২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাজীপুরের প্যান্ডরা ফ্যাশনে লে-অফ ও ছাঁটাই কার্যকর হয়নি

দেড় সহস্রাধিক শ্রমিক হতাশায়
-

প্রচলিত শ্রম আইনানুযায়ী ‘লে-অফ’ অথবা ‘ছাঁটাই’ কোনো দাবিই কার্যকর না হওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছেন গাজীপুর মহানগরের স্থানীয় কলমেশ্বর এলাকার প্যান্ডরা ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার দেড় সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী। গতকাল বিকেলে কারখানাটিতে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বৈঠক শেষে চরম অনিশ্চিয়তা ও হতাশা নিয়ে ফেরেন শ্রমিকরা। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের আংশিক পাওনা আগামী দুই মাস পর থেকে দুই কিস্তিতে পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, ঈদের দু’দিন আগে (বৃহস্পতিবার) জুলাই মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করে কারখানায় মৌখিকভাবে ঈদের ছুটি ঘোষণা করা হয়। তখনো তাদেরকে লে-অফ ঘোষণার বিষয়টি জানানো হয়নি। ঈদের ছুটির পর শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাতে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে গেটে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয় এবং বন্ধের সুযোগে রাতের অন্ধকারে কারখানার মেশিনপত্র স্থানান্তরের চেষ্টা চালায় মালিকপক্ষ। খবর পেয়ে শ্রমিকরা মালামাল আটকে দেন। এতে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সাথে সমঝোতায় বসতে বাধ্য হয়। গতকাল বিকেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কারখানায় মালিকপক্ষের সাথে শ্রমিকদের নির্ধারিত ওই সমঝোতা বৈঠক হয়।
স্থানীয় শ্রমিকলীগ নেতা মোস্তফা খান জানান, বৈঠকে প্রথমেই মালিকপক্ষ প্রচলিত শ্রম আইনকে কোনো তোয়াক্কা না করে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করেন। অবশেষে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের মোট পাওনার ৫০ শতাংশ দিতে রাজি হন। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতাদের চাপে মালিকপক্ষ দুই কিস্তিতে মোট ৭০ শতাংশ পাওনা পরিশোধে রাজি হয়। প্রথম কিস্তি ৩০ সেপ্টেম্বর ও দ্বিতীয় কিস্তি ৩০ নভেম্বরে পরিশোধ করতে পারবে বলে মালিকপক্ষ জানায়। অবশেষে অনিচ্ছিা থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকরা অগত্যায় সমঝোতায় স্বাক্ষর করেন। শ্রমিক আলামিন আক্ষেপ করে বলেন, এ ছাড়া আমাদের কী করার আছে? আমরা কি এই প্রভাবশালী মালিকের সাথে পারব? বলতে গেলে আমাদের ওপর এক ধরনের বে-আইনি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যেভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে শ্রম আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী ‘ছাঁটাই’ অথবা ধারা ২/৫৮ অনুযায়ী ‘লে-অফ’ ঘোষণা কোনোটাই কার্যকর হয়নি।
কারখানার নারী শ্রমিক ফাতেমা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, এই দু-তিন মাস আমরা কী খেয়ে বাঁচব? বাড়ির মালিককে তো বুঝাতে পারব না। এ ছাড়া দোকান বাকিসহ অন্যান্য পাওনাদারদের কী করে বুঝাব? আগামী দু-তিন মাস পর মালিকপক্ষ পাওনা দেবে কি না সে ব্যাপারেও কোনো আস্থা রাখতে পারছি না।
এ দিকে ভবন মালিক খায়রুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হলেও আমার প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকার বকেয়া ভাড়া পরিশোধের ব্যাপারে এখনো কোনো ফয়সালা হয়নি।
শ্রমিক ও মালিকপক্ষ ছাড়াও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেনÑ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল-মামুন মণ্ডল, জিএমপির গাছা জোনের এসি আহসানুল হক, গাজীপুর শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের এএসপি এস আলম, গাছা থানার ওসি ইসমাঈল হোসেন, স্থানীয় শ্রমিকলীগ নেতা সৈয়দ আবদুল জলিল, মো: মোস্তফা খান প্রমুখ।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল-মামুন মণ্ডল নয়া দিগন্তকে জানান, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সার্ভিস বেনিফিটের ৭০ শতাংশ টাকা দুই কিস্তিতে পরিশোধ ছাড়াও জুলাই মাসের অবশিষ্ট বকেয়া বেতন আগামী ১৩ আগস্ট পরিশোধ করতে রাজি হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement