বাংলাদেশে ক্যানসার ওষুধ উৎপাদনের প্রবর্তক টেকনো ড্রাগসে বিনিয়োগে বিপুল সম্ভাবনা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১১ জুন ২০২৪, ১৩:৪৯
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের আইপিও আবেদন ও চাঁদা গ্রহণ শুরু হবে গত ৯ জুন থেকে, যা চলবে ১৩ জুন পর্যন্ত।
এর আগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ৯০২তম কমিশন সভায় টেকনো ড্রাগস লিমিটেডকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেয়া হয়।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৩৪ টাকা। আইপিওর মাধ্যমে টেকনো ড্রাগস কাট অফ প্রাইসের ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্টে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে ২৪ টাকায়। কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রির নিলাম (বিডিং) বিপুল সাড়া পেয়ে নিরধারিত সময়ে শেষ হয়েছে। কোম্পানির আইপিওতে প্রতিটি বিও হিসেবে ১০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে বিনিয়োগকারীরা।
টেকনো ড্রাগস সাধারণত বিশেষায়িত পণ্য নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির ক্যন্সার রোগের ক্যামোথেরাপি, অ্যানেস্থেসিয়া বা চেতনানাশক ওষুধ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল, ইনজেকশন এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ইমপ্ল্যান্ট স্টিক রয়েছে।
ইমপ্ল্যান্ট স্টিক যা বাংলাদেশে একমাত্র টেকনো ড্রাগস উৎপাদন করে। এটি ৫ বছরের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রযোজ্য। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রধান ওষুধগুলো হলো : জন্ম নিয়ন্ত্রণ মেডিসিন (সুখী থার্ড জেনারেশন ওরাল পিল, প্রোভেরা ইনজেকশন, ইমপ্ল্যান্ট স্টিক, এন্টিক্যান্সার মেডিসিন-হেরিটিন, জোলোমাইড, ইপোসাইড, চেতনানাশক মেডিসিন-লিডোসিন প্লাস ইনজেকশন, ভেনকুরোন ১০টিভি ইনজেকশন), সাধারণ হিউম্যান মেডিসিন (মোটিলেক্স সাসপেনশন, ওমিসেক, রোমিলেক, সেফিক্সোন ইনজেকশন) এবং ভেটেনারি মেডিসিন (ভারমিক ইনজেকশন, ডেক্সাভেট ইনজেকশন, রুমেন প্লাস পাউডার, ভিটা জিংক)।
প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকারের কাছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের টেন্ডারের বিপরীতে সর্বোচ্চ পরিমাণ জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও ভেটেনারি ও সাধারণ হিউম্যান মেডিসিনও রয়েছে। কোম্পানিটির ১৭টি ডিপো রয়েছে যার মাধ্যমে সারাদেশে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া প্রতিটি স্তরে 'সার্বক্ষণিক মনিটরিং টিম' রয়েছে যারা কোম্পানির প্রতিটি কাজের সঠিক মনিটরিং নিশ্চিত করে থাকে।
কোম্পানিটি ড্রাগ অ্যাডমিনিসট্রেসন ও জিএমপিসহ অন্যান্য রেগুলটরি গাইডলাইন মেনে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন ও বিতরণ করে থাকে। করপোরেট গভর্নেন্সের পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আইপিও তহবিলের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ, বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান, সর্বপরি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ ওষুধ রফতানির মাধ্যমে দেশের সুনাম অর্জন করাই কোম্পানিটির মূল উদ্দেশ্য।
বর্তমানে টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের গাজীপুর ও নরসিংদীতে দুটি ফ্যাক্টরি রয়েছে। যার আয়তন ১৩১৭.৫০ ডেসিম্যাল। ফ্যাক্টরি দুটিতে পৃথক পৃথক প্রোডাক্টের ধরন অনুসারে পেনিসিলিন বিল্ডিং, হরমোন বিল্ডিং এবং জেনারেল প্রোডাকশন বিল্ডিং, সেফালোস্পোরিন বিল্ডিং, মেডিক্যাল ডিভাইস এন্ড বায়োটেক বিল্ডিং, এন্টি-টিউবার ক্লোসিস বিল্ডিং, এনিমেল হেলথ বিল্ডিং ও অনকোলজি প্রোডাকশন বিল্ডিংসহ মোট ৯টি ভবন রয়েছে। কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, নরসিংদী ফ্যাক্টরির ব্যালেন্সিং মডার্নাইজেশন রেনোভেশন অ্যান্ড এক্সপেনশন (বিএমআরই), গাজীপুর ফ্যাক্টরির ভবন নির্মাণ এবং আংশিক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করবে। এতে কোম্পানিটির উৎপাদন ও বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডাররা লাভবান হবেন।
উল্লেখ্য, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ২০০৯ সালে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে আরজেএসসি’তে নিবন্ধিত হয়। তবে, ২০১০ সালের ১ জুলাই কোম্পানিটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে যাত্রা শুরু করে ভেটেনারি প্রোডাক্ট দিয়ে। দেশে ভেটেনারি প্রোডাক্টের প্রবর্তক টেকনো ড্রাগস। পরে মানব স্বাস্থ্যের ওষুধ নিয়ে কাজ শুরু করে। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ওষুধ রফতানিতে চতুর্থ স্থান অর্জন করে। এরপর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। কোম্পানিটি ২০০৯ সালে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় এবং ২০১৯ সালে প্রাইভেট কোম্পানি থেকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়।
বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৯৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ৬৩ শতাংশসহ পরিচালনা পর্ষদের কাছে ৮৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ জালাল উদ্দিন আহমেদ একজন ফামার্সিস্ট এবং দেশের সবোর্চ্চ বিদ্যাপিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাত্তোকত্তর সম্পন্ন করেছেন। কোম্পানির পরিচালক মেহেরিন আহমেদ বিদেশ থেকে অনকোলজিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। আরেক পরিচালক আরেফিন রাফি আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি (আইসিটি) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি প্রায় ১২ বছর যাবৎ কোম্পানির মার্কেটিং, ব্যবস্থাপনা, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ দক্ষতার সাথে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছে মিসেস খালেদা আক্তার খান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীব বিজ্ঞানে অনার্স এবং ফিসারিজ বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যাংকিং খাতে ২৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানিটি ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, পুনর্মূল্যায়নসহ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ২৭ টাকা ৭৪ পয়সা এবং পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া ২২ টাকা ৫৭ পয়সা। এ সময় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ২ টাকা ৮ পয়সা। বিগত ৫ বছরের ভারিত গড় হারে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৩ টাকা ২৫ পয়সা। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড ও ইবিএল ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড। এছাড়া অন্ডাররাইটার হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে ইবিএল ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড এবং বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজালাল উদ্দিন আহমেদের ৪০ বছরের অধিক কর্মঅভিজ্ঞতা সাথে একঝাঁক পেশাদার কর্মকর্তা, গবেষণা ও উন্নয়ন কাজের গভীরতা, দেশি বিদেশি মার্কেটে ব্যবসা বিস্তার এবং সর্বোপরি ওষুধ তৈরিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি টেকনো ড্রাগস লিমিটেডকে বাংলাদেশের প্রথম সারির লাভজনক ওষুধ কোম্পানিতে পরিণত হবে বলে প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি