২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পাকিস্তানে গান গেয়ে ভারতে নিষিদ্ধ মিকা সিং

মিকা সিং - ছবি : সংগৃহীত

পাকিস্তানে বিয়েবাড়িতে গান গাওয়ার ‘অপরাধে’ ভারতে জনপ্রিয় গায়ক মিকা সিংকে মঙ্গলবার নিষিদ্ধ করেছে অল ইন্ডিয়া সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন। জানা গেছে, পাকিস্তানের করাচি শহরে ওই বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন সাবেক পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফের এক ঘনিষ্ঠ।

মঙ্গলবার জারি হওয়া এক বিবৃতিতে সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুরেশ শ্যামলাল গুপ্ত জানান, “এআইসিডব্লুএ তার (মিকার) সমস্ত চিত্র প্রযোজক সংস্থা, সঙ্গীত পরিবেশনা সংস্থা, এবং অনলাইন সঙ্গীত পরিবেশনা সংস্থার সঙ্গে কোনোরকমভাবে যুক্ত হওয়ার বিরুদ্ধে বয়কট ঘোষণা করছে।”

এছাড়াও মিকার বিরুদ্ধে নিঃশর্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাকে কোনো ছবিতে কাজ করা বা কোনো বিনোদন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সই করার পথও বন্ধ করে দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এআইসিডব্লুএ নিশ্চিত করতে চায় যে ভারতে কেউ মিকা সিংয়ের সঙ্গে কাজ করবেন না, এবং যদি করেন, তবে আদালতে আইনি পদক্ষেপের জন্য তৈরি থাকতে হবে। দুই দেশের মাঝে যখন অশান্তির আবহাওয়া তুঙ্গে, তখন রাষ্ট্রের সম্মানের চেয়ে টাকা বড় হলো মিকা সিংয়ের কাছে।” অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের আবেদনও জানানো হয়েছে।

এর আগে জানা যায়, ৮ অগাস্ট করাচিতে এক পাকিস্তানি কোটিপতি ব্যবসায়ীর মেয়ের বিয়েতে গান করেন মিকা সিং। বিয়েতে আমন্ত্রিত কিছু অতিথি মিকার পারফরম্যান্সের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। পাকিস্তানি সংবাদপত্র ‘ডেইলি জং’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিয়ের বর মিকার বড় ভক্ত হওয়ায় মূলত তার আবদার রাখতেই মিকার ‘লাইভ পারফরম্যান্সের’ আয়োজন করেন তার শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। শ্বশুরের উচ্চ পর্যায়ের চেনাশোনার সুবাদে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স এবং ভিসাও চলে আসে মিকা এবং তার ব্যান্ডের জন্য। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিকা এই অনুষ্ঠানের জন্য পেয়েছেন ১৫০,০০০ মার্কিন ডলার, ভারতীয় হিসেবে যা প্রায় ১০ কোটি ৭ লক্ষ রুপি।

কিন্তু জনপ্রিয় এই পাঞ্জাবি গায়কের এহেন আচরণে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন তার ভারতীয় ভক্তরা। টুইটারে এক ফ্যান লেখেন, “আপনার লজ্জা হওয়া উচিত, বিশ্বাসঘাতক।” আরেক ফ্যানের কথায়, “মিকা সিং পাজি (দাদা), আমরা ভারতীয়রা আপনাকে এত ভালোবেসেছি…আর এখন এই অবস্থায়, যখন পাকিস্তান আমাদের সঙ্গে সব ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, সীমার ওপার থেকে সন্ত্রাসী পাঠাচ্ছে, আমাদের মধ্যে যখন এত টেনশন, কেন আপনি পাকিস্তানে গেলেন অনুষ্ঠান করতে? ভারতের চেয়ে ক’টা টাকা বড় হলো?”

অন্যদিকে, পাকিস্তান পিপলস পার্টির বিরোধী দলনেতা সৈয়দ খুরশিদ শাহ দাবি জানিয়েছেন, বর্তমানের কূটনৈতিক এবং ব্যবসায়িক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ভারতীয় গায়ক এবং তার ১৪ জনের দলকে কীভাবে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স এবং ভিসা দেয়া হলো, তা তদন্ত করে দেখা উচিত পাকিস্তান সরকারের। “ভারতের ছবি, নাটক, টিভি-র অনুষ্ঠান, সবকিছু এখন নিষিদ্ধ। পাকিস্তান তার অবস্থান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে ভারত সরকারকে। ভিসা যদি এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগে জারি করা হয়েই থাকে, সেগুলো বাতিল হওয়া উচিত ছিল,” বলেন শাহ।

উল্লেখ্য, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করা, এবং রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় পাকিস্তান। কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটানো এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করা ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেনটিও বাতিল করে দেয় পাকিস্তান।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস


আরো সংবাদ



premium cement