২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কঠোর লকডাউনেও ফাঁকা নেই রাজপথ

কঠোর লকডাউনেও ফাঁকা নেই রাজপথ - ছবি - সংগৃহীত

কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর সড়কগুলোতে গণপরিবহন না থাকলেও ছিল ‘জরুরি’ প্রয়োজনের নামে বের হওয়া যানবাহন। তবে এই প্রয়োজন কতটা জরুরি ছিল তা তদন্ত করতে গিয়ে জরিমানার শিকার হতে হয়েছে অনেককেই। গতকাল যথেষ্ট পরিমাণ প্রাইভেট কার, বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের স্টাফ গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রচুর রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে মহানগরীতে। এ দিকে অন্য অফিস বন্ধ থাকলেও গতকাল থেকে ছিল গার্মেন্ট ও ব্যাংকের কিছু শাখা খোলার দিন। নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় জনবল আনানেয়ার ব্যাপারে বলা হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানেই সেই ব্যবস্থা ছিল না। যার কারণে গণপরিবহন সঙ্কটে পড়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গার্মেন্ট শ্রমিকরা। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা, ভ্যান ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে করে অফিসে পৌঁছাতে হয়েছে। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ট্রাফিক পুলিশের একটি সূত্র বলছে, নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। কী কারণে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন তা জানতে, বিনা কারনে বের হওয়ায় নিরুৎসাহিত করতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসায় র্যাব। এ সময় কী ধরনের জরুরি প্রয়োজন জানতে চাইলে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। র্যাব জানায়, জরুরি ওষুধ সরবরাহের গাড়িতে করে ওষুধ না নিয়ে বহন করা হচ্ছে গিফটের খেজুর। আবার অন্যজন জরুরি প্রয়োজনে বের হয়ে দোকানে ওড়না নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পকেটে থাকলেও মাস্ক পরছেন না। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু একটি গাড়ি দাঁড় করান। ভেতর থেকে বলা হয় জরুরি প্রয়োজনে তিনি বাসা থেকে বের হয়েছেন। কি ধরনের জরুরি প্রয়োজন জানতে চাইলে প্রথমে নানা ধরনের কথা বলতে থাকে। কিন্তু আদালতের জিজ্ঞাসার কাছে সত্য বলতে বাধ্য হন ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘নিউ মার্কেটের একটি দোকানে তার ওড়না সরবরাহের কথা রয়েছে। সময়মতো ওড়নাগুলো ডেলিভারি দিতে না পারলে ব্যবসা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই জরুরি প্রয়োজনেই তিনি বের হয়েছেন। আদালত তার জরুরি প্রয়োজনের কথা শুনে হতবাক হয়ে তাকে অর্থদণ্ড দিয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।

এরপর একটি জরুরি ওষুধবাহী গাড়ির গতিরোধ করা হয়। চালক জানান, এটা জরুরি ওষুধ সরবরাহের গাড়ি। র্যাব বলে, সেটা তো দেখতে পাচ্ছি লেখা রয়েছে; কিন্তু গাড়িতে কি আছে দেখতে চাই। এরপর গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দেখা যায় সেখানে কোনো ওষুধ নেই। রয়েছে চিকিৎসকদের জন্য গিফট হিসেবে পাঠানো খেজুর। এরপর ওই গাড়িকেও জরিমানা করা হয়। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু সাংবাদিকদের বলেন, অনেকেই প্রয়োজনীয় কারণ ছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছেন। তবে যারা অপ্রয়োজনে বের হচ্ছেন এবং সেটা ভ্রাম্যমাণ আদালতের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ জরিমানা করা হচ্ছে। এ ছাড়া জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।’

তবে আগের তুলনায় মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি। এ দিকে গতকাল সকাল থেকে কিছু অফিস খোলা থাকায় অফিসগামী মানুষ পড়েন চরম দুর্ভোগে। সহজলভ্য পরিবহন রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা পাওয়াটাই যেন সোনার হরিণ। এ সুযোগে রিকশাচালকরা ভাড়া নিচ্ছিলেন চার-পাঁচ গুণ বেশি। অনেকে আবার হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন অনেক পথ। জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা আরমান হোসেন কোনো যানবাহন না পেয়ে খিলগাঁও রেলগেট থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত হেঁটে যান। তিনি জনতা ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় কাজ করেন। আরমান বলেন, খিলগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে রিকশায় ভাড়া চায় ৮০ টাকা। অথচ ১৫ মিনিটের এই পথ অন্য সময় ৩০-৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসা যাওয়া করেছেন।

সব থেকে বেশি ঝামেলায় পড়তে হয়েছে উত্তরা, খিলক্ষেত, মিরপুর এলাকা থেকে মতিঝিলে যাওয়া যাত্রীদের। বাস না পেয়ে কিছু দূর রিকশায় আবার, সিএনজি অটোরিকশা করে গন্তব্যে গেছেন। আল আমিন নামে এক ব্যাংক কর্মচারী বলেন, যেখানে যেটা পেয়েছি, সেখানে সেটায় চড়ে সামনে এগিয়েছেন। এর মধ্যে হেঁটেও চলতে হয়েছে। তিনি বলেন, লকডাউনে সরকার ব্যাংক খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে। তবে সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ উদ্যোগে জনবল আনা-নেয়ার ব্যপারে বলা হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার আসা যাওয়ার ব্যবস্থা করলেও অন্যদের ব্যাপারে কোনো খোঁজও রাখেনি। যার কারণে নিজ উদ্যোগে চরম ভোগান্তি ও বাড়তি টাকা ব্যয় করে অফিসে পৌঁছাতে হয়েছে তাদের।

চট্টগ্রামে জীবিকার তাগিদে বেরিয়ে পড়েছেন বহু মানুষ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিনে পহেলা বৈশাখের ছুটি থাকায় রাস্তায় লোকজনের চলাচল তেমন চোখে না পড়লেও দ্বিতীয় দিনে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন অনেকেই। গণপরিবহন না থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশায় চেপে গন্তব্যে ছুটে চলছে মানুষজন। কেউ বা যাচ্ছেন পায়ে হেঁটে। এদের কেউ যাচ্ছেন কর্মস্থলে, আবার কেউ বেরিয়েছেন জীবিকার সন্ধানে। খুলেছে কিছু কিছু দোকান পাটও। গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে লকডাউনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তৎপরতা চোখে না পড়লেও নানা স্থানে লকডাউনের আওতামুক্ত থাকা অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরই পুলিশের হাতে হেনস্তা হতে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাজশাহীতে কঠোর লকডাউনেও বের হচ্ছেন মানুষ

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বুধবার থেকে রাজশাহীসহ সারা দেশে ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়েছে। এটি কার্যকরে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তবে কঠোর লকডাউনেও ঘরের বাইরে মানুষকে বের হতে দেখা গেছে। নগরীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, বিনোদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। তবে অধিকাংশ রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা রয়েছে। রাস্তায় দু’একটি রিকশা, মোটরসাইকেল এবং জরুরি সেবার গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। বন্ধ রয়েছে নগরীর সব মার্কেট। জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও একই চিত্র দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। নগরীর লক্ষ্মীপুরে রিকশাচালকদের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, রোগী নিয়ে এসেছিলাম লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত রামেক হাসপাতালে। কিন্তু ফেরার পথে ট্রাফিক পুলিশ রিকশার চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। তারা বলেন, আমরা গরির মানুষ রিকশা চালাতে না পারলে কী করে চলব। ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের খরচ জোগাবো কী করে। অফিস বন্ধ থাকলেও সরকারি চাকরিজীবীরা বেতন পাবেন। কিন্তু গরির অসহায় মানুষ বসে থাকলে কী করে সংসার চলবে।

কঠোর লকডাউনে খুলনা ফাঁকা
খুলনা ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও ফাঁকা ছিল খুলনা মহানগরী। বিধিনিষেধের আওতামুক্ত কিছু ওষুধ ও মুদিদোকান ছাড়া বন্ধ ছিল সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দূরপাল্লার যানবাহন।

এ দিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে রিকশা ও ইজিবাইকসহ কিছু ছোট যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। লকডাউন বাস্তবায়নে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নেয় পুলিশ সদস্যরা। শহরজুড়ে টহল ছিল ভ্রাম্যমাণ পুলিশের। বিধি ভেঙে রাস্তায় বেরোলেই জবাবদিহি করতে হচ্ছে প্রশাসনের কাছে। বন্ধ রয়েছে নগরীর প্রায় সব অফিস-আদালত। তবে চালু রয়েছে জরুরি সেবাকার্যক্রম। পায়ে হেঁটে অথবা নিজস্ব পরিবহনে চলাচল করছেন জরুরি সেবার কর্মীরা।


আরো সংবাদ



premium cement