২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনার মধ্যেও যেভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ

করোনার মধ্যেও যেভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ - ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় কর্মরত আমিনুল ইসলাম (ওসি তদন্ত)। নিজ কক্ষে একা বসে থাকার সুযোগ নেই তার। একটু পর পরই থানার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কাজের জন্য আসছেন সাধারণ মানুষও।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর যেসব পেশার মানুষকে সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করতে হয়েছে, তারই একটি পেশা পুলিশ।

আমিনুল ইসলাম বলছিলেন, সাড়ে ১৩ বছরের এই পেশাজীবনে করোনাভাইরাসের মতো আর কোনো চ্যালেঞ্জ এত দীর্ঘ সময় তার মোকাবিলা করতে হয়নি। প্রতিদিনই আমাদের জনগণের বা মানুষের ক্লোজ কন্টাক্টে যেতে হচ্ছে। কাজটা আসলেই চ্যালেঞ্জিং। একটা আতঙ্ক তো সবসময়ই কাজ করে। তারপরেও আমরা বসে থাকতে পারি না বা বসে থাকার সুযোগও নেই।

চব্বিশ ঘণ্টা কাজ
তিনি জানান, করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতি পুলিশকে এখন দু’টি ভাগে কাজ করতে হচ্ছে।

তাদের নিয়মিত দায়িত্বের অংশ হিসেবে যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, মামলার তদন্ত করা কাজটি করতে হচ্ছে। একই সাথে করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন বিধিনিষেধ, নির্দেশনা বাস্তবায়নে শুরু থেকেই পুলিশকে মাঠ পর্যায়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সম্মুখসারিতে থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জন সাধারণকে করোনা থেকে সচেতনতা ও সুরক্ষায় বাধ্য করার কাজটিও করছে এই বাহিনী।

পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি এই চ্যালেঞ্জের অংশ হতে হচ্ছে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও।

আমিনুল ইসলাম বলছিলেন, আমি যখন কাজ শেষে বাসায় ফিরে যাই, তখন কিন্তু প্রথমেই গোশল করে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করে, ফ্রেশ হয়ে তারপর পরিবারের সদস্যদের সাথে মিশি। তারপরেও একটা ভয় থেকে যায়, আমি যদি ফ্লু-টাকে বহন করে বাসায় নিয়ে যাই, আমার মাধ্যমে তারাও আক্রান্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। ফলে একটা অজানা আতঙ্ক সবসময়ই থেকে যায়।

তারপরেও তার কাজের ক্ষেত্রে পরিবার কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি বলে তিনি বলছেন।

কিন্তু পরিবারের একজন সদস্য যখন এ ধরনের কাজে বের হয়, তখন অন্য সদস্যদের কী পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়?

আমিনুল ইসলামের স্ত্রী ডা: তানহা তাসনুভা বলছিলেন, প্রথমত আমরা সবাই তাকে নিয়ে চিন্তায় থাকি যেন তিনি সুস্থ থাকেন, তাকে যেন এই ভাইরাস অ্যাটাক না করে। দ্বিতীয়ত বাসায় আমার ছোট বাচ্চারা আছে, সাথে আমার বয়স্ক মা-বাবা থাকেন। তাদের শারীরিক জটিলতা আছে। ফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরাও একটা চিন্তায় থাকি।

দায়িত্ব পালনে আক্রান্ত
বাংলাদেশ পুলিশের হিসেবে, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে র‍্যাব ও পুলিশ মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২০ হাজার ৭৫৩ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের।

পেশাগত কাজ করতে গিয়ে গত বছর নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় আমিনুল ইসলামকে। সুস্থ হওয়ার পরদিনই তাকে আবার কাজে ফিরে আসতে হয়েছে।

আমিনুল ইসলাম বলছিলেন, গত সেপ্টেম্বরে কাজ করতে গিয়েই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। সুস্থ হতে আমার ২০ দিনের বেশি সময় লেগেছে। সুস্থ হয়ে কিন্তু আমি আবার আমার কাজে যোগদান করেছি এবং আগের মতোই আমার কাজ করছি।

ওই সময়টা পরিবারের সবার জন্য একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি গিয়েছিল বলে বলছেন তানহা তাসনুভা। তিনি বলেন, এটা ওর যেমন কষ্ট, তেমনি আমার কষ্ট, আমার বাচ্চাদের জন্যও ভয়াবহ কষ্টের ছিল।

ওই সময় তিনি এবং তার একটি সন্তান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

পুলিশ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলছেন, শুধু করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নয়, সেটি নিয়ে কাজ করতে গিয়েও তাদের অন্য ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখেও পড়তে হচ্ছে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, অনেকে সরকারি নির্দেশনা, আমাদের অনুরোধ সহজেই মানে না। আবার একাংশ মানুষ রয়েছেন, যারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না। তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ঘোরাফেরা, মার্কেটে যাওয়া ইত্যাদি করছেন। তবে আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এই রকম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে সম্মুখসারিতে যাদের কাজ করতে হচ্ছে, কিছু দিন পরপর তাদের কাজ থেকে বিরতি দেয়ার সুযোগ দেয়া হলে সেটি তাদের নিজের ও পরিবারের ঝুঁকি হয়তো কমিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement