালানো দুরুহ হয়ে পড়েছে। ভাঙাচোরা রাস্তায় আমরা বাস-কোচ চালাতে পারছি না। প্রায়ই বিকল হয়ে যাচ্ছে গাড়ি। অতিরিক্ত তেল খরচ লাগছে।’

এ ব্যাপারে শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মোহাম্মদ শরিফুল আলম বলেন, ‘কে ধর্মঘট ডেকেছে, সেটা দেখবার বিষয় নয়, আমাদের কাজ ঠিকঠাক মতোই চলছে।’

তিনি জানান, ২০২০ সালের জুলাই মাসে শেরপুর জেলা অংশের ৩০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হলেই হলো। ৩০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে জামালপুরের মোল্লা ট্রাভেলসের পরিচালক রিফাত মোল্লা বলেন, ময়মনসিং হয়ে ঢাকাগামী বাস বন্ধ থাকায় তাদের টাঙ্গাইল রোডের বাসগুলোতে কিছুটা চাপ পড়েছে। সকাল থেকেই যাত্রীরা ওই রোডে চলাচল করছে। তারাও সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছেন।

মোটর মালিক সমিতি বলছে, ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। তবে গাজীপুর থেকে রাজধানীর মহাখালী যেতে সময় লাগছে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা।

ধীরগতির চলমান কাজে দুর্ভোগের পাশাপাশি পরিবহন মালিকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে শনিবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে ময়মনসিংহ থেকে রাজধানীমুখী সব গণপরিবহন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে জেলা মোটর মালিক সমিতি।

জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল করলেও ঢাকার দিকে আসেনি একটি বাসও। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোটর মালিক সমিতির কোচ বিভাগের সম্পাদক সোমনাথ সাহা।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত যান চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় অনিদির্ষ্টকালের জন্য এ রুটে বাস বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন মন্তা বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে দৈনিক ১০ হাজারের মতো গণপরিবহন চলাচল করছে। প্রতিদিন গাড়ির তেল বাবদ নষ্ট হচ্ছে দেড় কোটি টাকা। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে বৃহত্তর ময়মনসিংহের (ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল) গণপরিবহন যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ রাখা হবে।’

সে অনুযায়ী রোববার থেকে ধর্মঘটে যায় তারা।

এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি এবং ময়মনসিংহ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি মো. আমিনুল হক শামীম বলেন, ‘শুধু ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোকজনকে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাস্তার ওপর যত্রতত্র ট্রাক চাই না। প্রতিদিন সব মিলিয়ে ২ কোটি টাকার মতো নষ্ট হচ্ছে।

‘কিন্তু ১০ কোটি টাকা একসাথে খরচ করলেই রাস্তাটা চলাচলের উপযোগী হয়। তিন বছর মেয়াদি রাস্তা ছয় বছরেও কাজ শেষ না হওয়া হতাশা ছাড়া কিছুই নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘চলতি বছরের শেষের দিকে রাস্তার কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। কিন্তু যেভাবে কাজ চলছে, আগামী তিন বছরেও মনে হয় না শেষ করতে পারবে। কারণ ছয় বছরে কাজের উন্নতি হয়েছে ৬৩ দশমিক ২৭ শতাংশ।

‘২ হাজার ৩৭ কোটি টাকার কাজ এখন ৪ হাজার ২০০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই।’

 


আরো সংবাদ



premium cement