১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মানব ও অর্থ পাচার মোকাবেলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি

-

মানব ও অর্থ পাচারের মতো সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ মোকাবেলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি আন্তঃদেশীয় অভিজ্ঞতা ও তথ্যবিনিময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার এবং সচেতনতা তৈরিতে নাগরিক সমাজের ভূমিকাও অপরিহার্য। নির্ধারিত ক্ষেত্রগুলোতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তার পাশাপাশি অপরাধ মোকাবেলায় ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও মতামত প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সহায়তায় নাগরিক সমাজ কার্যকর অবদান রাখতে পারে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও কুয়েত ট্রান্সপারেন্সি সোসাইটি (কেটিএস) আয়োজিত ‘সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ মোকাবেলায় নাগরিক সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এক যৌথ ভার্চুয়াল সেমিনারে এসব মন্তব্য করেন আলোচকরা।
সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারপারসন ডেলিয়া ফ্যারাইরা রোবিও। এ ছাড়াও আলোচনায় যুক্ত হন ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মানসূচক প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি; ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অব কুয়েতের সাবেক সদস্য ড. হাস্সান জোহার; কেটিএসের চেয়ারপারসন মাজিদ আল মুতাইরি; টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং কুয়েত ইউনিভার্সটিÑ ল স্কুলের ড. দালাল আল সাইফ। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন কেটিএসের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আসরার হায়াত।
সেমিনারের সূচনা বক্তব্যে টিআই চেয়ারপারসন ডেলিয়া ফ্যারাইরা রোবিও দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের (মানি লন্ডারিং) গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ এবং এ ধরনের অপরাধ মোকাবেলায় টিআই-এর নানাবিধ কার্যক্রম ও উদ্যোগ তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে অর্থ পাচার বন্ধ করতেই হবে। সম্মিলিত ও আন্তঃদেশীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এ ধরনের সঙ্ঘবদ্ধ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন করা সম্ভব। তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে সঠিক নীতিকাঠামো ও আইন এবং সেগুলোর যথাযথ ও কঠোর বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ জরুরি। বিশেষ করে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সকল প্রকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। এজন্য কর্তৃপক্ষের আইনি ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে।
কেটিএসের চেয়ারপারসন মাজিদ আল মুতাইরি সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুল আলোচিত ও প্রচারিত অর্থ ও মানব পাচার, অবৈধ সুবিধা লাভ এবং আত্মসাৎের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে কেটিএসের নানা প্রয়াস তুলে ধরেন। কুয়েতে আটক বাংলাদেশী সংসদ সদস্যের অর্থ ও মানব পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কূটনৈতিক দায়মুক্তি না থাকলে হয়তো কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকেও আটক করা হতো।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ‘অর্থ ও মানব পাচারে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ : প্রভাব ও সম্ভাবনা’ বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তিনি জাতীয় সংসদের প্রায় ৬২ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী হওয়ার তথ্য উল্লেখ করে রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অধিক মাত্রায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি আরো বলেন, কুয়েতে আটক বাংলাদেশী সংসদ সদস্য ছাড়াও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের একাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অর্থ ও মানব পাচার, মাদক ব্যবসা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ক্যাসিনো ব্যবসা ও নানা অবৈধ পন্থায় অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগ আছে। অর্থ ও মানব পাচারের মতো অপরাধে কুয়েতে একজন বাংলাদেশী সংসদ সদস্যের আটক হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। এটি বাংলাদেশের রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিত্বে দুর্বৃত্তায়নের একটি অসম্মানজনক দৃষ্টান্তও বটে। এতে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রবাসে বাংলাদেশীদের কাজের সুযোগ নষ্ট হওয়া এবং তাদের চাকরিচ্যুতির আশঙ্কা তৈরি করেছে; যার ফলে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কাও অবাস্তব নয়।
ড. জামান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং রাজনৈতিক দলের অনেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু যারা দুর্নীতিতে জড়িত তারা নানা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি অব্যাহত রাখছে; যা প্রমাণ করে যে দুর্নীতিবাজরা অনেক বেশি ক্ষমতাবান। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে শক্তিশালী আইন থাকলেও তার যথাযথ ও কঠোর প্রয়োগ না হওয়াই এর অন্যতম কারণ। দেশ ও সংসদের মর্যাদা রক্ষার স্বার্থেই কুয়েতে অভিযুক্ত বাংলাদেশী সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দেশেও দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

 


আরো সংবাদ



premium cement