২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

‘ছাত্ররা ধরে নিয়ে গেছে, দায়িত্বই ছেড়ে দেবো’

-

সেদিন মুখে হাসি নিয়েই কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: সেলিম হোসেন (৩৮)। তবে বাসায় ফিরেছেন ‘বিধ্বস্ত’ হয়ে, এমনটাই জানিয়েছেন গত মঙ্গলবার মারা যাওয়া এ কুয়েট শিক্ষকের স্ত্রী সাবিনা খাতুন রিক্তা।
তিনি বলেন, ‘বাসায় ফিরে বলল, ছাত্ররা ধরে নিয়ে গেছে। দায়িত্বই ছেড়ে দেবো।’ আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। হত্যায় জড়িতদের ফাঁসি চাই। ছয় বছরের মেয়েকে এতিম ও আমাকে স্বামীহারা করল। আমি আমার মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই।’ বাংলা ট্রিবিউন।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাবিনা খাতুন রিক্তা জানান, ৩০ নভেম্বর সকালে তার স্বামী হাসি মনে কুয়েটে যান। আর বেলা ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে বাসায় আসেন। তখন তাকে খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। বাসায় এসেই স্ত্রীকে বললেন ছাত্ররা তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা। দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন বলেও জানালেন। তখন তার চোখ-মুখ খুব খারাপ অবস্থা দেখাচ্ছিল। এরপর তিনি গোসল করতে বাথরুমে ঢোকেন। কিন্তু বের হতে দেরি হলে তিনি দরজায় নক করেন, কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে চিন্তায় পড়েন।
সাবিনা বলেন, ‘চিন্তা বাড়লে চিল্লাপাল্লা করি। তখন আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। এরপর বাথরুমের দরজা ভেঙে তাকে বসা অবস্থায় দেখি। কিন্তু চোখ বন্ধ। মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। মুখে পানি ছিটা দিলে চোখ খোলে। কিন্তু কথা বলতে পারেনি। দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘ছয় বছরের প্রেম ছিল আমাদের। তারপর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরপর কেটে গেছে আরো ১০ বছর। সংসারের কোনো কাজই তাকে বলা লাগতো না। বাসায় রাতের মশারিও নিজে টাঙাতো। বাসায় থাকাকালে আমাকে কোনো কাজ করতে দিতো না। চাকরিতে চলে গেলেও বাসার খোঁজ রাখত সবসময়। সেই মানুষটার এমন মৃত্যু আমি সইতে পারছি না। আট বছর আগে পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আমাকে সাথে নিয়েই যায়। সেখানে চার বছর থাকার পর দেশে ফিরে এসে কুয়েটে যোগ দেয়। করোনার মধ্যে প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পায়। একইসাথে হলের প্রভোস্ট হয়।’
স্বামী হারানো সাবিনা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘কুয়েট কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা নিয়ে মামলা না করলে আমি নিজেই বাদি হবো। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাইব। আমার মেয়েকে এতিম করা হয়েছে। জড়িতদের ফাঁসি চাই। ক্ষতিপূরণ চাই।’
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘সেলিমের মৃত্যুর পর সাধারণ সভা করে আমরা এ ঘটনায় দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে কুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি শিক্ষক সেলিমের নিয়মিত পাওনার বাইরে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অতিরিক্ত এক কোটি টাকা পরিবারকে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।’
শিক্ষক ও ছাত্রদের অভিযোগে জানা গেছে, ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধঘণ্টা ওই শিক্ষকের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাসায় যান। বেলা ২টার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে তিনি দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন এবং খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে

সকল