২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

টিকার ট্রায়ালের অনুমতি দিতে আইনি নোটিশ বঙ্গভ্যাক্সের

টিকার ট্রায়ালের অনুমতি দিতে আইনি নোটিশ বঙ্গভ্যাক্সের - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের টিকা বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দিতে সরকারের কয়েকটি দফতরকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে দেশীয় কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক।

নোটিশে বলা হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অনুমতির বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া না হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে।

সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সচিব, স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সারা বিশ্বের মিডিয়ায় সেই অর্জনের কথা ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ সারা বিশ্ববাসীকে মহামারী থেকে রক্ষা করতে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে।

এতে আরো বলা হয়, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত বঙ্গভ্যাক্সকে অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এরপর মানবদেহে পরীক্ষামূলক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্ব ১ এবং ২ এর জন্য বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের কাছে নিকট নৈতিক অনুমোদনের জন্য ১৭ জানুয়ারি আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি।

বিএমআরসি ৯ ফেব্রুয়ারি কিছু সংশোধন-বিয়োজন করার জন্য চিঠি দিলে গ্লোব বায়োটেক ১৭ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সংশোধিত রিসার্চ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেয়। কিন্তু এরপরে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বিএমআরসি সম্পূর্ণ নিরব থেকেছে এবং বাংলাদেশী টিকাটির পরীক্ষার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

নোটিশে আরো বলা হয়, সর্বশেষ বিএমআরসি ২২ জুন একটি চিঠি দিয়ে গ্লোব বায়োটেককে জানায় যে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগে বানর বা শিম্পাঞ্জির ট্রায়াল করতে হবে, তবেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক অনুমোদনের বিষয়ে চিন্তা করবেন তারা।

নোটিশে বলা হয়, বানর বা শিম্পাঞ্জির শরীরে পরীক্ষা চালাতে হলে থার্ড পার্টি রিসার্চ ল্যাবের প্রয়োজন কিন্তু বাংলাদেশে এই ধরনের কোনো গবেষণা ল্যাব নেই। গ্লোব বায়োটেক বানর এবং শিম্পাঞ্জির শরীরে পরীক্ষা চালানোর জন্য ইন্ডিয়া এবং চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা বলেছে এই মুহূর্তে তাদের হাতে সময় নেই এবং দরখাস্ত সরকারের মাধ্যমে করতে হবে। এটি সময়সাপেক্ষ এবং এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।

গ্লোব বায়োটেকের পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, ফাইজার ও মডার্নার টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার এবং কর্তৃপক্ষ একে অপরের সাথে মিলেমিশে ভ্যাকসিন তৈরি ও সেটি প্রয়োগের উপযোগী করে তুলেছে। বঙ্গভ্যাক্স একটি নিউ জেনারেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে আমেরিকা এবং জার্মানির ফাইজার ও মডার্না টিকা।

গ্লোব বায়োটেকের অভিযোগ, এটি স্পষ্ট যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন না দিয়ে বানরের শরীরে ট্রায়ালের জন্য শর্ত জুড়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে টিকাটি উৎপাদন করতে বা অনুমোদন পেতে আরও অনেক সময় অতিবাহিত হয় এবং এটি যাতে আলোর মুখ না দেখে। যদি বানরের শরীরে প্রয়োগের প্রয়োজন হতো তবে বিএমআরসি আরও পাঁচ মাস আগে গ্লোব বায়োটেককে কেন এই শর্ত বলে দেয়নি।

গ্লোব বায়োটেকের বিজ্ঞানীরা গত বছরের ২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে আসার কথা প্রথম জানান।

তারা প্রাথমিকভাবে ইঁদুরের শরীরে ওই টিকা প্রয়োগে সাফল্যের কথাও জানান। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্ভাব্য টিকার তালিকায় নাম ওঠে বঙ্গভ্যাক্সের। ৬ জানুয়ারি টিকাটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

এ বছরের ৫ জুলাই টিকার ট্রায়ালের জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরে বানর ধরতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী। করোনা প্রতিরোধে বঙ্গভ্যাক্সের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য তারা বানর ধরতে গিয়েছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া বানর ধরেন। এ কারণে তাদের বাধা দেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement