১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি
`

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা

খোলাবাজারে তীব্র ডলার সঙ্কট : ১৩ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব
-

আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলার বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু নির্ধারিত এ দর বেশির ভাগ ব্যাংক মানছে না। কোথাও ডলারের লেনদেন নেই এই নির্ধারিত দরে। ব্যাংকভেদে প্রতি ডলারের জন্য সর্বোচ্চ ১১৭ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। আর খোলা বাজারে ডলারের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। খোলা বাজারে ক্ষেত্রবিশেষে প্রতি ডলারের জন্য ১২০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। ব্যাংক ও খোলা বাজারের এই অস্থিরতা কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। গতকাল বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করায় ১৩ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে। এর আগে ৮টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। ৭টির লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। ১০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। কিন্তু এর পরও অস্থিরতা কাটছে না। বরং বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ডলারের সরবরাহ কমে গেছে। আগে যে হারে ডলার আহরণ হতো এখন তা হচ্ছে না। অথচ চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স আগের মতো আসছে না। আগে যেখানে চাহিদার একটি বড় অংশ জোগান দেয়া যেত রেমিট্যান্স দিয়ে। কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যমান চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এটাই বাস্তবতা। এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, অনেক গ্রাহক ব্যাংকে আসছেন তাদের শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য। কাঁচামাল আমদানি করতে না পারলে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে তারা বেশি দামে হলেও ডলার সংগ্রহ করতে বলছেন। এখানে ব্যাংকগুলো তো অসহায়। কারণ, একদিকে ডলার সঙ্কট, আরেক দিকে ভালো গ্রাহককে ব্যাংকে ধরে রাখা। বাধ্য হয়ে যেসব ব্যাংকের কাছে ডলার আছে তাদের কাছ থেকে বেশি দামে ডলার কিনে গ্রাহককে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। দায় বহন করছে গ্রাহক। এখানে নির্ধারিত দর মানা হচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তদন্তে এসে এসব অসঙ্গতি দেখে ব্যাখ্যা তলব করছে। অথচ বাস্তবতার নিরিখে ব্যাংকগুলো নির্ধারিত দর অনুসরণ করতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস এসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) যৌথ সিদ্ধান্তে ডলারের দর নির্ধারণ করছে। আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলার নির্ধারণ করেছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা এবং আমদানিতে ১১০ টাকা। কিন্তু এই দর বেশির ভাগ ব্যাংকই মানছে না। কোনো কোনো ব্যাংক বেশি দামে ডলার কিনছে। আবার বেশি দামে তা বিক্রি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিতে ১১৬ টাকা থেকে ১১৭ টাকায় লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ১৩ ব্যাংকের কাছে ব্যাখা তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ ব্যাখ্যার জবাব দিতে বলেছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীর কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে অন্য ব্যাংকগুলো। গতকাল ডলার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচায় সতর্ক অবস্থানে ছিল।

এদিকে, খোলা বাজারে ডলারের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ৮টি প্রতিষ্ঠানে সিলগালা, ৭টির লাইসেন্স স্থগিত করা ও ১০টির কাছে ব্যাখ্যা তলব করায় গতকাল খোলা বাজারে তেমন ডলার লেনদেন হয়নি। এমনি একটি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থাধিকারী গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এমনিতেই ডলার পাওয়া যাচ্ছে না, এর ওপর নানা হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। এ কারণে তিনি গতকাল মতিঝিলে মানি এক্সচেঞ্জে যাননি। তবে, যারা লেনদেন করছেন এমন একটি মানি চেঞ্জারের কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আন্তঃব্যাংক থেকে দেড় টাকা বেশি দরে মানি এক্সচেঞ্জগুলোর ডলার লেনদেন করার কথা। সে হিসেবে ১১১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১২ টাকা ৫০ পয়সার বেশি দরে লেনদেন করার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই দরে তারা ডলার কিনতে পারছেন না। যদি এই দরে ডলার কিনতে না পারেন, তাহলে বিক্রি করবেন কিভাবে। তারা বেশি দরে ডলার কিনে সামান্য লাভে বেশি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। যেমন, গতকাল ১১৭ টাকা দরে ডলার কিনে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, নীতি-নির্ধারকরা যদি আমাদের কম দামে ডলার সংগ্রহের নিশ্চয়তা দিতে পারেন বা ব্যবস্থা করতে পারেন তাহলে আমরা কম দরেই ডলার বিক্রি করতে পারব। অন্যথায় আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। ইতোমধ্যেই অনেকেই বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা চালু রেখেছেন তাদের সামনেও আর কোনো পথ খোলা নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement