১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুহাম্মদ বদরুজ্জামান : ইসলামি সঙ্গীত জগতে এক উদ্যমী নাম

মুহাম্মদ বদরুজ্জামান -

বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে ইসলামী সংস্কৃতি। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মোকাবেলায় বাংলাদেশে ইসলামী সংস্কৃতি চর্চা মানুষের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে বেশ ভূমিকা রেখেছে এবং তা আজও চলমান।

বাংলাদেশে ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা করেছেন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আমরা যদি একদম ছোট করে কয়েকজনের নাম নিতে চাই; তাহলে প্রথম দিকে যার নাম বলতে হবে তিনি হলেন- মরহুম মাওলানা আইনুদ্দীন আল আজাদ রাহ.। তিনি ছিলেন ইসলামকেন্দ্রিক সংস্কৃতির অঙ্গনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সময়ে সময়ে তার সুললিত কণ্ঠে শোনাতেন ইসলামের সাম্য ও আদর্শের বাণী। তিনি তুলে ধরতেন সমাজের নানা অবিচার ও অসঙ্গতি। বাতিল ও অপসংস্কৃতির মোকাবেলায় সুস্থ ও নির্মল সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে তিনি নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গিয়েছেন মৃত্যু অবধি।

কিশোর ও যুবসমাজকে পাশ্চাত্যের উৎকট সংস্কৃতি থেকে রক্ষার জন্য গড়ে তুলেছিলেন মননশীল এক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘কলরব’।

ইসলামী সংস্কৃতি নিয়ে তার মিশন এবং ভিশন কেবলমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন; কলরবেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি তৈরী করে গিয়েছেন অসংখ্য অগণিত সংস্কৃতিকর্মী। তার হাত ধরে বেড়ে উঠেছে অনেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। তবে তার একান্ত পরিচর্যা এবং তার কাছাকাছি থেকে হাতেগোনা যে দু'চারজন ব্যক্তি ইসলামী সংস্কৃতিকে তার মতো করে ভেবেছেন এবং তার স্বপ্নকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আজ প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের সিনিয়র শিল্পী ও যুগ্ম নির্বাহী পরিচালক এবং হলি টিউনের প্রধান নির্বাহী মুহাম্মদ বদরুজ্জামান।

লক্ষ লক্ষ শ্রোতা তাকে মুহাম্মদ বদরুজ্জামান হিসেবে চিনলে এবং জানলেও; জন্মদাতা মা-বাবা এবং পাড়া-পড়শি আত্মীয়স্বজনের কাছে তিনি আজও সেই আদুরে উজ্জ্বল হিসাবেই সমাদৃত। বিলকুল ছোট থেকেই যিনি ঠোঁট নাড়াতেন ইসলামী সংগীতের তালে তালে। হাঁটতে, বসেতে, ঘুমোতে কিংবা ঘুরোঘুরি করতে, সবসময়ই তিনি ভাঙা ভাঙা সুরে গান গাইতে পছন্দ করতেন।

মুহাম্মদ বদরুজ্জামানের সঙ্গীত চর্চা শুরু ২০০৩ সাল থেকে।

তবে তার প্রথম অ্যালবাম “বিমুগ্ধ লগন”-এর মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিমুগ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে তার পদচারণা হয় ২০০৮ সাল থেকে। তারপর থেকে তিনি একে একে বেশ কিছু জনপ্রিয় ইসলামী সঙ্গীত শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন। মুহাম্মদ বদরুজ্জামান; শুধু সংগীত গেয়ে থাকেন বিষয়টি এমন না; সাথে সাথে তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের এযাবতকালের শ্রোতাপ্রিয় অনেক সঙ্গীতের সফল একজন গীতিকার ও সুরকার।

বলা হয়ে থাকে- বাংলাদেশে ইসলামী সঙ্গীতের উন্নত অডিও নির্মাণ; ভিডিও মেকিং, পছন্দনীয় লোকেশন নির্বাচন এবং সর্বোপরি একটি মানসম্পন্ন ইসলামী সঙ্গীত তৈরীর ধারা শুরু হয়- মুহাম্মদ বদরুজ্জামান এর হাত ধরেই। উদাহরণস্বরূপ “সাল্লি আলা মুহাম্মাদ হাসবি রাব্বি জাল্লাল্লাহ,” “একটি বাংলাদেশ” “সালাত” “সালাম” এবং “যিকরুল্লাহ” সঙ্গীত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ইসলামী সংস্কৃতি এবং কলরবকে এগিয়ে নিতে মুহাম্মদ বদরুজ্জামান যখন যা কিছু বিসর্জন দিতে হয়েছে; তার থেকে কখনো পিছিয়ে থাকেননি। শত বাধা-বিপত্তি এবং প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে ইসলামী সংস্কৃতির উন্নয়নের যাত্রাকে অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে 'চলার পথে' শিরোনামে তার একক একটি সঙ্গীতের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেন হলি টিউন ইউটিউব চ্যানেলের।

তারপর থেকে জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের সাথে একটি চুক্তির মধ্যে দিয়ে এই চ্যানেলে কলরবের সকল শিল্পীরা ইসলামি সঙ্গীত প্রকাশ করা শুরু করেন। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে থাকে চ্যানেলটি। উন্নত ভিডিও মেকিং, মনোরম লোকেশনে দৃশ্যায়ন, শ্রুতিমধুর রেকর্ডিং ও ব্যাপক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে চ্যানেলটি শ্রোতাদের হৃদয়মন জয় করা শুরু করে। যা এখন প্রায় চল্লিশ লাখ সাবস্ক্রাইবার সংখ্যায় পৌঁছেছে।

মুহাম্মদ বদরুজ্জামান কেবলমাত্র একজন ইসলামী সঙ্গীত শিল্পী নয়, পাশাপাশি তিনি একজন তরুণ উদ্যোক্তা এবং সফল সংগঠক ।

মাদরাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হওয়ার পাশাপাশি আল হাইয়াতুল উলিয়া বোর্ডের অধীনে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন এবং পাশাপাশি তিনি কৃতিত্বের সাথে দাখিল আলিম পাশ করে অনার্স সম্পন্ন করেন।

ব্যক্তি মুহাম্মদ বদরুজ্জামান ইসলামী সংস্কৃতির সম্ভাবনা নিয়ে অনেক আশাবাদী। তাই তো সে লক্ষ্যে তিনি বিরামহীনভাবে সমাজ পরিবর্তনের প্রত্যয় নিয়ে শ্রোতাপ্রিয় অসংখ্য অগণিত সঙ্গীত নির্মাণ করেই যাচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement