২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারীদের নিয়ে মন্তব্য করে রোষানলে ভারতের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা

ভীর দাস - ছবি : সংগৃহীত

ভারতের শীর্ষস্থানীয় একজন কমেডিয়ানের বলা একটি কৌতুকের জের ধরে দেশটির কিছু মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকে আবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং ওই অভিনেতার অনেক সহশিল্পীও তার সমালোচনা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে তার শো চলার সময় ভীর দাস একটি দেশের দুটি বিপরীত অবস্থানের কথা বর্ণনা করেছেন - বলেছেন ‘দিনের বেলায় মানুষ নারীদের পূজা করে, কিন্তু রাতে তাদের গণধর্ষণ করে।’

তার এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর তিনি এটিকে ‘দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ভারতের সহাবস্থানের বিষয়ে রম্য’ বলে অভিহিত করেছেন।

অন্যরা আবার এমন রম্যের প্রতি সমর্থন দেখিয়েছেন, যারা উঠে দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।

তার চলমান বিশ্ব ভ্রমণের অংশ হিসেবে গত ১২ নভেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে ওই বক্তব্য বা মনোলোগটি পরিবেশিত হয়েছিল।

পরে সাত মিনিটের একটি ভিডিও অনলাইনে আপলোড করা হয় এবং সেটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

দর্শকদের উদ্দেশ্যে ৪২ বছর বয়সী এই কৌতুক অভিনেতা বলেন, ‘আমি এমন একটি ভারত থেকে এসেছি যেখানে একিউআই বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (বায়ু মানের সূচক) ৯০০০, কিন্তু আমরা এখনো ছাদে ঘুমাই এবং আকাশের তারা দেখি।’

‘আমি এমন একটি ভারত থেকে এসেছি যেখানে আমরা নিরামিষভোজী হওয়ার জন্য গর্ব করি, এবং তারপরও আমাদের শাকসবজি চাষী কৃষকদের চাপা দিতে পিছপা হই না।’ গত মাসে বিক্ষোভকারী কৃষকদের উপর উঠিয়ে দেয়া সরকারি এক মন্ত্রীর মালিকানাধীন একটি গাড়ির কথা উল্লেখ করে তিনি একথা বলেন। ওই ঘটনায় অন্তত আটজন কৃষক নিহত হয়েছিলেন।

ক্ষমতাসীন ডানপন্থী বিজেপি দলের দিল্লির একজন মুখপাত্র বলেছেন, তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভীর দাসের বিরুদ্ধে। সেখানে ‘নারী ও ভারতের বিরুদ্ধে অবমাননাকর বক্তব্য’ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

আদিত্য ঝা বলেন, ‘এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে দেয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। আমি চাই পুলিশ এর তদন্ত করুক।’

ভীর দাস তার কিছু সহকর্মীরও সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। তিনি ইনস্টাগ্রামের এক পোস্টে ভীর দাসের ক্রিয়াকলাপকে ‘মৃদু সন্ত্রাস’ বলে অভিহিত করেছেন। সেই সাথে বলেছেন, ‘এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

তবে অনেক বিরোধী রাজনীতিবিদ কৌতুক অভিনেতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের একজন সদস্য শশী থারুর টুইটারে লিখেছেন, ভীর দাস ‘লাখ লাখ মানুষের জন্য কথা বলেছেন।’ সেই সাথে বলেছেন, ‘তিনি একজন স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান- যিনি জানেন যে ‘স্ট্যান্ড আপ’ শব্দের আসল অর্থ শারীরিক বা বস্তুগত নয় বরং নৈতিক।’

ভীর দাস ইন্সটাগ্রাম পোস্টে তার অভিনয়ের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অনুষ্ঠানটি ছিল ‘দুটি খুব আলাদা ভারতের - যারা ভিন্ন ভিন্ন জিনিস করে।’

তিনি লিখেছেন, ‘যেকোনো জাতিরই যেমন ভালো-মন্দ, আলো-আঁধার দুটি দিকই আছে। এগুলোর কোনোটিই গোপন নয়।’

দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানানোর বিষয়টিকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি বড় ধরনের দেশাত্মবোধক সাধুবাদের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়; এমন একটি দেশের জন্য যাকে আমরা সবাই ভালোবাসি, বিশ্বাস করি এবং গর্ব করি।’

‘দয়া করে এডিট করা কিছুর টুকিটাকি কথায় প্রতারিত হবেন না।’

ভীর দাসের বিরুদ্ধে এমন প্রতিক্রিয়া আরো একটি সাম্প্রতিক মামলার প্রতি ইঙ্গিত করে। সেখানে কৌতুক অভিনেতা মুনাওয়ার ফারুকীকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাভোগ করতে হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল - তিনি হিন্দু দেবতাদের সম্পর্কে ‘অশালীন মন্তব্য’ করেছেন।

এর পর ডানপন্থী হিন্দু সংগঠনের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পাওয়ার পর মুনাওয়ার ফারুকী তখন থেকে তার একাধিক কনসার্ট বাতিল করেছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে থাকা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তারা বিজেপি দলকে খারাপ দেখায় এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় এবং সমালোচনামূলক প্রতিবেদনের জন্য সাংবাদিকদের গ্রেফতার করে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement