১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সিগন্যাল ব্যবস্থা আধুনিকায়নে কাজ করছে রেলওয়ে

সিগন্যাল ব্যবস্থা আধুনিকায়নে কাজ করছে রেলওয়ে - ছবি : ইউএনবি

দুর্ঘটনা কমাতে সব জায়গায় সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের সব মিটার গেজ লাইন বদলে ব্রডগেজে রূপান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী।

এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রেলওয়ের চলমান ও ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলো নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

রেলওয়ের মহাপরিচালক বলেন, ট্রেনের সাংঘর্ষিক বা কোনো ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে তাই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে।

তিনি বলেন,‘কুপিবাতি ব্যবহার করে সিগন্যাল দেয়ার সিস্টেম পুরোনো হলেও এটি কার্যকর এবং পরীক্ষিত একটি সিগন্যাল ব্যবস্থা। ডিজিটাল সিস্টেম চালু করা ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার।’

সম্প্রতি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েছে। এজন্য দায়ী করা হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যাল ব্যবস্থাকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক বলেন,‘আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত মিটার গেজের জন্য লোকোমোটিভ সংগ্রহ করা হবে। ২০৩০ সালের পরে এই ইঞ্জিন আর সংগ্রহ করা হবে না। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে মিটার গেজ অবলুপ্ত করে সম্পূর্ণটাই ব্রডগেজে রূপান্তর করা হবে। ফলে ট্রেনে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে না।’


সরদার সাহাদাত আলী আরো বলেন, বর্তমানে যে লোকোমোটিভ ব্যবহৃত হচ্ছে তার মধ্যে ব্রডগেজের লোকোমোটিভগুলো চাহিদার মোটামুটি কাছাকাছি পরিমাণে আছে। ব্রডগেজ লাইনে ইঞ্জিনের সঙ্কট এই মুহূর্তে নেই। আরো ৪৬টি লোকোমোটিভ আনার পরিকল্পনা রয়েছে। মিটারগেজের জন্য ৫০টি লোকোমোটিভ আসবে। এছাড়া চট্টগ্রাম-দোহাজারী প্রজেক্টের মধ্যে আরও ৩০টি লোকোমোটিভ আনার পরিকল্পনা রয়েছে। মিটারগেজ লোকোমোটিভের কিছুটা সঙ্কট রয়েছে।

তিনি আরো বলেন,‘আব্দুল্লাহপুর থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ডিজিটাল সিগন্যাল সিস্টেমের টেন্ডার হয়েছে। এটি মূল্যায়ন পর্যায়ে আছে। পদ্মা রেললাইন প্রজেক্টে জুন মাসের মধ্যে ডিজিটাল সিস্টেম চালু করে দেবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে এরই মধ্যে ডিজিটাল সিস্টেম চালু রয়েছে। টঙ্গী, জয়দেবপুর, দিনাজপুর, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব-পশ্চিম এসব জায়গায় নন-ইন্টার লকিং প্রজেক্টের কাজ হচ্ছে। তাদের সবারই কাজ শেষ হয়ে যাবে। কাজ শেষ হলে এগুলো ইন্টার লকিংয়ের মধ্যে চলে আসবে, তখন আর এ সমস্যা থাকবে না। তাই পর্যায়ক্রমে সবগুলোই আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।’

মিটারগেজ মেরামতের বিষয়ে ডিজি বলেন, ‘মিটারগেজ মেরামতের জন্য কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপে নিতে হয়। এগুলো আবার যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে পার করতে হয়, সেক্ষেত্রে কিছু জটিলতা থাকে। এছাড়া ওয়ার্কশপে লোকবলের সঙ্কটও আছে।’

নতুন কিছু লোকোমোটিভ না আসা পর্যন্ত মিটারগেজের এ সংকট কাটবে না উল্লেখ করে সাহাদাত আলী বলেন, ‘আমরা আশা করছি ২০৩০ সালের মধ্যে মিটারগেজের সব সংকটই কেটে যাবে। এ বিষয়ে কাজ করছি।’

লোকোমোটিভের বেশ কিছু ত্রুটির কথা শোনা গেছে- এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পরিচালক বলেন, ‘তিন হাজার সিরিজে যে লোকোমোটিভ আনা হয়েছে কিছু কিছু সমস্যা আমাদের নজরেও এসেছে। সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্যে সমস্যাগুলো মেরামত করা হচ্ছে। যে ওয়ারেন্টি পিরিয়ড আছে এ সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা গেলে ঠিক করে নেওয়া যাবে।’

ট্রেন সংযোগ সম্প্রসারণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জায়গায় ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা করার উদ্যোগ আছে সরকারের। পর্যায়ক্রমে সেটি করা হবে। কোথাও কোথাও ট্রেন/বগির সংখ্যা বাড়ানো হবে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী। আরও নতুন নতুন লোকোমোটিভ কেনা হবে।’

দক্ষ জনবলের অভাবের বিষয়ে তিনি বলেন,‘দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়। আগে জনবল নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। কর্মচারীরা অবসরে যাবে আবার নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে-এটা একটা নিয়মিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে।’

রেলওয়ে সার্ভিসের উন্নয়নে আর কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে রেলওয়ে ডিজি বলেন, ‘ আমরা যাত্রীসেবার মান বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। ট্রেন যথাসময়ে ছাড়া এবং পৌঁছানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এছাড়াও ট্রেন যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং খাবারসহ সব বিষয়ে মান ভালো করছি।’

ট্রেনের টিকিট সহজে পাওয়ার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হয়েছে, কালোবাজারি টিকিট বিক্রি নেই বললেই চলে। ঘরে বসে অনলাইনেই টিকিট কেনা যাচ্ছে, স্টেশন থেকেও যথাসময়ে মধ্যে টিকিট নিতে পারছে, তবে ট্রেনের যে চাহিদা সে অনুযায়ী অনেক সময় সিট দেওয়া যায় না। তারপরও মানুষ ট্রেন জার্নিতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে।’

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement