করোনায় সরকারকে কক্সবাজারের মানবিক সহায়তা সংস্থার সহযোগিতা
- কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা
- ০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
কক্সবাজার জেলায় বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯-এর বিস্তার কমাতে আইএসসিজি’র সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থাৎ জাতিসঙ্ঘসহ স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো বাংলাদেশ সরকারকে সর্বোচ্চ সহায়তা করতে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে এখন পর্যন্ত করোনা কোভিড-১৯-এর কোনো কেস পাওয়া যায়নি। যদিও সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসা কক্সবাজারে একজন স্থানীয় প্রবাসী-বাংলাদেশীর নিশ্চিত ঘটনা পাওয়া গেছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, সিভিল সার্জন কার্যালয়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো ভাইরাসের বিস্তার কমাতে পরিকল্পনা মোতাবেক এগিয়ে চলেছে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আইএসসিজির সহযোগী সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সরকারের কোভিড-১৯ জাতীয় সাড়াদান পরিকল্পনায় সব ধরনের সহযোগিতা করছে, যেখানে শরণার্থীদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য অংশগ্রহণমূলক এবং সমন্বিত প্রক্রিয়ায় প্রত্যেকের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
হেলথ সেক্টর (মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিষয়ক সমন্বয়ক) কক্সবাজার জেলার আইসোলেশন ও চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা প্রদানকারী সরঞ্জামগুলোর মজুদ বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
কোভিড-১৯-এর বিস্তার রোধে এবং সবার স্বাস্থ্য ও সুব্যবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়ে ‘সুরক্ষা এবং সহায়তা কার্যক্রম’ কমিয়ে কেবল প্রয়োজনীয় জীবন-রক্ষামূলক পরিষেবাগুলোতে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেÑ খাদ্য, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি, রন্ধন জ্বালানি এবং কিছু সুরক্ষা পরিষেবা। অপরিহার্য কার্যক্রমগুলো পরিচালনার সময়, শরণার্থীদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ক্যাম্পগুলোতে চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত এবং জাতিসঙ্ঘের নির্দেশিকা (যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জারি করা নির্দেশগুলো) কঠোরভাবে অনুসরণ করছে। সবাইকে যথাসাধ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আগত কর্মীদের জন্য ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নির্ভরযোগ্য সঠিক তথ্য জানানো এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিকেশন উইথ কমিউনিটি (সিডব্লিøউসি) ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলো কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট বার্তাগুলো রোহিঙ্গা, বাংলা এবং বার্মিজ ভাষায় তৈরি করেছে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা করে শিক্ষা এবং যোগাযোগ উপকরণ তৈরি করেছে। বিগত সপ্তাহগুলোতে রেডিও, ভিডিও, পোস্টার, লিফলেট এবং সাধারণ ঘোষণার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বার্তাগুলো রোহিঙ্গা জনবসতি এবং আশপাশের এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীরা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
বিশেষ করে ভাইরাসটি কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে, কিভাবে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করা যেতে পারে, লক্ষণ এবং যতœগুলো। কোভিড-১৯ সম্পর্কে ভুল তথ্য মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে নির্ভর করা উচিত।
কক্সবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসের পাশাপাশি বাংলাদেশী জনগোষ্ঠী ও শরণার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ ছাড়া হাত ধোয়ার পানি এবং সাবান সহজেই সবার কাছে নিশ্চিত করতে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে। বিতরণকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পুষ্টিকেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, সরকারি অফিস এবং অন্যান্য জায়গায় যেখানে পরিষেবা সরবরাহ রয়েছে সেখানে হাত ধোয়ার স্থানগুলো বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আইএসসিজির সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর নিকোল এপটিং বলেন ‘এই ভাইরাসকে মোকাবেলা করতে যেয়ে সামনে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হব; তবে তা একে অপরের প্রতি আমাদের যতœশীলতা, মহানুভবতা এবং মনুষ্যত্বকে পরাজিত করতে পারবে না। যদিও আমরা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাগুলো অনুভব করতে পারি, তবে তা অবশ্যই বৈষম্যের কারণ হতে পারে না। কোভিড-১৯ জাতি, বর্ণ, ধর্ম বা ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, এর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আমাদের সবার জন্য সমানভাবে রয়েছে’।
কক্সবাজার জেলাতে জটিল কোভিড-১৯ কেস-সহ আইসিইউ সেবার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জাতিসঙ্ঘ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসহ অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদাররা রোহিঙ্গা জনবসতি এবং আশপাশের বাংলাদেশী জনগণের জন্য বর্তমান সক্ষমতা বাড়াতে সরকারকে সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি জেলায় আইইডিসিআর-এর মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ চলছে।
আর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, রোহিঙ্গা জনবসতি এবং এর আশপাশের এলাকার দুর্বল মোবাইল এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক। যেহেতু ঘূর্ণিঝড় এবং ভারী বর্ষার মৌসুম আসন্ন এবং কোভিড-১৯-এর মহামারী ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে, যোগাযোগব্যবস্থার প্রস্তুতি এবং জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং এর আশপাশের বাংলাদেশী জনগণের অনলাইনে তথ্য পাওয়ার নিশ্চয়তার পাশাপাশি পরিবার এবং প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগের সুযোগ থাকা প্রয়োজন।
মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো এই সঙ্কটময় মুহূর্তে, শরণার্থী এবং যারা তাদেরকে উদারভাবে গ্রহণ করেছেন সেসব স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য পরিষেবা বাড়াতে আরো আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রাথমিক আপিলটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হবে এবং আইএসসিজি তার সহযোগী সংস্থাগুলোকে কক্সবাজারে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কার্যক্রম বাড়াতে উৎসাহিত করছে একই সাথে ২০২০ সালের রোহিঙ্গা মানবিক সঙ্কট মোকাবেলায় যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনার (জেআরপি) মূল সহযোগিতা অব্যাহত রাখছে। বাংলাদেশের জাতীয় প্রস্তুতি ও কর্মপরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কক্সবাজারের জন্য পৃথক আপিলসহ সাড়াদান কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা