২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশে টিকা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়

বাংলাদেশে টিকা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধার মুখে পড়েছে। ভারত সরকার টিকা রফতানি আপাতত বন্ধ করে দেয়ায় এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

বিকল্প কোনো উৎস থেকে টিকা আমদানির জন্য চেষ্টা চললেও এখনো তেমন কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। তাই এই মুহূর্তে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো বিকল্প সোর্স নেই।

এ দিকে টিকাদানে ধীরগতি আসতে পারে মনে করলেও এ বিষয়ে কোনো আশঙ্কা দেখছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু সিরামের ইনস্টিটিউটের টিকার বাংলাদেশী এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মা বলছে, চুক্তিমত টিকা কবে পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শুরুতে বিকল্প উৎস থেকেও টিকা নেয়ার চেষ্টা করা উচিত ছিলো বাংলাদেশের।

করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হওয়ার পর ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ বেক্সিমকোর ফার্মাসিউটিক্যালের মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা আসে গত জানুয়ারি মাসে। ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ২০ লাখ। এরপর সিরাম আর কোনো টিকা পাঠায়নি। কথা ছিলো প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে তারা। এপ্রিল মাসের অর্ধেক পার হয়ে গেলেও ফেব্রুয়ারি ও মার্চের ৮০ লাখ ডোজ টিকা এখনো হাতে পায়নি বাংলাদেশ।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের মোট ৭০ লাখ ডোজ টিকার বাইরে, ভারত সরকারের কাছ থেকে ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পায় বাংলাদেশ। এ ছাড়া ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে আরো ১২ লাখ টিকা উপহার দেন। আর ভারতের সেনাপ্রধান বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে উপহার দিয়েছেন এক লাখ ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে মোট এক কোটি তিন লাখ ডোজ টিকা। দুই ডোজ করে এই টিকা ৫১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে দেয়া সম্ভব।

‘বিকল্প অনেক উৎসের সাথেই টিকার জন্য যোগাযোগ করছি’
দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা দেয়া শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। এরপর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া শুর হয় ৮ এপ্রিল থেকে। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে মোট টিকা দেয়া হয়েছে ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৪৯ জনকে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৫৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪২ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে ১১ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৭ জনকে। সেই হিসেবে এখন বাংলদেশে করোনার টিকা মজুদ আছে ৩৫ লাখ ডোজ।

বর্তমানে প্রতিদিন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে গড়ে দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ টিকা নিচ্ছেন। ১৭ এপ্রিল প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ১২ হাজার ১৫৭ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন দুই লাখ ২১ হাজার ৬১৬ জন। টিকার জন্য প্রচুর আবেদন থাকার পরও প্রথম ডোজের টিকা প্রদান ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যে পরিমাণ টিকা মজুদ আছে তা এইভাবে চললে আগামী ১৫ দিনে শেষ হয়ে যাবে। এ দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বাংলাদেশের যে এক কোটি টিকা পাওয়ার কথা ছিলো তাও এখন অনিশ্চিত।

বাংলাদেশে প্রথম ধাপে এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সরকার।

তবে টিকা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী স্বাস্থ্য অধিদফতর অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও টিকাবিষয়ক কমিটির প্রধান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা আশা করছি সিরাম থেকে টিকা পাব। পরিমাণে হয়তো কম হবে। ধীরে ধীরে পাব। যেভাবে কথা ছিলো সেভাবে হয়তো হবে না। তাই আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একটু ধীর গতিতে হবে। তবে টিকা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।’

‘এখনো কোনো তারিখ বলতে পারব না’
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিরামের টিকার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও এ টিকার বাংলাদেশী এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মা এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয়। প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো তারিখ বলতে পারব না, কবে ভ্যাকসিন আসবে। আমরা কোনো ডেট পাইনি। ওখানকার সরকার এখনো রফতানির অনুমতি দিচ্ছে না।’

নতুন টিকা দেয়া তো কমিয়ে দেয়া হয়েছেই। এখন আশঙ্কা হচ্ছে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে কি-না। স্বাস্থ্য অধিদফতর এখন সেটাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে।

চলমান পরিস্থিতে সরকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। তবে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, টিকা পেতে চীন ও রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ করছে সরকার। যোগাযোগ করা হচ্ছে ফাইজার ও মডার্নার সাথে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা বিকল্প অনেক উৎসের সাথেই টিকার জন্য যোগাযোগ করছি। তবে এখানো সফল হইনি।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘টিকা নিয়ে সারা বিশ্বেই একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ভারত ৫ কোটি লোককে টিকা দিতে পেরেছে। কিন্তু তাদের যে জনসংখ্যা সেই তুলনায় তা অনেক কম।’

তবে তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের প্রথম থেকেই একক কোনো সোর্সের ওপর নির্ভর করা ঠিক হয়নি। উচিত ছিলো চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশেই টিকা উৎপাদন করা। যে সুযোগ চীনের সাথে ছিলো।

এ দিকে প্রতিদিনই বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১০২ জন মারা গেছেন।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা

সকল