২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ই-অরেঞ্জ গ্রাহকের ২৮ কোটি টাকা লোপাট ইন্সপেক্টর সোহেল রানার

-

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পরিচালক বনানী থানার বরখাস্তকৃত ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে গ্রাহকের সাড়ে ২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সাধারণ গ্রাহকদের ওই টাকা নিজ ও তার সংশ্লিষ্টদের নামে পরিচালিত ছয়টি ব্যাংকের ৩১ হিসাবে জমা করে পরে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ অভিযোগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলংন্ডারিং আইনে সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সোহেল রানার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে ই-কমার্স গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ, বিদেশে পাচার ও দেশত্যাগের অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা এ বিষয়ে প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেন। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শেখ সোহেল রানা নিজের পদ পদবি আড়াল করে ই-অরেঞ্জ নামে এমএলএম কোম্পানি খোলেন। এরপর প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তার নিজ নামে ও তার সংশ্লিষ্টদের নামে পরিচালিত ছয়টি ব্যাংকের ৩১ হিসাবে মোট ২৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫০ টাকা জমা করেন। যার মধ্যে ২৮ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৯১৩ টাকা উত্তোলন করেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে দুদক মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলার অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে গত ১৬ মার্চ ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক পুলিশ ইন্সপেক্টর সোহেল রানার অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
সোহেল রানার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় সোহেল রানার চারটি ফ্ল্যাট, ৯ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাণিজ্যিক ভবন, বেশ কিছু জমির প্লট রয়েছে। এ ছাড়াও এলিট ক্লাবের সদস্যপদ, চারটি ভিন্ন দেশে সম্পত্তি ও শত শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। সোহেল রানার মালিকানাধীন টিঅ্যান্ডজি নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের একটি শাখা গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে, আরেকটি রয়েছে উত্তরার গরিব-ই-নেওয়াজ অ্যাভিনিউতে।
গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্দায় ওই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েন।
ভারতে আটক হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা অপরাধমূলক একাধিক কাজে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএসএফের কর্মকর্তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলেছে, সম্ভবত গা ঢাকা দেয়ার লক্ষ্যে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন সোহেল রানা।
১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো: তাহেরুল ইসলাম ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেনÑ ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, আমানউল্লাহ, বীথি আক্তার, কাউসার আহমেদ ও বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা। সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান বর্তমানে কারাগারে আছেন। তারা বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানার বোন ও ভগ্নিপতি।


আরো সংবাদ



premium cement