১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা 

অর্ধেকের বেশি ভর্তিচ্ছুক বসতে পারবে না ভর্তি পরীক্ষায়

-

সমন্বিত পদ্ধতিতে দেশে প্রথমবারের মত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিতে একমত হয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ দেশবাসী এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায়। কিন্তু পদ্ধতিগত জটিলতায় এ উদ্যোগের আশানুরুপ ফল পাচ্ছন না ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তাদের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসতে দিচ্ছেন না সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে এ পদ্ধতির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভর্তিচ্ছুরা।

দেশে প্রথমবারের মত সমন্বিতভাবে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে ৩৫ হাজার ৫৫০ জন শিক্ষার্থী। তবে আবেদনকারী ৭৪ হাজার ৪৫৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রাথমিক বাছায়ে ইতোমধ্যেই বাদ পড়েছে ৩৮ হাজার ৯৫৬ জন। প্রাথমিক বাছাইয়েই এত বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীকে বাদ দেওয়ায় তুমুল প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মধ্যে।

আগামী ৩০ নভেম্বর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা। বাছাই করা হয়েছে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান জিপিএর ভিত্তিতে। এসএসসি ও এইচএসসি মিলে চতুর্থ বিষয় বাদে ন্যূনতম যাদের ৯.১৫ রয়েছে শুধু তারাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। যারা পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হয়নি তাদের আবেদন ফি বাবদ নেয়া এক হাজার টাকা ফেরত দেয়া হবে না।

জানা যায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সমন্বিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে রয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম জিপিএ ছিল এসএসসি ও এইচএসসি তে সর্বমোট ৭.০০, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬.৫, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭.৫০। কিন্তু এবারের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম জিপিএ ৯.১৫। বাদ পড়া ৩৮ হাজার ৯৫৬ জনের টাকার হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

যারা পরীক্ষা দিতেই পারবে না অথচ তাদের থেকে এত টাকা নেয়া হল কেন এবং জিপিএ যদি ৯.১৫ পর্যন্তই নেয় তাহলে ৭ পয়েন্ট হলেই আবেদন করার সুযোগ দিয়েছিল কেন তা নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। এছাড়াও ৭টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু এবার একসঙ্গে পরীক্ষা নিচ্ছে সেহেতু সিলেকশন রেঞ্জ নিয়েও চলছে বির্তক।

ভর্তিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ অবশ্যই ভালো কিন্তু চতুর্থ বিষয় ছাড়া ৯.১৫ মানা যায় না। এমন হলে সমন্বিত না থাকাটাই ভালো ছিল, বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তত পরীক্ষা দিতে পারতাম।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমার মনে হয় সমন্বিত এ ভর্তি পরীক্ষায় সবাইকে অংশ নিতে দেয়া উচিত। তবে যদি সকলকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া না হয়, সেক্ষেত্রে যারা অংশ নিতে পারছে না তাদেরকে আবেদনের টাকা ফেরত দেয়া উচিত।

আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, অনেক গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের আর্থিক অনটন কিংবা পারিবারিক কোনো সমস্যার কারণে এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফল ৯.১৫-এর কম অথচ ৯.১৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর তুলনায় অধিক মেধাবী ও যোগ্য। কিন্তু এই বাছাই প্রক্রিয়ায় অনেকেই যোগ্য হলেও তাদের বিকশিত হওয়ার পথ আগেই বন্ধ করে দেয়া হল। বিতর্কিত পদ্ধতির কারণে তারা তো অংশ নিতে পারবেই না আবার তাদের কাছ থেকে নেয়া আবেদনের টাকাও ফেরত দেয়া হবে না।

ভর্তিতে যারা অংশ নিতে পারবে না, তাদের কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দেয়া উচিত বলে মনে করেন সমন্বিত সাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক।

এর আগে ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনির্বাচিত পরীক্ষার্থীদের থেকে টাকা রাখার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাকৃবি শাখা ছাত্রফ্রন্ট। সকল পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া অথবা তাদের ১০০০ টাকা ফেরত দেয়া না হলে এর বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুশিয়ারি দেন তারা।

ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান জানান, এবারের পরীক্ষার বিষয়টি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্ষমতার ওপর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে। নির্বাচিত আবেদনকারীদের ফি ফেরতের বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষে উদ্বৃত থাকা সাপেক্ষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement