১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকায় বেওয়ারিশ কুকুর রাখবে না দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

-

ঈদের ছুটি শেষে গত ৭ আগস্ট ঝিনাইদহের গ্রামের বাড়ি থেকে প্রাইভেট কার যোগে পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফেরেন আরিফুর রহমান। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের যানজটের কবলে পড়ে ঢাকার ভাড়াবাসায় পৌঁছাতে তাদের রাত ২টা বেজে যায়। কিন্তু বাসার গলিতে গাড়ি ঢুকতেই একদল কুকুরের আর্তচিৎকার শুরু হয়। গাড়ির আশপাশে ঘিরে ধরে কুকুরগুলো তাদের স্বরে ডাকতে থাকে। এতে গাড়ির দরজা খুলতেও ভয় পান আরিফুর রহমান ও তার পরিবার। দীর্ঘক্ষণ এভাবে চলতে থাকে। ছোট শিশুরা কুকুরের চিৎকার শুনে ভয়ে কুঁকড়ে যায়। পরে বাসার মালিককে ফোনে ডেকে অনেক চেষ্টায় কুকুর তাড়িয়ে তবেই গাড়ি থেকে নামতে সক্ষম হন তারা। শুধু আরিফুর রহমানের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা নয়। এভাবে রাত হলেই রাজধানীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় কুকুরের আর্তচিৎকার শুরু হয়। রাত ১২টার পর কোনো এলাকার গলি দিয়ে হাঁটতে গেলেই বিপাকে পড়তে হয় বাসিন্দাদের। একদল কুকুর ঘিরে ধরে পথচারীকে। অনেককে কামড়েও দেয়। এ কারণে জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে বছরে কয়েক হাজার মানুষকে জলাতঙ্কের চিকিৎসা নিতে হয়।
দীর্ঘ দিন পর আবারো ঢাকায় বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণের চিন্তাভাবনা করছে সিটি করপোরেশন। গত ৩০ জুলাই বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জানান, ঢাকায় আর বেওয়ারিশ কুকুর থাকবে না। এ জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বিশ্বজুড়ে কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশেও প্রতি বছর দুই হাজারের বেশি মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যায়। এ কারণে আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন কুকুর নিধন করত। বিশেষ যন্ত্র দিয়ে পাড়া-মহল্লায় থাকা বেওয়ারিশ কুকুর ধরে মেরে ফেলা হতো। ঢাকা সিটি করপোরেশন প্রতি বছর ২০ হাজারের মতো কুকুর নিধন করত বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে এভাবে প্রাণী নিধনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা প্রতিবাদ জানাতে থাকে। তারা আদালতে রিট করেন। একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দেন আদালত। এর পর থেকে ঢাকায় কুকুর নিধন বন্ধ হয়ে যায়। এর পরিবর্তে কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। অভয়ারণ্য নামে একটি সংস্থার সাথে এ জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন চুক্তি করে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন চুক্তি হলেও অভয়ারণ্য কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি। তারা কয়েকটি ওয়ার্ডে কাজ করলেও বেশির ভাগ এলাকাতেই তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এ কারণে ঢাকায় আবারো বেওয়ারিশ কুকুরের অত্যাচার বেড়ে গেছে। এ জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০১৭ সালের পর থেকে অভয়ারণ্যের সাথে আর চুক্তি নবায়ন করেনি। একইভাবে উত্তর সিটি করপোরেশনের সাথেও এ বছর তাদের চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। তারাও এখনো চুক্তি নবায়ন করেনি। এর মধ্যেই ঢাকা দক্ষিণের নবনির্বাচিত মেয়র আবারো ঢাকা শহর থেকে কুকুর কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement