১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চা নিলামকারী প্রথম নারী মায়িশা, যেভাবে যুক্ত হলেন এর সাথে

- ছবি : সংগৃহীত

‘সাহিত্য রসটা খুঁজে পাওয়া যায় না এক কাপ চা হাতে না নিলে’ হাসতে হাসতে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স পাশ করা মায়িশা রহমান। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে চায়ের নিলাম পরিচালনার আসনে বসেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫২টির মতো চায়ের নিলাম পরিচালনা করেছেন তিনি।

গত বছর মানে ২০২২ সালের ১৪ই মার্চ চট্টগ্রামে প্রথম চায়ের নিলাম ডাকেন মায়িশা। বাবার সাথে বসেই প্রথম নিলামটি ডেকেছিলেন মায়িশা।

প্রথম নিলামের অভিজ্ঞতা
“লট নাম্বার...” হেমারিং করে অর্থাৎ নিলামে টেবিলে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে চায়ের নিলাম শুরু করেন মায়িশা। প্রথম নিলামের অভিজ্ঞতাকে ‘জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।

“যখন আব্বু আমাকে একদিন বললো চা বিক্রি করবি? আমি বললাম দেখি পারি কিনা। সেই থেকে শুরু, সেই দিনটা ছিল ১৪ মার্চ। বাবার সাথে বসে নিলাম পরিচালনা করা অন্য রকম এক আনন্দ। এত পজিটিভ রেসপন্স পেয়েছি, আমার কাজ করার উদ্যোম আরো বেড়ে গেছে” – বলছিলেন মায়িশা।

চট্টগ্রামে প্রথম চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের ১৬ই জুলাই। এরপর ৭৩ বছরের ইতিহাসে মায়িশাই প্রথম বাংলাদেশী নারী যিনি চায়ের নিলাম পরিচালনা করেছেন। চট্টগ্রামের পর শ্রীমঙ্গলেও প্রথম নারী হিসেবে চায়ের নিলাম পরিচালনা শুরু করেন তিনি।

তবে শিক্ষানবিশ হিসেবে প্রতিনিয়ত বাবা, চাচাসহ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য যারা চা শিল্পের সাথেই যুক্ত তাদের কাছ থেকে শিখছেন বলে জানান তিনি।

চায়ের গল্প শুনতে শুনতে বড় হওয়া মায়িশা রহমান এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নিলামে বিক্রি করছেন চট্টগ্রাম, সিলেট আর পঞ্চগড়ের চা।

চা নিলামের আগে কী কী কাজ করতে হয়?
প্রতি সোমবার চট্টগ্রামে চায়ের নিলাম হয়। চায়ের গুণগত মান যাচাই করে সেটার মূল্য নির্ধারণ করে থাকে ব্রোকারস প্রতিষ্ঠানগুলো।

মায়িশা রহমান বলেন, “যেসব বাগানের চা বিক্রি হবে সেই নমুনাগুলো প্রথমে বাগান থেকে পাঠান বাগান মালিকেরা, সেগুলো আমরা প্রথমে টেস্ট করি। চায়ের গুনগত মান যাচাই বাছাই করি, বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হয়। নাকে গন্ধ নিয়ে এবং সেই নমুনা দিয়ে তৈরি লিকারটা মুখে টেস্ট করে সেটার স্বাদ কেমন বা মান কেমন তা যাচাই বাছাই করে থাকি।”

লিকারের সাথে সাথে চায়ের রঙটা দেখতে কেমন– সেটাও বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হয় বলে জানান রহমান।

পরীক্ষা করার পরে ওই চায়ের গ্রেডিং এবং রেটিং করা হয়, একইসাথে চায়ের মূল্যও নির্ধারণ করা হয়।

এরপর সেই গ্রেড আর মূল্যের ওপর ভিত্তি করে একটা ক্যাটালগ তৈরি করা হয়, এরপর নিলামের আগেই ক্রেতাদের কাছে নমুনাগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয়।

“ক্রেতারাও সেসব নমুনা পরীক্ষা করেন যাচাই বাছাই করে দেখেন। এরপর নিলামের দিন ক্যাটালগটি হাতে নিয়ে তারা বসেন। এরপর শুরু হয় দাম হাঁকানো। সেখানে আমরা হেমারিং করে চা বিক্রি করি। এটা বিশাল বড় একটা কাজ,” বলছিলেন মায়িশা।

“নিলামটা যখন শেষ হয় তখন আমরা ডেলিভারি ইস্যু করি। আমাদের অফিস থেকে ক্রেতারা সেটা সংগ্রহ করেন এবং চায়ের গুদাম থেকে তাদের ক্রয়কৃত চা তারা বুঝে নিয়ে নেন”।

চায়ের স্বাদ পরীক্ষা করে করে মানটা সঠিকভাবে নির্ণয় করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন মায়িশা।

একজন শিক্ষানবিশ ‘টি টেস্টার’ হিসেবে নিজের পরিবারসহ সহকর্মী ও সিনিয়রদের যথেষ্ট সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছেন উল্লেখ করে মায়িশা বলেন ‘আমি আসলে লাকি যে এরকম সাপোর্ট পাচ্ছি, শিখতে পারছি’।

“আমার বাবা আমাকে হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন। চায়ের ফিল্ড থেকে ফ্যাক্টরি পর্যন্ত আমার চাচা নানা বিষয়ে ধারণা দিচ্ছেন, শেখাচ্ছেন, যিনি এখন ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে আছেন। চায়ের ম্যানুফাকচারিং ও মার্কেটিংয়ের বিষয় শিখছি বাবার কাছ থেকে”।

“যেমন চায়ের কোন লিকারটা কেমন হতে পারে, কোন লিকারটা ভালো– বা কোনো আছে কিনা ভালো কাপ না খারাপ কাপ– এটা নির্ণয় করাটা খুব কঠিন। এটা বেশি চ্যালেঞ্জিং এখনও আমার কাছে,” বলেন মায়িশা রহমান।

নারী হিসেবে নিলাম পরিচালনায় বেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নে মায়িশা বলেন “আমাদের দেশে মেয়েরা সবক্ষেত্রে নিরাপদ না। ভিন্ন পেশাতে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়। তবে আমি এক্ষেত্রে ভাগ্যবান কারণ পজিটিভ সবকিছু পেয়েছি”।

প্রথম নিলামের সময়ও সবাই তাকে সহজভাবে গ্রহণ করেছে বলে জানান মায়িশা।

“যখন আমি নিলামে ডাক দেই, আমাকে নেগেটিভভাবে কেউ নেয়নি। নিলামের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে, চা বিক্রির নির্ধারিত সময় দেয়া থাকে। আর নির্ধারিত সময়েই নির্ধারিত চা বিক্রি করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে বিক্রি করতে না পারলে তা পরের নিলামে তোলা হয়”।

কিন্তু প্রথম নিলামে ক্রেতারা তাড়াহুড়া না করে মায়িশাকে সময় দিয়ে সহযোগিতা করেছে যাতে কাজটি তিনি ধীরেসুস্থে করতে পারেন।

"আমি নিলাম ডাকলে সিনিয়ররাও খুশি হোন। আমাকে ভালোভাবে কাজ করার জন্য নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে অন্য ব্রোকার্সের সিনিয়ররাও,’ বলছিলেন মায়িশা।

কেন যুক্ত হলেন এই পেশায়?
দাদা-বাবা-চাচাদের পথ ধরে চা শিল্পের সাথে যুক্ত হয়েছেন মায়িশা রহমান। বলা যায় চা-পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য মায়িশা।

যদিও চায়ের নিলামকারী হবার কোনো স্বপ্ন ছিল না মায়িশার, তবে এক ধরনের ভালোবাসা ছিল এই চা আর চা-বাগানের প্রতি।

বিবিসি বাংলার সাথে আলাপকালে হাসতেই হাসতেই বলছিলেন “ছোটবেলায় একেক সময় একেক স্বপ্নের কথা বলতাম। কিন্তু এখন শখের বশে চায়ের সাথে যুক্ত হয়ে কাজটাকে ভালোবেসে ফেলেছি।”

এখন এখানেই ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখছেন মায়িশা রহমান।

“ছোটবেলা থেকেতো দেখেই আসছি। আব্বু চা টেস্ট করতো নিলাম করতো, নিলামের আগে টেনশান দেখতাম। আব্বু মার্কেট রিপোর্ট রেডি করছে, চা টেস্ট করছে। নিলামের আগে আব্বু আর অন্যান্য ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে কাজ করতো তা দেখতাম। ওটা মনে হয় মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল”।

“আমি চা পরিবারের মেয়ে। ছোট বেলা থেকে দাদা, বাবা চাচাকে দেখে আসছি। আমার দাদা প্রয়াত মোখলেসুর রহমান ১৯৫৬ সালে শ্রীমঙ্গলে নন্দরানী চা–বাগানে ম্যানেজার ছিলেন। উনি পাকিস্তান আমলে বাঙ্গালি ম্যানেজারদের মধ্যে অন্যতম একজন। আমার বাবা এবং ছোট চাচাও চায়ের সাথে যুক্ত”।

“ওইযে বলে না মাটির টান, নাড়ির টান আমারও ওরকম একটা টান হয়ে গেছে” চায়ের প্রতি যুক্ত হওয়া নিয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানাচ্ছিলেন মাইশা রহমান। সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’

সকল