২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
হত্যার পর লাশ ফেলা হয় ঝাউবনে

গৃহকর্ত্রীর সন্দেহের বলি গৃহকর্মী

-

দিনাজপুর চিরিরবন্দর আলোকডিহি সরকার পাড়ার মেয়ে পারভীন আক্তার ফেন্সি। স্বামীর অভাবের সংসার। তাই গ্রামের বাড়ি ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে স্বামীর হাত ধরে ঢাকায় এসেছিলেন। রাজধানীর নিকেতনের জসিম উল হাসান ও সামিনা হাসান দম্পতির বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয় ফেন্সি। আর স্বামী মোমিনুল ইসলাম চালাতেন রিকশা।
কথা ছিল প্রতি মাসে ফেন্সিকে সাত হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে। কিন্তু সে বেতন না দিয়ে প্রতি মাসে মাত্র এক হাজার টাকা করে দেয়া হতো। শুধু তাই নয়, পান থেকে চুন খসলেই করা হতো নির্যাতন। স্বামীর সাথে দেখা করতে চাইলে দেখা করতে দেয়া হতো না। এরই মাঝে গত ১ ডিসেম্বর গৃহকর্তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক সন্দেহে পিটিয়ে ফেন্সিকে গুরুতর আহত করে গৃহকর্ত্রী সামিনা হাসান। তারপর তার বুকের ওপর চড়ে আঘাত করে বুকের হাড় ভেঙে দেয়া হয়। এরপর পারভীনের মৃত্যু হলে সামিনা ও জসিমুল দম্পতি লাশটি রাজধানীর তুরাগ এলাকার দিয়াবাড়ির একটি ঝাউবনে ফেলে দিয়ে আসে। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ পারভীনের লাশটি অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে। পরে পরিচয় পেয়ে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে। পারভীনের স্বামী বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় নিকেতনের জসিমুল ও সামিনা হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই জানায়, গত দেড় বছর ধরে নিকেতনের ওই দম্পতির বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন পারভীন আক্তার ওরফে ফেন্সি। গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো অফিসে এসব তথ্য তুলে ধরেন পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি জানান, নিজ বাসায় মারধরের কারণে গৃহকর্মী মারা গেলে তার লাশ প্রাইভেটকারে করে তুরাগের দিয়াবাড়ি ঝাউবনে ফেলে দিয়ে আসা হয়। আর এ কাজটি করে গ্রেফতার দম্পতি। পরে মেয়েটির লাশ অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করা হয়। তিন দিনের মাথায় মেয়েটির পরিচয় শনাক্তের পাশাপাশি অভিযুক্ত দম্পতিকেও চিহ্নিত গ্রেফতর করেছে পিবিআই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দম্পতি ওই গৃহকর্মীকে হত্যা করে তার লাশ ফেলে আসার তথ্য স্বীকার করেছে। স্বজনদের সাথে কথা বলে পিবিআই জানতে পারে, এক-দেড় বছর আগে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় আসেন মোমিনুল। তিনি নিজে রিকশা চালাতেন। স্ত্রী পারভীন ওই সময় গুলশান নিকেতন এলাকায় জসিমুল হাসান ও সৈয়দা সামিনা হাসান দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেন। ওই বাসাতেই থাকতেন তিনি। তাদের একমাত্র সন্তান গ্রামে দাদীর কাছে থাকে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে গৃহকর্মী পারভীনকে মারধর করেন গৃহকর্ত্রী সামিনা হাসান। একপর্যায়ে লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে চালক রমজান আলীর সহায়তায় প্রাইভেট কারে করে দিয়াবাড়ি ঝাউবন এলাকায় পারভীনের লাশ ফেলেন আসেন তারা।
নিহতের স্বামী মোমিনুলের দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা জানান, নিকেতনের ওই বাসায় কাজ নেয়ার পর থেকেই স্ত্রীর সাথে মোমিনুলকে দেখা করতে দেয়া হতো না। এর মধ্যে একদিন পারভীন ফোনে তার স্বামীকে জানান, তাকে মারধর করা হয়। এ বিষয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) দায়ের করেছিলেন মোমিনুল। এরপর একদিন মাত্র তিনি পারভীনের সাথে ওই বাসায় গিয়ে দেখা করতে পেরেছিলেন। এর মধ্যে গত অক্টোবর মাসে তিনি বাড়ি চলে যান। পরে ১ ডিসেম্বর স্ত্রী হত্যার খবর পেয়ে থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন মোমিনুল। গত ৪ ডিসেম্বর তুরাগ থানায় বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করে। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মামলার আলামত হিসেবে লাশ ফেলে দেয়ার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি লাঠি ও বিছানার চাদর জব্দ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement