২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আট কোটি ছাড়িয়েছে : জাতিসঙ্ঘ

 বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আট কোটি ছাড়িয়েছে - জাতিসঙ্ঘ-সহিংসতা-নিরাপত্তা-জলবায়ু পরিবর্তন-শরণার্থী
বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আট কোটি ছাড়িয়েছে : জাতিসঙ্ঘ -

সহিংসতা, নিরাপত্তার ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

শুক্রবার ইউএনএইচসিআর ‘মিড ইয়ার ট্রেন্ড রিপোর্ট’ শিরোনামের প্রতিবেদনে ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসের তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের এ তথ্য জানিয়ে বলেছে বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ২৪ লাখ যা পরবর্তী ৬ মাসে বেড়ে ৮ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ইউএনএইচসিআর বলছে এ সংখ্যা বৃদ্ধিতে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সহিংসতা, করোনা মহামারী, দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন বাস্তুচ্যুতদের মানবিক দুর্দশাকে আরো জটিল করে তুলেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহিংসতা, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে যা মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করছে।

তিনি বলেন, বছরের প্রথমার্ধে বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাত ও সহিংসতার কারণে লাখ লাখ মানুষ তাদের নিজ দেশের অভ্যন্তরেই এক যায়গা থেকে পালিয়ে আরেক যায়গায় যেতে বাধ্য হয়েছেন যার মধ্যে বেশিরভাগ নতুন বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে আফ্রিকায়। আফ্রিকার কঙ্গোতে ও ইথিওপিয়াতে বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং এশিয়ার আফগানিস্তান ও মিয়ানমারেও সহিংসতার কারণে বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন।

একই সাথে বছরের ছয় মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক মানুষ নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেয়ায় বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ১০ লাখের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ইউএনএইচসিআর।

সংস্থাটি বলেছে, বেশিরভাগ নতুন শরণার্থী মাত্র পাঁচটি দেশ থেকে এসেছেন। এদের মধ্য রয়েছেন আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের ৭১ হাজার ৮০০ জন, দক্ষিণ সুদানের ৬১ হাজার ৭০০ জন, সিরিয়ার ৩৮ হাজার ৮০০ জন, আফগানিস্তানের ২ লাখ ৫ হাজার ২০০ জন এবং নাইজেরিয়ার ২০ হাজার ৩০০ জন শরণার্থী।

ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই তাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে হবে। একই সাথে বাস্তুচ্যুত সম্প্রদায় ও তাদের আশ্রয়দাতাদের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশে আভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা মোট কত তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া খুবই দুষ্কর বলে জানিয়েছেন ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শারিফুল হাসান। তবে তিনি বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিকেল ইনফরমেশান সার্ভিসেস এর এ সংক্রান্ত তথ্যের উল্লেখ করেছেন যাতে বলা হয়েছে ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় ১৭০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদী ভাঙ্গনের কারণে বিলীন হয়ে গেছে যার ফলে ১৭ লাখ ১৫ হাজার জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

শরিফুল হাসান, সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। নদী ভাঙ্গন, বন্যা এবং অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সারা বিশ্বে ৪ কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন যার মধ্যে ৪৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বাংলাদেশে।

তিনি বলেন, এ সকল বাস্তুচ্যুত মানুষ সাধারণত দেশের বিভিন্ন শহরাঞ্চলের বস্তিতে আশ্রয় নেন। তাদের বেশির ভাগই কর্মসংস্থানের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করে থাকেন। এদেরকে যদি বিভিন্ন কাজে প্রশিক্ষণ দেয়া যায় এবং তাদের দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় তবে তাদের দুর্দশা অনেকটা লাঘব হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
সূত্র : ভয়েস অফ অ্যামেরিকা

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement