১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইউক্রেনের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান ৪২ দেশের

-

ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা এলাকায় ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সেখান থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের ডাক দিয়েছে ৪২টি দেশ। রয়টার্স।
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার কারণে ধ্বংসলীলা ও সাধারণ মানুষের মৃত্যুর অনেক ঘটনা ঘটছে। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে রাশিয়ার দখল করা এলাকার মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু কেন্দ্রে যদি কোনো বিপর্যয় ঘটে, তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।
গত রোববারও জাপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে এনেরহোডার শহরে জোরালো সংঘর্ষ ঘটেছে। রোববারের ওই সংঘর্যের জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। রাশিয়ার সূত্র অনুযায়ী, ‘ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদীরা’ ওই এলাকায় হামলা চালিয়েছে।
অন্য দিকে দিমিত্রো অর্লভ শহরের ইউক্রেনীয় মেয়র রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘হত্যাকারী প্ররোচনা’র অভিযোগ করেছেন। রাশিয়া পরমাণু কেন্দ্রটিকে ‘দুর্গ’ হিসেবে ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে বলেও ইউক্রেন সমালোচনা করছে। অবশ্য ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সরাসরি পরমাণু কেন্দ্রের ওপর হামলার অভিযোগ করছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ৪২টি দেশ অবিলম্বে সেখান থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, নরওয়ে, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও অন্যান্য কয়েকটি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আশপাশের এলাকা থেকে রুশ সৈন্য ও অন্যান্য অননুমোদিত ব্যক্তিদের অপসারণ দাবি করে। অবশ্য গোটা ইউক্রেন থেকেই রুশ সৈন্য সরানোর দাবিও করেছে এই দেশগুলো। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পরিচালক সংস্থা ও ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ পরমাণু কেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ আবার গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন করতে পারে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ সেখানে পরিদর্শন করে নিরাপত্তাব্যবস্থার ওপর নিয়মিত নজর রাখতে পারবে।
এ দিকে রাশিয়ার শুভবুদ্ধির ওপর আশ্বাস না রেখে আইএইএর বিশেষজ্ঞরা জাপোরিঝিয়া পরমাণু কেন্দ্র পরিদর্শনের পরিকল্পনা করছেন। তবে জাতিসঙ্ঘ, রাশিয়া ও ইউক্রেন সেই সফরের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে মতপার্থক্য দূর করতে ব্যর্থ হচ্ছে। রুশ কূটনীতিক মিখাইল উলিয়ানভ পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তার স্বার্থে জাতিসঙ্ঘের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তবে সেখানে পৌঁছাতে ক্রিমিয়াসহ রুশ নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্য দিয়ে জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধিদের ভ্রমণ ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর ঘটনা হবে বলে গোটা বিষয়টি নিয়ে সংশয় রয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সেখানে ‘ডিমিলিটারাইজড জোন’ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়া অবশ্য সেই দাবি মানতে নারাজ। সোমবারও খেরসনসহ ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে একাধিক এলাকায় জোরালো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রুশ নিয়ন্ত্রিত একের পর এক এলাকা আবার দখল করে চলেছে বলে কিয়েভ দাবি করছে।
ইউক্রেন থেকে প্রথম শস্যের জাহাজ ইস্তাম্বুলে : এ দিকে তুরস্কের গণমাধ্যম ডেইলি সাবাহ জানায়, ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর এই প্রথম ইউক্রেন থেকে শস্যের কোনো জাহাজ ইস্তাম্বুলে ভিড়েছে। তুরস্ক এবং জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় করা চুক্তির ফলে গত রোববার গম বহনকারী জাহাজটি কৃষ্ণসাগর হয়ে রাজধানীতে ভিড়ে। যৌথ সমন্বয় কেন্দ্রের একটি বিবৃতি এই কথা বলা হয়েছে। গত শুক্রবার জাহাজটি ইউক্রেনের চোরনোমরস্ক বন্দর থেকে যাত্রা করে। সোরমোভস্কি নামক জাহাজটি তিন হাজার ৫০ মেট্রিক টন গম নিয়ে ইস্তাম্বুল বন্দরে নোঙর ফেলে। রয়টার্সের ফুটেজে দেখা গেছে, জাহাজটি বসফোরাস প্রণালী অতিক্রম করছে এবং পরিদর্শনের জন্য ঘাটে অপেক্ষা করছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া আক্রমণ চালানোর আগে ইউক্রেন বিশ্বের এক- তৃতীয়াংশ গম রফতানি করত। যুদ্ধের কারণে পাঁচ মাস সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কৃষ্ণসাগর বন্দরগুলো থেকে শস্য রফতানি আবার শুরু করার অনুমতি দেয়ার জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তির পর দুই সপ্তাহে মোট ১৮টি জাহাজ ইউক্রেন থেকে ছেড়ে গেছে। গমের প্রথম জাহাজটি ভিড়ে ইস্তাম্বুলে।

 


আরো সংবাদ



premium cement