২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অবরোধ স্বাবলম্বী করেছে কাতারকে

-

তেল আর গ্যাস রফতানিতে ভালোই চলছিল কাতার। তারা ছিল বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। গড় মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা। তেল আর গ্যাস খনি আবিষ্কৃত হওয়ার আগ পর্যন্ত কাতার ছিল মুক্তা বিক্রেতা গরিব একটি আরব দেশ। সব চিত্রই পাল্টে দেয় দুই প্রাকৃতিক জ্বালানির উৎস। এরপরও ২০১৭ সালে জুনে চার আরব দেশের অবরোধ বেশ চাপে ফেলে দিয়েছিল পারস্য আর বাহরাইন সাগর বেষ্টিত দেশটিকে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসরের অবরোধে ধাক্কা লাগে ১১ হাজার ৫৭১ বর্গকিলোমিটারের এই দেশে। কিন্তু কাতার সরকারের তাৎক্ষণিক বলিষ্ঠ, সাহসী এবং যথাযথ পদক্ষেপ সে বিপর্যয় তো ঠেকানো গেছেই। উল্টো আরো স্বাবলম্বী করেছে দেশকে। আমদানির পরিবর্তে তারা নিজেরাই এখন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন করছে। সবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান শাসক আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির যোগ্য নেতৃত্বে। বিদেশে লেখা পড়া করা এই স্মার্ট ব্যক্তি খুবই জনপ্রিয় দেশের সবার কাছে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণেই অবরোধের শিকার দেশটি। তারা তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি করে। তবে অন্য সব জিনিস যেমন খাবার, সবজি, বস্ত্র, ওষুধ, দুধ, মেশিনারিজ সবই আমদানি করত। খাবার তথা দুধ, সবজি আসত সৌদি আরব থেকে। মেশিনারিজ পণ্য এ দেশে পাঠাত আরব আমিরাত। কাতার প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা জানান, এই অবরোধে উল্টো আত্মনির্ভর হয়েছে কাতার। সৌদি আরব থেকে দুধ আমদানি বন্ধ করে দেয়ার পরপরই কাতার সরকার হল্যান্ড থেকে বিমানে করে চার শত গাভী আমদানি করে, যা দিয়ে দুধের চাহিদা পূরণ হয়েছে তিন লাখ কাতারি জনগণের। উল্লেখ্য এই দেশে স্থানীয় তিন লাখ লোকের বিপরীতে প্রবাসী ২৫ লাখ।
দেশের পতিত জমিতে শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীসহ অন্যদের আর্থিক সহায়তা করা শুরু করে কাতার সরকার। ফলে এখন দেশটিতে ব্যাপক হারে সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। আমিরাত থেকে মেশিনারিজ আসা বন্ধ হওয়ার পর কাতার নিজ উদ্যোগে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা শুরু করে। এ ছাড়া তুরস্ক এবং ইরান সরকারও পাশে দাঁড়িয়েছে দেশটির। অবশ্য এতে দেশ দু’টির ভালো ব্যবসায় হয়েছে কাতারে। ফলে অবরোধের সেই ধাক্কা সামলিয়ে কাতার আবার আগের অবস্থানে। বরং আরো ভালো অবস্থা তাদের।
সরকারের যথাযথ পদক্ষেপে ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো বড় আয়োজনের সব চেষ্টাই সাবলীলভাবে এগোচ্ছে কাতারে। থেমে নেই কোনো কর্মযজ্ঞ। উল্টো আরো বড় বড় ক্রীড়া আসরের ভেনু পাচ্ছে।
শুধু এই অবরোধই নয়। ২০১০ সালে আরব বসন্তে বিভিন্ন দেশের শাসকগোষ্ঠী যখন ক্ষমতা হারান বা হারানো শঙ্কায় তখন কোনো সমস্যা হয়নি কাতারে। বাংলাদেশীদের মতে, আরব বসন্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে কাতার সরকার স্থানীয়দের বেতন বাড়িয়ে দেয় তিন গুণ। ফলে শান্তিপূর্ণ অবস্থা।
নিয়মশৃঙ্খলায় খুব কঠোর কাতার। আইন এখানে মানতেই হবে। তা ব্যক্তিটি যত বড় হোমরা-চোমরাই হোক না কেন। এটাই দেশটির শাসকদের জনপ্রিয় করেছে। চলমান করোনা সময়ে করোনা রোগীদের সরকার নিজ উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা করাচ্ছে। তা স্থানীয় বা প্রবাসী যেই হোক না কেন। এহতেরাজ অ্যাপসের মাধ্যমে কার শরীরে করোনা জীবাণু আছে বা নেই সহজেই তা শনাক্ত করা যাচ্ছে। করোনা রোগী বা সন্দেহজনকরা বাইরে বের হলে এবং পুলিশ তা ধরতে পারলে তাৎক্ষণিক দুই হাজার রিয়াল (৪৫ হাজার টাকা) জরিমানা। এই পর্যন্ত দেশটিতে ২৩৯ জন করোনা রোগী মারা গেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশী ২৯ জন। শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। সবাই শিক্ষিত। বলতে পারে ভালো ইংরেজি। কাতারে বিদেশী শ্রমিকদের চিকিৎসা ফ্রি।
করোনায় অন্য দেশ থেকে কর্মহীন শ্রমিকদের বের করে দেয়া হলেও কাতার তা করেনি। বরং বেকার হয়ে পড়াদের কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে চেষ্টাই করছে। তবে বিমানন্দরে করোনা রোগী শনাক্তে কঠোর ব্যবস্থা। সবাইকে মোবাইলের সিম কিনতে বাধ্য করা হয়। এরপর এহতেরাজ আপস ডাউনলোড করতে হয়। ইমিগ্রেশনের আগেই করোনা টেস্ট। এরপর কাতারে প্রবেশের পর সে ব্যক্তি সেই অ্যাপসের আওতায় চলে আসে। তাই কাতারে করোনা রোগী কম।


আরো সংবাদ



premium cement