২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মিরসরাইয়ে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে লাভজনক সূর্যমুখী চাষ

সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের
মিরসরাইয়ে কাটাছরা এলাকায় সুর্যমুখী ফুলের বাগানে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ওমর শরীফ : নয়া দিগন্ত -


সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে আরো উৎসাহিত হয়ে উঠবেন বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
প্রকৃতিতে অসাধারণ এক রূপবান উদ্ভিদ সূর্যমুখী, গুণেও অনন্য। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান থাকে, সূর্যমুখীতে তা নেই। উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। আমাদের খাদ্য তালিকায় সয়াবিন অথবা সরিষার তেল বহুল ব্যবহার করে থাকি। এসব তেল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সূর্যমুখী ফুল থেকে যে তেল পাওয়া যায় তা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।


পুষ্টিবিদদের তথ্যমতে, সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে অলিক অ্যাসিড। সূর্যমুখীর তেলে আছে শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাট। আরো আছে কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ও পানি। সূর্যমুখীর তেল সম্পূর্ণ ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলমুক্ত। আছে ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, আছে মিনারেল। মুখের যতেœ ও দাঁতের জন্য উপকারী একমাত্র তেল। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। চমৎকার এনার্জির উৎসও সূর্যমুখীর তেল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দিগন্তজুড়ে সূর্যমুখী ফুলের হাসি চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। এ ফুল দেখতে আর সূর্যমুখী বাগানে নিজেদের ছবি, সেলফি তুলতে নানা বয়সী সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ প্রায় প্রতিদিন ভিড় করছেন।
মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অপার। কৃষি বিভাগ সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যমী কৃষকের হাত ধরে মিরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ১২ একর জমিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের।
উপজেলার মধ্য কাটাছরা এলাকায় তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ওমর শরীফের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চার দিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে তাতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান।


এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় কাড়বে। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে।
তরুণ উদ্যোক্তা ওমর শরীফ বলেন, আমি এক একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুলের জমি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে।
ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছে ফুল ধরেছে। আশা করি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারব ইনশা আল্লাহ। কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে ধানের পরিবর্তে আগামী বছর আরো জমি বাড়িয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের।

এ ছাড়া সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত।
সূর্যমুখী চাষি নঈম উদ্দিন জানান, কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী নিয়ে এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষাবাদ করেন। এ পর্যন্ত তার প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, বিক্রির সম্ভাব্য আশা করছেন ২০-২২ হাজার টাকা। তবে আধুনিক মেশিন থাকলে হয়তো এই সূর্যমুখী ভাঙিয়ে এর থেকে পাওয়া তেল নিজে ব্যবহার করতেন অথবা বাজারজাত করতেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, এ বছর পুরো উপজেলায় ১২ একর জমিতে প্রায় ৩০ জন কৃষক সূর্যমুখী চাষাবাদ করেছেন। এর ভেতর কৃষি অফিস কর্তৃক ২৫ জনকে প্রণোদনা এবং পাঁচজনকে প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। তবে আগামী বছর থেকে এর সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement