১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা মহামারীর সময় যেভাবে কাটছে সিএনজিচালকদের জীবন

সঙ্কটে পড়েছেন ঢাকার কয়েক হাজার সিএনজি চালক - সংগৃহীত

মোহাম্মদ হাদিস উদ্দিন ১৯৯১ সাল থেকে ঢাকায় ভাড়ায় গাড়ি চালাচ্ছেন। বেবি ট্যাক্সি দিয়ে তার পেশাজীবন শুরু হয়েছিল এখন অনেক বছর ধরে সিএনজি চালাচ্ছেন।

তিনি বলছিলেন, করোনাভাইরাসের কারণে তিনি এখন যে ধরনের সমস্যায় পড়েছেন তার ৩০ বছরের পেশাজীবনে এরকম সমস্যায় পড়েননি।

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন গাড়ী বের করার পর অনেক জায়গায় ঘুরলে একটা ভাড়া মেলে। তাও যাত্রীরা ২০০ টাকার ভাড়া বলেন ১০০ টাকা। তাকে না দিলে দেখা যাবে এই ১০০ টাকাও পেলাম না। সারা দিন গাড়ী চালিয়ে দেখা যায় জমার টাকাই (প্রতি দিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা) ঠিক মতো ওঠে না। কোনো দিন ঘরে ২০০, কোনো দিন ১০০ টাকা নিয়ে যেতে পারি।’

লকডাউন আর রোজগার
এবারের লকডাউনে একটানা ১৪ দিন তিনি ঘরে বসে ছিলেন। সেই সময় তার কোনো আয়-রোজগার ছিল না।

গত বছর একটানা দু’মাস তাকে ঘরে বসে কাটাতে হয়েছে। সেইবার সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলেও এবার কোনো সাহায্যই পাননি। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি কখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা? হাদিস উদ্দিন দাবি করছেন, তিনি কখনোই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। যদিও তিনি কখনো এজন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেননি। তবে গত বছর তার ঠাণ্ডা লেগেছিল, কয়েক দিন পরেই ঠিক হয়ে যায়। ভালো হয়ে যাওয়ায় তিনি পরীক্ষা করানোর দরকার বোধ করেননি।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সঙ্কট শুরু হওয়ার শ্রমজীবী অনেক মানুষের নানারকম প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকের আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

এরকম সঙ্কটে পড়েছেন ঢাকার কয়েক হাজার সিএনজি চালক। যাদের দিনের পর দিন যেমন বসে থাকতে হয়েছে, তেমনি ছোঁয়াচে এই রোগের কারণে যাত্রী পরিবহনও অনেক কমে গেছে। আবার নানা শ্রেণী পেশার যাত্রী বহন করতে গিয়ে নিজেদেরও ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে।

‘দেশে করোনা বলে কিছু নাই’
আগের সিএনজি চালানোর সাথে বর্তমান সময়ের পার্থক্য করতে গিয়ে হাদিস উদ্দিন বলছেন, ‘এখন অনেকে সচেতন হয়েছে, মাস্ক পড়েন, স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন। আবার অনেকের ভাব দেখে মনে হয়, দেশে করোনা বলে কিছু নাই।’

তিনি নিজেও ভয়ে থাকেন, কোনো ভাবে নিজে সংক্রমিত হয়ে পড়েন কি না, যা তার মাধ্যমে পরিবারের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

খিলগাঁয়ে হাদিস উদ্দিনের সিএনজি গ্যারেজ, সেখানে গিয়ে তার মতো অনেক চালকের সাথে দেখা হল। তাদের সবার গল্প অনেকটা একই রকম।

এখানকার পরিচালক রিফায়েতউল্লাহ বলছেন, শুধু চালক নয়, ক্ষতির মুখে পড়েছেন মালিকরাও। করোনা যেই সময় বেশি আছিল, আমাদের রিকশা নিয়াও গাড়ী ছাড়তে হয়েছে। কারণ ড্রাইভিং না খেয়ে থাকে, বাজার করতে পারছে না। রাস্তায় সার্জেন্ট মামলা করে। তারপরেও আমরা গাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।

তিনি জানান, তাদের ৫২ টি সিএনজির অর্ধেকের বেশি এখন পড়ে থাকে। কারণ চালক নেই, অনেকে দেশে গিয়ে আর আসেনি।

সংসার চালানো কঠিন
দক্ষিণ গোঁড়ানের একটি টিন শেড একতলা ভবনের একটি কক্ষে মো: হাদিস উদ্দিন বসবাস। এই একটি রুমেই তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন।

তার স্ত্রী মোসাম্মাৎ রহিমা বলছেন, করোনাভাইরাস সঙ্কট শুরু হওয়ার পর তার জন্য সংসার চালানো এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তাকে (হাদিস উদ্দিন) নিয়ে অনেক চিন্তা করতে হয়। উনি বাইরে যায়, করোনাভাইরাসের ডর। আগের চেয়ে ইনকাম কম হয়। আগে ভালো টাকা কামাইছে, এখন টাকা পয়সা কামাইতে পারতেছেন না। এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছে সংসার চালানো। সারাক্ষণ এই ভয়ে থাকি, তিনি কি রুগী লইলেন কিনা, আক্রান্ত হইলেন কিনা।

মো: হাদিস উদ্দিন বলছেন, প্রতিদিনের আয়ের ওপরেই তাদের জীবিকা নির্ভর করতে হয়। ফলে নিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও তাদের প্রতিদিন কাজে বের হতে হয়। কিন্তু ছোঁয়াচে এই রোগের কারণে যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একজন যাত্রী মেলে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
বুয়েটে নতুন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নিয়োগ পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহতদের পরিবারের সাথে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ সখীপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সেই আ'লীগ নেতা কারাগারে ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪ ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ, চুক্তি বাতিল স্নান করতে গিয়ে দূর্গাসাগর দীঘিতে ডুবে একজনের মৃত্যু ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা মানবতার কল্যাণে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে : জামায়াত আমির

সকল