২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

না’গঞ্জে খাদ্য সঙ্কটে খেটে খাওয়া মানুষ

-

বুকের ভেতরে চালের প্যাকেট আর মুখে আলুর প্যাকেট। বেজায় খুশি পঙ্গু আক্কাস আলী। একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া চাল ডাল আলু পেয়েছেন তিনি। করোনা প্রভাবের কারণে না খেয়ে থাকা অসহায় মানুষের মধ্যে গতকাল খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে সংগঠনটি।
দুই পা নেই আক্কাস আলীর। কোনো এক দুর্ঘটনায় তার দুই পা কেটে ফেলা হয়। তার পর থেকে ভিক্ষা করেই চলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ শহরের উত্তর চাঁনমারি এলাকায় বসবাস আক্কাস আলীর।
খাদ্যসামগ্রী পেয়ে আক্কাস আলী জানান, তার মতো অনেক গরিব মানুষ না খেয়ে আছেন। তাদের কান্না কেউ শুনে না। নারায়ণগঞ্জে অনেক ধনী লোক আছেন, তারা যদি এ সময়ে আমাদের জন্য সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতেন তাহলে আমারা বেঁচে যেতাম। আক্কাসের মতো অনেক পরিবার পড়েছে খাদ্য সঙ্কটে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ ও মধ্যবিত্ত পরিবারে দেখা দিয়েছে আর্থিক অনটন।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে করোনা মোকাবেলায় মানুষ ঘরবন্দী। ফলে কর্মহীন মানুষ পড়েছে বিপাকে। অনেকের ঘরে খাবার নেই। আর বেশি সমস্যা হয়েছে সামান্য আয়ের মানুষদের। যারা দিন এনে দিন খেতেন। তাদের পরিবারে দেখা দিয়েছে কান্না। এ ছাড়া সমস্যায় আছেন যারা মানুষের কাছে হাত পাততে পারেন না। অভাবের কথা বলতেও পারেন না।
অথচ নারায়ণগঞ্জ দেশের ধনীদের জেলা হিসেবে পরিচিত। এ জেলার মানুষ সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। সেই সাথে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ের অনেক সংগঠন। এখানে বসবাস করছেন দেশের শীর্ষ ধনীরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আবির্ভাব হওয়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে নারায়ণগঞ্জের দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা বড় সঙ্কটে পড়েছেন। জীবিকার তাগিদে তাদের নানামুখী চিন্তায় গ্রাস করছে। পাশাপাশি ধনীরাও অসহায়দের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন না।
ইতোমধ্যে কয়েকজন ব্যক্তি উদ্যোগে অসহায়দের বাড়িতে বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন সবার উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনারা ঘরে থাকুন। যারা গরিব, খাবারের সঙ্কট এমন ব্যক্তিদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। এ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এজন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানার আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপ অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন নারায়ণগঞ্জের মানুষ। এই জেলার প্রতি ১০০ জনে গড়ে ২ দশমিক ৬ জন মানুষ গরিব। বাকিরা সবাই দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করেন।
একই সাথে এই জেলায় রয়েছে বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতি, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও বাংলাদেশের সুতা ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইয়ার্ন মার্চেন্ট। এই তিনটি জাতীয় পর্যায়ের সংগঠনসহ মোট ৪৫টি ব্যবসায়িক সংগঠন রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। তারপরেও এ জেলায় অসহায়দেরকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তাদের কোন উপকারে আসছে না সবচেয়ে ধনীদের জেলা খ্যাত এই নারায়ণগঞ্জ।
জানা যায়, জেলায় মোট হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ২৩৪ জন। সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জে বন্ধ রয়েছে সকল অফিস আদালত ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিও বন্ধ হয়ে গেছে শনিবার থেকে।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের বিত্তশালীদের তালিকায় রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমাম ও বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী। এই দুইজনেরই রয়েছে বিশাল অর্থ সম্পদ।
কিন্তু এই দুইজনের কেউই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অসহায়দের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন না।
নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এর আওতাভুক্ত রয়েছে কয়েক হাজার কারখানা। বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতি, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইয়ার্ন মার্চেন্টের মতো সংগঠনগুলোও অসহায়দের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে না। পাশাপাশি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল ও মোহাম্মদ আলীরাও অসহায়দের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন না। অন্য বড় বড় ধনীরাও এগিয়ে আসছেন না।
ফলে নারায়ণগঞ্জে বসবাসরত অসহায়দের বিপাক পড়তে হচ্ছে। কর্মবিমুখ হয়ে তারা দিশাহীন অবস্থায় পড়তে যাচ্ছেন। জীবীকার তাগিদে গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন। শহরে এসেও তাদেরকে জীবিকাহারা হতে হচ্ছে। না পারছেন গ্রামে ফিরে যেতে, না পারছেন শহরে অবস্থান করতে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা তথ্য কর্মকর্তা জানান, জনসচেতনতার পাশপাশি জেলায় সাড়ে ৭ হাজার পরিবারের মধ্যে ৭৫ টন খাদ্য ও ৯ লাখ টাকা অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement