এমপির ব্যক্তিগত সচিবসহ জামালপুরে ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত

জামালপুরে নতুন করে জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের এমপি-এর ব্যক্তিগত সচিব, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা, পোশাককর্মী-সহ আরো ১৮ জন করোনভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে তাদের দেহে করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। এ নিয়ে জামালপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩২২ জনে। অন্যদিকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চারজন রোগী। জামালপুরে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১৩৬ জন এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে চারজন।

নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ছয়জন, ইসলামপুর উপজেলায় ছয়জন, সরিষাবাড়ী উপজেলায় দুইজন, মাদারগঞ্জ উপজেলায় দুইজন ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় দুইজন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুন) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জামালপুর স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে জেলার মাদারগঞ্জের করোনা পজিটিভ শনাক্ত এক যুবকের সন্ধান পাচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের এমপি ফরিদুল হক খান দুলালের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পরের দিন তার ব্যক্তিগত সচিবেরও করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

ইসলামপুর উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর (৩১), উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক (৪৯), জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী (৩০), পাথর্শী ইউপি চেয়ারম্যানের বাইকচালক (৩০) ও ৪৫ বছর বয়সের নারী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এই উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলায়। প্রতিদিন শেরপুর থেকে ইসলামপুরে কর্মস্থলে যেতেন তিনি। বর্তমানে তিনি শেরপুরের নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। গত ২৫ মে ইসলামপুরের ইউএনও’র করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে তার সংস্পর্শে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্য দপ্তরের বেশ কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল।

সদর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত ছয়জনের মধ্যে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ মেডিক্যাল অফিসার (৪০), একই হাসপাতালের ২৪ ও ২৭ বছর বয়সের দু’জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও একজন পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মী (৪০) রয়েছেন। এই চারজন জামালপুর করোনা আইসোলেশন সেন্টারে দায়িত্ব পালনের পর শহরের একটি আবাসিক হোটেলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হলেন। এছাড়া জামালপুর পৌরসভার চন্দ্রা বটতলা এলাকায় ঢাকা থেকে আসা পুরুষ পোশাককর্মী (৩৫) এবং গত সোমবার (১ জুন) জামালপুর শহরের বানাকুড়া এলাকায় একটি ছয়তলা আবাসিক ভবনে করোনায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির বাবার (৬৫) করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২ জুন) থেকেই লকডাউন করে ভবনটিতে বসবাসকারী অন্তত ৩৫টি পরিবারের চলাফেরায় কড়া নজরদারি করে আসছে স্বাস্থ্যবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আওতাধীন পাররাম রামপুর ইউনিয়নে কর্মরত ২৪ বছর বয়সের নারী স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পুরুষ স্বাস্থ্য সহকারী (৪০), সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া দক্ষিণপাড়ায় আগে আক্রান্ত হয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা এক ব্যক্তির ছোট ভাইয়ের স্ত্রী (৪০) ও পাশের বাড়ির একই বয়সের এক ব্যক্তি এবং মাদারগঞ্জ উপজেলার জোনাইল এলাকায় স্থানীয় দরিদ্র একজন কৃষি শ্রমিক (৫০) ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ২৮ বছর বয়সের এক যুবকের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

মাদারগঞ্জ হাসপাতালের ইউএইচএফপিও ডাক্তার সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ল্যাবের প্রতিবেদনে ওই যুবকের নাম থাকলেও সেখানে ফোন নম্বর লেখা নেই। হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহের রেজিস্ট্রার খাতায়ও ওই নামটি নেই। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি সিভিল সার্জনকেও জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাক্তার প্রণয় কান্তি দাস সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে জামালপুরের ১৩৩টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১৮ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ল্যাব থেকে আসা প্রতিবেদনে মাদারগঞ্জের এক যুবকের নামের সাথে ফোন নম্বর দেওয়া নেই। মাদারগঞ্জের নমুনা সংগ্রহের তালিকাতেও ওই নাম নেই। তাই তাকে খুঁজে বের করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ওই যুবক ছাড়া বাকি ১৭ জনকে উপসর্গের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত জামালপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৯৭ জন, সরিষাবাড়ী উপজেলায় ২৯ জন, মেলান্দহ উপজেলায় ৫৩ জন, বকশীগঞ্জ উপজেলায় ৩৯ জন, মাদারগঞ্জ উপজেলায় ১৮ জন, দেওয়ানগঞ্জে উপজেলায় ২৬ জন ও ইসলামপুর উপজেলায় ৬০ জন।

এদিকে জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলা থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৭৫৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সর্বশেষ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৫১ জনের।