১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুঁজির নিরাপত্তায় প্রয়োজন বিনিয়োগসচেতনতা

-

অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। অন্যান্য সূচক উন্নতির দিকে ধাবিত হলেও অর্থনীতির একটি খাতই নিম্নগতিতে চলছে, তা হলো পুঁজিবাজার। দীর্ঘ দিন হলো পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতি কাটছে না। পুঁজির নিরাপত্তায় অনেকেই বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে। অপেক্ষা করছে সুদিনের। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন চলবেই। সুফল পেতে হলে প্রয়োজন উপযুক্ত খাতে বিনিয়োগ। এ জন্য বিনিয়োগকারীদেরও সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ শিক্ষা প্রয়োজন। সুশাসনের প্রয়োজনে পুঁজিবাজারে বিও হিসাব খুলতে বিনিয়োগ শিক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করলে ইতিবাচক ফল আসবে।
অপর দিকে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ কোম্পানিগুলো ভালো মুনাফা করলেও বিনিয়োগকারীদের তার অংশ দিচ্ছে না। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক কর্মতৎপরতা ও আর্থিক চিত্র তুলে ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এখানে বিভিন্ন কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদান, মুনাফা ও ইপিএসসহ বিভিন্ন তথ্য থাকে। তা বিশ্লেষণ করেও বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নেন কোন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন। এ ছাড়া কোম্পানির তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে বিভিন্ন ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান। ডিএসইর একটি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুাযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ২২ শতাংশই বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এসব কোম্পানির মধ্যে ২০১৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার সংখ্যাই বেশি।
বছরের পর বছর কাক্সিক্ষত মুনাফা না পেয়ে হতাশ হয়ে বাজার ছাড়ছে অনেক বিনিয়োগকারী। বিভিন্নপর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে তার আর্থিক তথ্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানা উচিত। কিন্তু বাজারে শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা একেবারেই কম। যারা আছে, তারাও চলে যাচ্ছে। এই সুযোগে অসাধু বিনিয়োগকারীরা শেয়ার দরে কারসাজি করে মুনাফা করছে। এটি নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর উপায় এখনো বের করতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এতে মূলধারার বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বিনিয়োগকারী প্রথমেই নিজের বিনিয়োগকে সংরক্ষিত করতে চায়। তারপরে মুনাফা। কিন্তু ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীকে সচেতন করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোও মাঝে মাধ্যেই বিনিয়োগ নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করতে পারে। এর বাইরে শুধু বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়েই একটি প্লাটফর্ম তৈরি হতে পারে। বৃহৎ স্বার্থে সরকারও সেখানে অর্থ বরাদ্দ দিতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (সিএসআর) এর অর্থও ব্যয় করা যেতে পারে সেখানে।
বাজারের গভীরতা বাড়াতে প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ আনতে পারে শুধু বিনিয়োগ শিক্ষায় দক্ষরাই। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল থাকা রাখতে হলে বিদেশীদের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে হবে। ভালোমানের কোম্পানি তালিকাভুক্তি করতে হবে।
বিনিয়োগ শিক্ষা না থাকায় অল্পতেই বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি অস্থির হয়ে পড়ে। তাদের অস্থিরতার কারণেই বাজারের বিভিন্ন সূচকের পতন ঘটে দ্রুত। এ থেকে একটি চক্র ফায়দা লোটার চেষ্টা করে সব সময়ই। কৃত্রিমভাবে বাজারের খারাপ পরিবেশ তৈরি করে। তাদের কবলে পড়ে পতনের দিকে চলে যায় বাজার। তখন পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উৎকণ্ঠা বাড়ে।
বিনিয়োগকারীরা এই পতনের জন্য বিএসইসির সঠিক তদারকি নেই দাবি করে ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। কিন্তু কোনো প্রতিকার মেলে না। সাম্প্রতিককালের বাজার চিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিবাজার কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। ফলে তখন বাজারে আসে নানা শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু বছরের শেষদিকে নানা ইস্যুতে বাজার পতন শুরু হয়। চলতি বছরে তা আরো ভয়ানক রূপ নেয়। ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে অনবরত। ফলে বেকায়দায় পড়ে বিনিয়োগকারীরা।
আগের চেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি বৃদ্ধি হওয়ায় সতর্ক হয়েছে কারসাজি চক্রের সদস্যরা। আগে শুধু নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মিলে এ কাজটি করত। এখন নিত্যনতুন পরিকল্পনা আঁটছে তারা। তাদের কূটকৌশলে পেরে উঠতে পারছে না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। প্রাতিষ্ঠানিকরা এটি সামাল দিতে পারলেও ক্ষুদ্ররা পারছে না।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করে বাজারের উন্নয়নে সরকারকেই আগ্রহী হতে হবে। এ জন্য কোম্পানিগুলো নিয়ে একটি জাতীয় প্লাটফর্ম তৈরি করতে পারে সরকার। যারা শুধু বিনিয়োগ শিক্ষা দেবে। এই বিনিয়োগ শিক্ষার মাধ্যমে তারা নিজেদের বিনিয়োগকে ঝুঁকিমুক্ত করবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বাজার উন্নয়নে যার যার অবস্থান থেকে নীতি সহায়তা ও দিক নির্দেশনা দেবে।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারের পতনের পর থেকে বিনিয়োগকারীরা অল্পতেই আঁতকে ওঠে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে। এ জন্য এই বাজারে বিনিয়োগকারীদের বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আনতে এমন একটি উদ্যোগ সময়ের দাবি। এ জন্য একটি আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
এই প্লাটফর্ম বাজার ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করবে, মতবিনিময় করবে। অসাধু বিনিয়োগকারীদের তৎপরতা কিভাবে বাজারে কমানো যায় তা নিয়েও কাজ করবে। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক, সভা ও পর্যালোচনা করবে। এতে বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়নের জন্য বহুমুখী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সুষ্ঠুভাবে সম্ভব।


আরো সংবাদ



premium cement
সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’

সকল