২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

তারকারা এত সমালোচিত কেন

তারকারা এত সমালোচিত কেন - ছবি - সংগৃহীত

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পর দেশের তারকাদের নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেরই মন্তব্য, খ্যাতি পেয়ে গেলে যে দায়িত্ব বেড়ে যায় সেটা আমাদের দেশের তারকারা হয়তো ভুলে যান। তাই সব অঙ্গনের তারকাদের মধ্যে তৈরি হয় এক ধরনের অহমিকা। যা তার অবস্থানকে সমালোচনায় ফেলে। সম্প্রতি অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির বিয়ে ভাঙার খবর, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের স্ট্যাম্পে লাথি এবং ক্লাবপাড়ায় পরীমণির বিষয়টি নিয়ে হয়েছে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা। অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির বিয়ে ভাঙার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার হওয়ার কারণ হলোÑ দুই বছর আগে তিনি স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন। অথচ তিনি স্বামীর সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন, থেকেছেন আগের মতোই। যা সামাজিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের দেশের সাথে যায় না। অপর দিকে কয়েকদিন আগে যখন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মাহি তার বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ করেন তখন তার স্বামী বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে খবরটি অস্বীকার করেন। পরে মাহি যখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিচ্ছেদ নিয়ে কথা বলেছেন তখন তার স্বামী অপু বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন। এ দিকে সর্বশেষ রোববার আবারো স্বামীর সাথে ফেসবুকে পুরনো ছবি দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি।

অন্য দিকে ঢাকা বোট ক্লাবে নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর অভিনেত্রী পরীমণির প্রতি সহানুভূতি ছিল বেশির ভাগ মানুষের। কিন্তু গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবের ভিডিওটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলে তাকে নিয়েও শুরু হয় সমালোচনা। এই সমালোচনার মধ্যে পরীমণি তার মোবাইল ফোন অফ করে সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। বিষয়টি নিয়ে নির্মাতা অনন্য মামুন বলেন, ‘আমাদের দেশে কারণে-অকারণে সমালোচনা হয়। এতে অপরাধের কারণে কোনো সমালোচনা হচ্ছে কিনা সেটা বোঝা মুশকিল। অনেক সময় দেখা যায়, আমি একটা বিষয়ের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। অথচ সেখানে আমার নাম নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে। এ কারণেই আমরা অনেক সময় ত্রুটিগুলো দেখিয়ে দিলেও সুধরানোর চেষ্টা করি না। তারকাদের নিয়ে এত সমালোচনা হচ্ছে।’ মাহি-পরীর বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, তারা দু’জনই আলাচিত অভিনেত্রী। দু’জনের জায়গা থেকে যতটুকু দায়িত্বশীল হওয়ার দরকার ছিল, আচরণে তারা ততটুকু প্রকাশ করতে পারেননি। এ কারণেই এত সমালোচনা। আর তারা বেশির ভাগ সময় অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা দেখায়।

এই ধারণ থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে, তা না হলে বিপদের শিকার হবেই। নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় এই নির্মাতা বলেন, ‘আমি সবসময় নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে চলতে পছন্দ করি। তাই ভালো-মন্দের বিচারটা আমি খুব ভালোভাবে করতে পারি। আমার নিজের জীবনের কথা বলি। ১৯৯৫ থেকে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় আবৃতিতে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। বগুড়ায় এক নামে সবাই চিনত। ৭২টির মতো পুরস্কার পেয়েছি। নান্দনিক থিয়েটারে কাজ করেছি। তারপর এসএসসি দিয়ে মিডিয়া করব বলে বাড়ি থেকে একরকম পালিয়েছি। ঢাকা শহরে কেউ নেই, কোনো পরিচিত কেউ নেই। ১৭ বছরের একটা ছেলে একাই যুদ্ধ করেছি। টাকা নেই তিন মাস। তেজগাঁও যাত্রী ছাউনির ফুটপাথে ঘুমিয়েছি। কত দিন ছিলÑ না খেয়ে থেকেছি। সেখান থেকে আজকের এই অবস্থান। এখনো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আজো যুদ্ধ করছি, হার মানিনি। আজ সব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে, সব আইন শুধু আমার জন্য। কারণ আমার কোনো বড়ভাই বা খুঁটির জোর নেই। তাই বলে কি হেরে যাব, না- কখনো না। আমার যোগ্যতা দিয়ে আমাকে টিকে থাকতে হবে। এখন ভয় জিনিসটা আর ভেতরে কাজ করে না। একক যোদ্ধার ভয় কী? হয় জিতব না হয় মরে যাব। হারব না কোনো দিন।’

সব সময় যে তারকাদের নিয়ে সমালোচনা হয়। সেটাও ঠিক নয়। চলতি বছরের মে মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকের প্রোফাইল পিকচার বদলে যেতে থাকে। সেখানে জায়গা করে নেয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও তার মায়ের ছবি।

এর আগেই মা দিবসে চঞ্চল চৌধুরীর পোস্ট করা তার মায়ের ছবির নিচে একেকজন সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করতে থাকেন। এতে চঞ্চল চৌধুরী ক্ষুব্ধ হন। তারপর প্রতিবাদ হিসেবে প্রোফাইল পিকচার বদলিয়ে হ্যাশট্যাগে লেখেন ‘চঞ্চল চৌধুরী ইজ আওয়ার ব্রাদার’, ‘তোমার মা আমার মা’, ‘আমার মা, তোমার মা’, ‘স্টপ সাইবার বুলিং’, ‘হোক প্রতিবাদ’। সে সময় আক্রমণের শিকার হন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার, উপস্থাপক ও অভিনয়শিল্পী মিশু চৌধুরী। সম্প্রতি শুরু হয়েছে নায়িকা পরীমণিকে নিয়ে। তিনি ধর্ষণ চেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছেন। তবে পরীমণির বিভিন্ন পোস্টে পোস্টদাতাদের বেশির ভাগেরই মন্তব্য, কেন তিনি প্রোফাইল পিকচারে এমন ছবি দিয়েছেন। কেন এ ছবি পাল্টাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে সঙ্গীতশিল্পী তাহসান খান বলেন, ‘আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যৌক্তিক কারণ ছাড়া তারকাদের নিয়ে সমালোচনা হয়। অনেকেই আছে যারা তারকা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়েও বাজে মন্তব্য করে আনন্দ পান। কিছু মানুষ সবসময় তাদের চার পাশে নেতিবাচকতা ও ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করেন। এটা আসলে তাদের হীনম্মন্যতার প্রকাশ। তবে এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, সব জায়গায় আছে। এটা এক ধরনের মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এখন আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, কাউকে বাজে কথা বলা বা খারাপ মন্তব্য করার মধ্যে বীরত্ব নেই। বিশ্বজুড়েই বেশির ভাগ তারকা নানা কারণে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন না। আবার একই সাথে এটাও সত্য, ধীরে ধীরে এ প্রবণতার পরিবর্তন ঘটছে। এখন তারকারাও সাইবার বুলিং বা অনলাইনে হয়রানির বিরুদ্ধে কথা বলছেন, প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন; যা অনেক মানুষকে উৎসাহিত করছে এমন অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে।’


আরো সংবাদ



premium cement