১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসলামী গান গেয়ে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ চান সাঈদ আহমদ

সাঈদ আহমদ - ছবি : নয়া দিগন্ত

মা-বাবা চাইতেন না তাদের সন্তান সঙ্গীতের সাথে নিজেকে জড়াক। তবুও তিনি পরিবারের সবার বাধাকে উপেক্ষা করে যোগ দেন কলরব শিল্পীগোষ্ঠীতে। কিন্তু, সঙ্গীত চর্চার জন্য টুকটাক যা খরচ হবে,তা পরিবার থেকে পাবেন না বলে জানিয়ে দেয় পরিবার। এতে কিছুটা হতাশ হন তিনি। স্বপ্ন ভঙ্গের আশঙ্কা করেন। ইসলামী সঙ্গীত জগতের প্রবাদ পুরুষ, কলরবের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ. যখন সঙ্গীতে তার অসাধারণ প্রতিভা দেখতে পান, বলেন- সঙ্গীত প্রশিক্ষণের খরচাপাতি তোমাকে দিতে হবে না। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হও আর মন দিয়ে গান শিখতে থাকো।

এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আজ ইসলামী সঙ্গীত জগতে তার নামটি জ্বলজ্বল করে। তার কোনো গান প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে ইসলামী সঙ্গীতপ্রেমী কোটি কোটি দর্শক তা দেখে ফেলেন। নিজেদের উচ্ছ্বাস ও ভালোলাগার কথা জানান।

বলছিলাম, ইসলাসিক মিউজিক ব্র্যান্ড কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর নির্বাহী পরিচালক সাঈদ আহমদের কথা৷ তিনি একাধারে শিল্পী, গীতিকার, সুরকার এবং বক্তা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মাওলানা আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.কে অনুসরণের চেষ্টা করেন বলে দাবি করেন তিনি। ওয়াজের সময় কথার ফাঁকে ফাঁকে ইসলামী সঙ্গীত গাওয়ার প্রচলন শুরু করেন মাওলানা আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.। কিন্তু, তখন বিষয়টি তত জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। বর্তমানে মাওলানা সাঈদ আহমদসহ অনেক বক্তাই ওয়াজে কথার ফাঁকে ফাঁকে ইসলামী সঙ্গীত গান। এতে শ্রোতারা আলোচনা শুনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

সাঈদ আহমদের জন্ম ঢাকায় হলেও গ্রামের বাড়ি গোয়াল বাথান মাগুরায়। বাবা সচিবালয়ের কর্মকর্তা আবদুল খালেক। সাঈদ কোরআন শরীফ হিফজ (মুখস্থ) করেন রাজধানীর ডেমরা এক মাদরাসায়। ২০১৩ সালে দাওরায়ে হাদীস ( মাস্টার্স) শেষ করেন জামিআ ইকরা মাদরাসায়। ইফতা (উচ্চতর ফিকহ) সমাপ্ত করেন যাত্রাবাড়ীর কাজলা থেকে। যাত্রাবাড়ী বাইতুল আকবার জামে মসজিদে তিনি জুমার নামাজ পড়ান।

এছাড়াও মাদরাসাতুল আসাদ আল ইসলামী নামে একটি মাদরাসাও প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। কলরবে যোগ দেন ২০০৫ সালে। তখন থেকেই ইসলামী সঙ্গীত নিয়ে নিয়মিত কাজ করছেন।

২০০৬ সালে তার প্রথম এলবাম “হক কথা” প্রকাশ হয় কলরব অডিও হাউস থেকে। ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এলবাম “চাই না এমন দেশ” এবং ২০১৩ সালে “বদলে যাও” প্রকাশিত হয়ে। ২০০৮ সালে কলরবের সহযোগী পরিচালকের দায়ীত্ব দেন স্বয়ং আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.।

সাঈদ আহমদের সাড়া জাগানো সঙ্গীতের তালিকায় রয়েছে, "আমি দেখিনি তোমায়, চোখের তারায়", "রুখতে হবে দাজ্জাল", "বিশ্বনবীর অপমানে যদি" "ফেসবুক" এবং " কেমন মুসলমান"।

এছাড়াও তার বেশিরভাগ সঙ্গীত নিয়ে ইসলামী সঙ্গীত অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সাঈদ আহমদ বর্তমানে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের বিখ্যাত শিল্পীদের সাথে ইসলামী সঙ্গীত প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। যার কাজ চলমান। অচিরেই ওইসব সঙ্গীত আলোর মুখ দেখবে বলে জানান তিনি। কলরব শিল্পীগোষ্ঠীকেও তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করাতে চান।

প্রতিবেদক মুহাম্মদুল্লাহর সাথে কথা বলার এক ফাঁকে তিনি জানান ইসলামী সঙ্গীত নিয়ে তার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার কথা। তিনি বলেন, আমি চাই ভবিষ্যতে বাংলাভাষী সব দেশের ও সব বর্ণের মানুষের কাছে ইসলামী সঙ্গীত জনপ্রিয় হোক। আমাদের ইসলামী সঙ্গীতের কথায় সাধরাণত আল্লাহ-রাসূলের প্রশংসার পাশাপাশি নীতি কথাই বেশি থাকে। যা সমাজ পরিবর্তনে অনেক ভূমিকা রাখে বলে আমার বিশ্বাস।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক ভাইবোন নিজেকে মোমিন-মুসলমান দাবি করেও অনৈসলামিক নিষিদ্ধ গান বাদ্যে আসক্ত। এটা অত্যন্ত দুঃখ ও আশঙ্কার কথা। মানুষকে অনৈসলামিক গানের আসক্তি থেকে ফিরিয়ে ইসলামী বৈধ গানে অভ্যস্ত করে তোলাও আমাদের কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর লক্ষ্য। এ জন্যই আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, একদিন ইসলামী গানের মাধ্যমে অপসংস্কৃতি বিদূরিত হয়ে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে।


আরো সংবাদ



premium cement