২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘করোনায় আট মাস বেকার ছিলাম, অনেক কষ্ট করেছি’

‘করোনায় আট মাস বেকার ছিলাম, অনেক কষ্ট করেছি’ - ছবি : সংগৃহীত

ঢাকার মোহাম্মদপুরের কলেজগেট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম। গত বছর মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর যে বিপর্যয়ে পড়েছেন তিনি তেমন অভিজ্ঞতা তার প্রায় দু'দশকের রেস্তোরাঁয় কাজের অভিজ্ঞতায় সম্পূর্ণ নতুন।

লকডাউন আর সাধারণ ছুটির সময়কালে রেস্তোরাঁ হঠাৎ বন্ধ গেলে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তিনি, যার ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আট মাস বেকার থেকে আমার বাসা ছেড়ে দিতে হয়েছে। আমার পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে। আবার যখন চাকরি নিলাম আবার করোনায় লকডাউন। মালিক দোকান খোলা রেখে পোষাতে পারে না। এজন্য হাফ বেতনে চলতে হচ্ছে। কোনো সার্ভিস নেই তাই ওয়েটার রেখে তো মালিকের লাভ নেই। এজন্য জীবন যাপন হয়ে পড়েছে কষ্টের।

বাংলাদেশের হোটেল রেস্তোরাঁয় যে হাজার হাজার ওয়েটার কাজ করেন তাদের বেশিরভাগই কাজ করেন দৈনন্দিন আয়ের ভিত্তিতে।

আনুষ্ঠানিক নিয়োগ প্রক্রিয়া অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট বেতন, নিয়োগপত্র নিয়ে কাজ করা বা চাকরি ছাড়লে সুবিধা পাওয়ার মতো বিষয়গুলো এ খাতের শ্রমিকদের জন্য নেই বললেই চলে। এমনকি শ্রম আইনের আওতায় মজুরি কাঠোমাতে সর্বনিম্ন বেতন তিন হাজার টাকা দেয়ার কথা থাকলেও অনেকেই তা পান না।

এসব কারণে তাদের নির্ভর করতে হয় প্রতিদিনের আয়ের উপর। মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলছিলেন, স্বাভাবিক সময়ে তার আয়ের ওপরই নির্ভরশীল ছিলো গ্রামে বাবা-মাসহ তার পরিবারের সদস্যরা। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি ও তার সহকর্মীদের অনেককেই অনেক টাকা ঋণও করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইব্রাহিম বলেন, এখানেই আমরা ৭০ থেকে ৮০ জন। সবাই অনেক কষ্ট করেছি। তাদের জীবন যাপন কষ্টের ছিলো। আমরা তো যা আয় করি এখানে, সেটাই। বাড়তি তো কোনো ইনকাম নেই। সেজন্য আমাদের কষ্টটাও ছিলো বেশি।

হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৬০ থেকে ৭০ হাজার রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন ধরণের কাজ করেন অন্তত ১৫ লাখ শ্রমিক। যার মধ্যে ওয়েটার, সহকারী ওয়েটার, বাবুর্চি, সহকারী বাবুর্চি, রুটি কারিগরসহ বিভিন্ন ধরণের কাজ করে থাকেন।

তবে কিছু রেস্তোঁরা পার্সেল সার্ভিস বা হোম ডেলিভারি চালু রাখায় বাবুর্চি বা রান্নার কারিগররা কাজে থাকলেও ওয়েটারদের কোন প্রয়োজনীয়তা ছিলো না।

ফলে মোহাম্মদ ইব্রাহীমের মতো ওয়েটারদের হঠাৎ করেই আয়হীন হয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। মোহাম্মদ ইব্রাহীমের স্ত্রী মোসাম্মৎ রেশমি বলছেন, মাস শেষে টাকা আসতো নিয়মিত সেটি বন্ধ হয়ে পড়ায় পরিবারের প্রতিটি মানুষকে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের মধ্যেই দিন পার করতে হয়েছে।

স্বামীর চাকরি চলে গেছে। বাসা ভাড়া দিতে পারিনি। খেতে পারিনি ঠিক মতো। দু'তিন মাস বাসা ভাড়া বাকি পড়ছে। বাড়িওয়ালার কথা শুনতে হইছে। ঠিকমতো দিতে পারিনি বলে চলে গেছি গ্রামের বাড়িতে। এভাবে খাইছি, চলছি, ধার করছি। বর্তমানে অনেক দেনা আছি। সন্তানদের কিছু দিতে পারিনি। এভাবে ধার কর্য করে চলতেছি।

তবে শুধু ঢাকাতেই নয়, ঢাকার বাইরেও বিশেষ করে বড় শহরগুলোর রেস্তোরাঁয় কাজ করা ওয়েটারদের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই। সিলেটের আনসার আলী বলছিলেন, তিনি এখনো চাকরির অপেক্ষায়।

আনসার আলী বলেন, আমার পেশা হলো চাকরি আর চাকরিটা হলে আমি ওয়েটার। আমার ওয়েটারির ওপর পরিবার নির্ভরশীল।

বেশি কষ্ট হয়েছে কারণ আমি আর কোনো কাজ জানি না। গত বছর লকডাউন ঘোষণার পর থেকে আমি এখনো বেকার। আর সিলেটের লকডাউন কিছুটা শিথিলের পর কিছু রেস্তোরাঁ খুললেও অর্ধেক শ্রমিক কাজ পেয়েছে। বাকিরা কাজ পায়নি। এখন অপেক্ষা করছি যদি লকডাউন উঠে যায় তাহলে কাজ শুরুর চিন্তা করছি।

তবে কবে আবার কবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ ফিরে আসবে এবং তার মতো ওয়েটাররা রেস্তোরাঁয় কাজ ফেরত পাবে, সেটি করোরই জানা নেই।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম আজও স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৮ এপ্রিল খুলে দেয়ার প্রস্তুতি, ক্লাস চলবে শনিবারও মিরসরাইয়ে জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে লুট, মূল হোতা গ্রেফতার বৃষ্টি কামনায় ঈশ্বরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইসতিসকার নামাজ আদায় কুবিতে আল্টিমেটামের পর ভিসির কার্যালয়ে তালা ঝুলাল শিক্ষক সমিতি সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ শ্রমিক নিহতের খবরে ঈশ্বরগঞ্জে শোক

সকল