২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
৩০ শতাংশেরই জরুরি কাজ নেই : পুলিশের দাবি

নানা অজুহাতে বাইরে বের হচ্ছে মানুষ

নানা অজুহাতে বাইরে বের হচ্ছে মানুষ - ছবি - সংগৃহীত

নানা অজুহাতে বাইরে বের হচ্ছে মানুষ। ফলে মানুষের চলাচল ও ভিড় বেড়েছে। বেড়েছে যানবাহন। সর্বাত্মক লকডাউনের পঞ্চম দিনে রোববার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দেখে বুঝার উপায় নেই যে, সরকারের বিধিনিষেধ চলছে। ওষুধ কেনা, বাজার করা, মোবাইলে টাকা রিচার্জ করাসহ নানা অজুহাতে কম বা বেশি প্রয়োজনীয় যেকোনো কাজেই ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষজন। সকালে লোকজনের চলাচলের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে অলিগলি থেকে প্রধান সড়কে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। প্রধান সড়কে কিছুটা কড়াকড়ি থাকলেও অলি-গলিতে অনবরত চলাফেরা করছে সাধারণ মানুষ। খোলা আছে সব ধরনের দোকান, চলছে বারোয়ারি গাড়ি।

বিভিন্ন এলাকায় জমে উঠেছে অস্থায়ী ভ্যানবাজার। বেশকিছু মহল্লায় বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হলেও মানছে না জনসাধারণ। অযাচিত ঘোরাফেরা বন্ধ করতে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ তৎপর ছিল। রিকশায় দুইজন দেখলে একজনকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেলে দু’জন ও মুভমেন্ট পাস না থাকায় দেয়া হচ্ছে মামলা। কারো কারো অভিযোগ, জরুরি প্রয়োজন দেখানোর পরও পুলিশ ফিরিয়ে দিয়েছে। অনেকে দাবি করেছেন, জরুরি কাজে বেরিয়ে তাদের জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেউ কেউ আবার বের হয়েছেন কাজ ছাড়াও। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বলছে, সড়কে বের হওয়া প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষেরই জরুরি কাজ নেই।

অন্যান্য দিনের চেয়ে গতকাল প্রধান প্রধান সড়কে গাড়ির চাপ ছিল অনেকটা বেশি। অনেক সড়কেই দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। সিএনজি-চালিত অটোরিকশা চললেও চোখে পড়েনি কোনো গণপরিবহন।

রাজধানীর জুরাইন, ধোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী, মানিকনগর, বাসাবো, পল্টন, মতিঝিল, বনানী ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছেÑ এসব এলাকার সড়ক এবং বাজারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। কারণে-অকারণে বের হওয়া এসব মানুষজনের মধ্যে অনেকেই আবার রাস্তায় এবং মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে।

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন যুবক। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হয়েছেন কেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে রায়হান নামে এক যুবক হাতে ব্যাগ দেখিয়ে বললেন, দোকানে আসছি কেনাকাটার জন্য। ঘর থেকে সচরাচর বের হওয়া হয় না। অনেক দিন পর বের হলাম তাই একটু আড্ডা দেয়া।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধোলাইপাড় চেকপোস্টে দেখা যায়, বেশ কয়েকটা রিকশা উল্টে রেখেছে পুলিশ। এ ছাড়া চলাচল করা যানবাহনগুলোকে তল্লাশি চৌকিতে আটকে দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। যৌত্তিক কারণ দেখাতে না পারায় কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহীকে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়কের এক গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা জনি বলেন, বাসায় আর কত থাকা যায়। এখন আর বাসায় থাকতে ভালো লাগে না। একটু বের হলে পুলিশ এসে লাঠি নিয়ে তাড়া করে। লকডাউনের ফলে কাজকর্ম সব বন্ধ। লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে আমরা মধ্যবিত্তরা সমস্যায় পড়ে যাবো।

ওই এলাকার টহল পুলিশের এক সদস্য বলেন, আমরা তো সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। কিন্তু মানুষ সচেতন নয়। কোনোভাবেই ঘরে রাখা যাচ্ছে না। টহলের সময় কোনো মানুষ পাই না; কিন্তু টহলের স্থান থেকে চলে এলে দেখা যায় মানুষ আর মানুষ। লকডাউন সফল করতে হলে সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

রাজধানীর পল্টন মোড় চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের এসআই রাফি জানান, কিছু অফিস ও ব্যাংক খোলার কারণে সড়কে মানুষের চাপ যেমন বেড়েছে, তেমন বেড়েছে গাড়ির চাপও। প্রত্যেককে চেক করা হচ্ছে। প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের প্রত্যেক যাত্রীর মুভমেন্ট পাস আছে কি না দেখা হচ্ছে।

এ দিকে মতিঝিল শাপলা চত্বরে পুলিশের চেকপোস্টে দেখা গেছে, রিকশায় দু’জন করে চলাচল করতে দিচ্ছে না পুলিশ। রিকশায় দু’জন দেখলেই পুলিশ একজনকে নামিয়ে হেঁটে যাওয়ার অথবা অন্য রিকশায় যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। মোটরসাইকেলে দু’জন চলাচল করলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ এবং মুভমেন্ট পাস আছে কি না চেক করা হচ্ছে।

কলাবাগান বশির উদ্দিন লেনের দোকানি গোলজার মোল্লা বলেন, সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার অনুমতি রয়েছে। অথচ পুলিশ এসে একটু পরপর দোকান বন্ধ করতে বলে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কিছু ক্রেতার কারণে আমাদের এমন সমস্যা হচ্ছে। অনেক ক্রেতাই আছেন যারা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এখনো ঠিকমতো মাস্ক না পরেই ঘোরাফেরা করছেন। যার ফলে পুলিশ এসে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ঠাকুরদাস মালো সাংবাদিকদের বলেন, এখনো মানুষজন সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ। অনেকে অযথাই ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন এবং জটলা করে আড্ডা দিচ্ছেন। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যেন সরকার নির্দেশিত নিষেধাজ্ঞাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়। প্রয়োজন হলে পুলিশ আরো কঠোর হবে।

বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ী রাস্তার সামনে দায়িত্বরত সার্জেন্ট মো: মোশাররফ বলেন, কিছু মানুষ আছেন যারা সামান্য কাজ নিয়ে বের হচ্ছেন, যে কাজগুলো এখন না করলেও চলে। সেই সব মানুষকে ফেরানো হচ্ছে। সবাইকে যাওয়ার অনুমতি দিলে আবার ভিড় বেড়ে যাবে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা বলছেন, প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ বের হয়েছেন কাজ ছাড়া। আর বাকিরা মুভমেন্ট পাস বা জরুরি কাজের জন্য রাস্তায় বের হয়েছেন।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে রাসেল স্কয়ারে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজ আলম বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে (গতকাল) গাড়ির চাপ অনেক বেশি। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে। অনেকেই মুভমেন্ট পাস ছাড়া বের হচ্ছেন। আমরা সবার কাছেই বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছি। যারা উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারছেন তাদের যেতে দিচ্ছি। আর যারা উপযুক্ত কোনো কারণ দেখাতে পারছেন না, তাদের জরিমানা ও শাস্তির আওতায় আনছি।


আরো সংবাদ



premium cement