২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জাতীয় প্রেস ক্লাবে হার্ট ক্যাম্প

দেশে সবার জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালু করা জরুরি : ডা: আবদুল্লাহ

-

হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা দিতে না পারলে হঠাৎ মৃত্যু হয়ে থাকে অনেকের। সে কারণে হৃদরোগের চিকিৎসা শুধু শহর কেন্দ্রিক না হয়ে গ্রাম ও শহর সর্বত্রই করা উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও অ্যামেরিটাস অধ্যাপক ডা: এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, হৃদরোগ কেন্দ্রগুলো নিদেনপক্ষে জেলা শহরে হওয়া উচিত। এতে এসব অঞ্চলের লোকজন দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা পাবে এবং মৃত্যুর হার অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। চিকিৎসা বিষয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, হৃদরোগ চিকিৎসা ব্যয়বহুল, তাই দরিদ্র মানুষ অর্থাভাবে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারে না। সেজন সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করা হলে দরিদ্র মানুষও সব ধরনের চিকিৎসা পেতে পারে।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আয়োজিত ‘হৃদরোগ প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ‘হৃদরোগ প্রতিরোধে চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ও বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন- প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, উপকমিটির স্বাস্থ্য ও সদস্য কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক বখতিয়ার রানা প্রমুখ। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই হার্ট ক্যাম্পে তিন শতাধিক সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।
হার্ট ক্যাম্পে ব্লাড প্রেসার পরিমাপ, রক্তের গ্লোকোজ পরিমাপ, লিপিড প্রোফাইল, ইসিজি পরীক্ষাসহ চিকিৎসাবিষয়ক নানা পরামর্শ দেয়া হয়। হার্ট ক্যাম্পের সহযোগিতায় ছিল ল্যাব এইড হাসপাতাল।
অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ হৃদরোগকে নীরব ঘাতক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, হৃদরোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি। তিনি হৃদরোগ চিকিৎসা সহজলভ্য এবং এর ব্যয় কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বুকে ব্যথা হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মূল প্রবন্ধে ডা: মোস্তফা জামান বলেন, বাংলাদেশ প্রতি বছর পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ মানুষের মৃত্যু হয় অসংক্রামক ব্যাধির কারণে, এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মৃত্যু হয় হৃদরোগে। তিনি বলেন, হৃদরোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ সহজ, হৃদরোগ প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিটি নাগরিকের হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ তৈরিতে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া ধূমপান বর্জন করতে হবে। সাদাপাতা, জর্দা পরিহার করতে হবে। চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করতে হবে। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি এবং ব্যায়াম করতে হবে। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশেই হৃদরোগের শতভাগ চিকিৎসা করানো যায়। ওয়াল্ড হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য উল্লেখ করে এস এম মোস্তফা জামান জানান, বিশ্বে প্রতি বছর অসংক্রামক রোগে চার কোটি ১০ লাখ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক কোটি ৭৯ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ, ভারতসহ এ অঞ্চলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি। হৃদরোগবিষয়ক প্রবন্ধে ডা: মোস্তফা জামান জানান, বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগ পরিচালিত গবেষণায় বাংলাদেশের ৩৫ বছর কম বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি উন্নত বিশ্বের সমবয়সী মানুষের চেয়ে ১৭ গুণ বেশি।
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ক্লাব সদস্যদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং ল্যাব এইড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্যাম্প আয়োজনের কথা জানান। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র সহসভাপতি হাসান হাফিজ, যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুল আলম ও আশরাফ আলী, কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আইয়ুব ভূঁইয়া, কাজী রওনাক হোসেন, শাহনাজ সিদ্দিকী সোমা, শাহনাজ বেগম পলি, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ভানুরঞ্জন চক্রবর্তীসহ ক্লাবের সিনিয়র সদস্যরা।


আরো সংবাদ



premium cement